সজিব ইসলাম, চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি: দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পদ্মার শাখা নদী বড়াল। চারঘাট স্লুইস গেট সংলগ্ন এলাকায় বড়াল নদী দখল করে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করছে খোদ পৌর কর্তৃপক্ষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এর অনুমতি ছাড়াই এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাউবোর। তবে এ ব্যপারে নিশ্চুপ প্রশাসন।

অভিযোগ রয়েছে, চারঘাট বাজারে নির্মাণাধীন কিচেন মার্কেটের পাশে বড়াল নদী ভরাট করে টয়লেট নির্মাণ শুরু হয়েছে। প্রকাশ্যে রাত দিন সমানতালে চলছে বড়াল দখলের উৎসব। নদী ভরাট করে এভাবেই নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে চারঘাট পৌর কর্তৃপক্ষ।

গত রবিবার (২৪ মার্চ ২০২১) বড়াল রক্ষা আন্দোলন চারঘাট এর পক্ষে উক্ত কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম (বাদশা) চারঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নিকট বড়াল নদী দখল মুক্ত করার জন্য আবেদন করেছেন।

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সারা দেশের নদীর মুক্ত প্রবাহ ঠিক রাখতে নানা কর্মসূচি পালন করছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু থেমে নেই পরিবেশের স্বাভাবিক রূপ ধ্বংসকারী এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ ও প্রতিষ্ঠান। অবৈধ দখলদারদের কারণে বড়াল নদী পানিশূন্য ও অস্তিত্ব সংকটে পড়ে গেলেও দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে নদী ও এর আশপাশের জীববৈচিত্র্য।

সরেজমিনে দেখা যায, চারঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন সমিতির পেছনে বড়াল নদী ভরাট করে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা ব্যায়ে আরসিসি পিলারের ওপর পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। নদী উত্তর পাশে দখল করে নির্মান করা হয়েছে প্রশস্ত রাস্তা। একের পর এক নদী দখল করেই এসব নির্মাণ কাজ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে চারঘাট পৌর কর্তৃপক্ষ এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় সচেতন মহলের।

বাঁধ আর স্লুইসগেটের কারণে এমনিতেই হুমকির মুখে এখানকার জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। তার ওপর নতুন করে এই দখল উৎসব নদীকে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলারই একটি অংশ মনে করছেন সাধারণ মানুষ। নদী মুক্ত করার সরকারি ঘোষণার সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।

চারঘাট রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি ও বড়াল রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সদস্য মুহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, নদীর দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। খেয়াল-খুশি মতো দখল করছে দখলকারীরা। আমরা চেষ্টা করছি বড়ালকে অবমুক্ত করার। দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

চারঘাট উপজেলা বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ বড়াল নদীকে গিলে খাচ্ছে। প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নদী দখল করে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করছে। নদী দখলকারীদের কাছে আমরা অসহায়।

তিনি আরও বলেন, বড়াল অবমুক্তের কাজ করতে গেলে আমাদের পদে পদে বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। নদী দখলকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হুমকি ধামকি দিয়ে নানা ভাবে হয়রানি করছে। যার কারণে নদী মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। বড়ালকে অবমুক্ত করা না গেলে চারঘাটের মানুষ সবদিক থেকেই হুমকির মুখে পড়বে।

পাউবোর কাছে থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে চারঘাট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, অনুমতি নেওয়া হয়নি। অনুমতি ছাড়াই জনস্বার্থে এসকল স্থাপনা নির্মান করা হচ্ছে। এজন্য সবাইকে একটু ছাড় দিয়ে কাজগুলো ঠিকমত শেষ করতে হবে।

জানতে চাইলে পাউবোর নাটোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, ‘চারঘাট পর্যন্ত বড়াল নদীর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে নাটোর পাউবো। পাউবোর কাছ থেকে ওই জমির কোনো বন্দোবস্ত নেয়া হয়নি। তাছাড়া নদী দখল করে ভবন নির্মাণের জন্য পাউবোর অনুমতি নেই। বরং দখলমুক্ত করার নির্দেশনা রয়েছে। যদি এটা কেউ করে থাকে, তবে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ