নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বর্তমানে রাজশাহীর বাজারগুলোতে কেজিতে ১৫ টাকা কমেছে, সোনালী মুরগির কেজিতে কমেছে ৪০ টাকা। এছাড়া সব ধরনের মুরগির দাম নিন্মগামী। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি বাড়ার কারণে মুরগির দাম কমেছে। সেইসাথে দাম কমলেও বিক্রি কমে গেছে। অন্যদিকে খামারিরা বলছেন, খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে লাভ অনেকটাই কমে গেছে।

মুরগির দাম বাড়ার কারণে খামারিরা মাংস উৎপাদনের মুরগি ব্রয়লার ও সোনালীতে আবার ঝুঁকেছেন। খামারিদের আশা- সবকিছুর দাম বাড়তি থাকায় মুরগির উৎপাদন খরচ বাড়লেও বেশি দামেই বিক্রি হবে তাদের উৎপাদিত মুরগি। পুরাতন অন্তত ১০ শতাংশ খামার আবার চালু হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন।

খামারিরা বলছেন, বাজেট পরবর্তী সময়ে সরকারি সহযোগিতার দিকে বেশ আশাবাদী ছিলেন খাত সংশ্লিষ্ট সকলেই। তারা ভেবেছেন পোল্ট্রি ফিডের দাম হয়ত কমবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। উল্টো খাদ্যের দাম বাড়তি। বছরের শুরু থেকে চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাদ্যের দাম বেড়েছে ৫ দফা। বস্তায় বেড়েছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। দু-বছরের ব্যবধানে খাদ্যের দাম বেড়েছে অন্তত ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, অন্যান্য মুরগির দাম বাড়তি থাকায় মাংস উৎপাদনের দিকে যেমন, ব্রয়লার, সোনালি, কক এসব মুরগির বাচ্চা আবারো খামারে তুলতে শুরু করেছেন। করোনাকাল পরবর্তী সময় থেকে রাজশাহীর প্রায় ৭০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে ছিল।

আজ শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২) রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার খুচরা ও পাইকারী দোকান ঘুরে দেখা গেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতিকেজিতে ১৫ টাকা কমে গেছে। খামারি পর্যায়ে ১৩৫-১৩৭ টাকা দাম হলেও তা খুচরা বাজারে এসে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুরগি দোকানদার মিঠু হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, পোল্ট্রি মুরগি ১৬০ টাকা দরে বেচা হচ্ছে। কোথাও আবার ১৫৫ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লারের আমদানী আছে দামও আছে। সোনালি মুরগির দাম বাড়ছে কারণ বাজারে সোনালি মুরগি একটু কম। তারপরও সোনালী মুরগি শুধু নয়; সব মুরগির দাম কমেছে। ব্রয়লার আগের সপ্তাহে ১৭০ টাকা বিক্রি হয়েছে আজ ১৫৫ টাকা। সোনালি ৩৩০ টাকা কেজি বিক্রি করেছে সেটা আজ ২৯০ টাকা। কেজিতে নাই ৪০ টাকা।

আরেক মুরগি ব্যবসায়ী রাসেল হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মুরগির দাম কমেছে। তবে আর কমা সম্ভাবনা খুবই কম। আজ কক মুরগি বাজারে নাই, হাঁস ৩৩০ টাকা, রাজহাঁস ৪৫০ টাকা, দেশী মুরগি ৪২০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।
একই বাজারের ফাহিম ডিম ভান্ডারের মালিক মাসুদরানা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ডিমের দামে খামারিরা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন। খাবারের দাম বেশি থাকলে লাভ কিছুটা কম হয়। লাল ডিম পাইকারিতে হালি ৪৪ টাকা টাকা আর সাদা ডিম ৪২ টাকা দরে বিক্রি করছি।

রাজশাহীর পবা উপজেলার পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তা মুজিবুর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মূলত প্রান্তিক এক হাজার-দু-হাজার মুরগির খামারিরা ধ্বংশ হয়ে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে যেসব মুরগি ও ডিমের উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারে আসলে দাম কমার আশঙ্কা রয়েছে।

খাদ্যের দামে উৎপাদিত মুরগির ডিমের দাম তুলনামূলক ঠিক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা ডিম উৎপাদন করতে লাগে সাড়ে ৯ টাকা। আর বাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা। ৫০ পয়সা লাভ দিয়ে কোন কিছু করা সম্ভব কি? প্রশ্ন রাখেন তিনি। ৪-৫ দফায় পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়ে এখন আকাশচুম্বী। ১৮’শ টাকার খাদ্যের বস্তা এখন ২৮’শ টাকা। সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই।

জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীতে করোনায় ৭০ ভাগ খামার বন্ধ। বর্তমানে ১০ শতাংশের মতো ব্রয়লার খামার চালু হয়েছে। এক মাসের মধ্যে যেহেতু মুরগি হয়ে যায় সেজন্য এটা চালু হলো। মাঝখানে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলো, কারণ ভুট্টা, সয়াবিন মিল, প্রোটিনের দাম বেড়েছে। রেডি মুরগির দাম কমায় খামারিরা আরো বিপাকে পড়েছে। এখন সবধরনের খামারিরা লাভ করতে পারছেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ