রাজশাহীর সপুরা এগ্রো, ছবি:এগ্রিকেয়ার২৪

মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাজশাহী নগরীর ছোট বনগ্রাম এলাকার সপুরা এগ্রো। কোরবানিতে ছোট বড় মিলিয়ে এই খামারে ছিল ১১০টি গরু। বিক্রি হয়েছে ১০৮ টি। বাঁকি দুটো গরু রেখে দিয়েছেন আরো বড় করার জন্য। বিশাল এ খামারে ১০ শতাংশ গরু ১০ থেকে ১৫ মণের হয়। এছাড়া সবগুলো মাঝারি আকারের গরু পালন করা হয়। অবশ্য তাঁর কারণ তো আছেই!

কথা হয় সপুরা এগ্রোর মালিক মো: সুমনের সাথে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “আমার খামারের সব গরু বিক্রি হয়েছে ভালো দামে। এবার মাঝারি গরুর চাহিদা ছিল বেশ। প্রতিবছরই বড় গরুর চাইতে ছোট গরুর চাহিদা থাকে। ১১০টি গরুর মধ্যে দুটো গরু রেখেছি আরো বড় করার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ আমি খুশি।”

মাঝারি দেশাল জাতের গরু পালনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাজারে গরুর সাইজ এবং গঠন দেখে দাম পাওয়া যায়। ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে যদি ক্রেতার চোখ আকৃষ্ট হয় তাহলে দামে ৫ হাজার বেশি হবে। শাহীওয়াল জাতের গরু দেখতে সুন্দর। দেশি গরুর ওজন বা শাহীওয়ালের ওজন সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ মণ হলেই ভালো দাম পাওয়া যাবে। ৭০ হাজার দিয়ে কিনলে ঈদে দাম দাঁড়াবে ১ লাখ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবেই যেদিকে বেশি লাভ সেদিকে খামারিরা ঝুঁকবে।”

পড়তে পারেন: গরুর নতুন খামারের জন্য বকনা ও গাভীর প্রাপ্তিস্থান-মূল্য

সপ্তাহখানেক আগে শেষ হলো পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির ঈদ। এবার রাজশাহীতে বেশি দামে গরু বিক্রি করতে পেরে খুশি খামারিরা। গত তিন বছরের তুলনায় এবার লাভ ভালো হয়েছে। ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি ছিলো। তাই আগামীতে মাঝারি গরু পালনের প্রত্যাশা করছেন খামারিরা। খোঁজ নিয়ে খামারিদের সাথে কথা বলে তাই জানা গেছে।

রাজশাহী সদর, বাগমারা, তানোর, চারঘাট, পবা উপজেলার বেশ কিছু খামারির সঙ্গে কথা হলে জানা গেছে, কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম ভালো ছিলো। তাই বেশিরভাগ বিক্রেতায় কম বেশি লাভ করেছেন।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি। এরমধ্যে ২০ হাজার ২৫২টি বলদ গরু। এছাড়া ১৬ হাজার ৬৭৩ মহিষ, ষাঁড় গরু ১৬ লক্ষ ৪ হাজার ৬১৯, ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ছাগল এবং ২২ লাখ ৬ ভেড়া ৫৪৯। এসব পশুর ২০ শতাংশ অনলাইনে আর বাঁকি ৮০ শতাংশ গরু প্রচলিত হাটে বিক্রি হবে জানিয়েছিল সরকারি এ দপ্তর।

পড়তে পারেন: গরুর মাংসের দাম কমানো সম্ভব, যা করতে হবে

তবে, বেশিরভাগ গরু বিক্রি হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর। কথা হয় দপ্তরের উপপরিচালক মো: নজরুল ইসলামের সাথে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, কোরবানিতে অবিক্রিত পশুর সংখ্যা সেভাবে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। কারণ মাঝারি মানের গরু প্রায় সবগুলোই বিক্রি হয়েছে। হয়ত কিছু গরু থাকতে পারে তবে তা অনেক কম। মাঝারি গরুর চাহিদা ছিল বেশ আর দামও পেয়েছে খামারিরা। এবার যারা নতুন খামারে গরু তুলছেন তারাও মাঝারি গরুর টার্গেট করছেন।

সপুরা এগ্রোর সুমন বলেন, আগামী বছরের জন্য ২০টি গরু ইতোমধ্যে কেনা শেষ। এরমধ্যে ২৬০ কেজি থেকে ৩০০ কেজির গরু রয়েছে। আর ৪টি বড় গরু রয়েছে। বড় চারটির ওজন ৫০০ কেজির বেশি। মাঝারি গরুর দাম ভালো পাওয়া যাবে।

কথা হয় সওদাগর এগ্রোর মালিক আরাফাত রুবেলের সাথে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মাঝারি গরুতে লাভ বেশি হয়। চাহিদা থাকার কারণে বিক্রিতে সমস্যা হয় না। খাবার কম লাগে। তবে, পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে খামারিদের লাভের ভাগ কমে গেছে।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন জানান, এবার রাজশাহী জেলায় ১০ হাজার ৭৩৪টি পশু উদ্বৃত্ত ছিল। জেলায় চাহিদা ছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি। এরমধ্যে ৭৩ হাজার ৮৬৩টি ষাঁড় ও ২৪ হাজার ৪৬টি গাভী। অন্যান্য ছাগল ভেড়া ও বলদ। পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থেকেছে।

অবিক্রিত পশুর সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার ৩ লাখ ২৪ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। বলদ ও ষাঁড় গরু ৭২ হাজার এবং ২ লাখ ৫২ হাজার ছাগল কোরবানি করা হয়েছে। আগামীতে জেলায় গরু মোটাতাজাকরণ ও ছাগল পালন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ