আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভারতে পেঁয়াজ চাষিরা ভালো নেই। পেঁয়াজের বাজারে বড় ধরণের দরপতনে তারা হতাশায় দিন পার করছেন।

গত সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) মহারাষ্ট্রের পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ১ রুপিতে নেমে আসে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিম্ন চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে পণ্যটির বাজারে এই অবস্থা দেখা দিয়েছে।

এর ফলে দেশটির পেঁয়াজ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তবে প্রাদেশিক সরকার ১৫০ কোটি রুপি সহায়তার ঘোষণা দিলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলছেন তারা। খবর টিএনএন।

এর আগে গত মাসে নাসিকের আরেক কৃষক প্রতিবাদস্বরূপ ৭৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে প্রাপ্ত ১ হাজার ৬৪ রুপি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পাঠিয়ে দেন। তিনি জানান, নিম্নমূল্যের কারণে কৃষকরা যে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন তা কমাতে সরকার যেন ব্যবস্থা নেয়, সে উদ্দেশ্যে তিনি এ অর্থ পাঠিয়েছেন। তবে পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর তার কাছে ওই অর্থ ফেরত পাঠায়।

পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে থাকা ভারতে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশে। দেশটিতে সাধারণত বছরে দুবার পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ সংগ্রহ করা হয় মার্চ ও এপ্রিলে, যা ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হয়।

এরপর খরিপ মৌসুমের পেঁয়াজ বাজার দখল করে নেয়। তবে চলতি বছর ভালো দামের আশায় ভারতের কৃষকরা বেশি সময় ধরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। ফলে এখনো এ পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে বাজারে খরিপ মৌসুমের পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। এতে সরবরাহ বেড়ে পেঁয়াজের বড় ধরনের দরপতন দেখা দিয়েছে।

মহারাষ্ট্রের নাসিকের লাসালগাঁওয়ে এগ্রিকালচার প্রডিউস মার্কেট কমিটির বাজারকে ভারতের বৃহত্তম পাইকারি বাজার ধরা হয়। গত সোমবার এ বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১ রুপিতে নেমে আসে। গত কয়েক মাসে এ বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রায় ৯১ শতাংশ কমেছে।

বাজার ধসের কারণে ভারতীয় কৃষকরা পরিবহন খরচও তুলে আনতে পারছেন না। এদিকে তাপমাত্রা কমতে থাকায় গুদামে মজুদ পেঁয়াজে অঙ্কুর দেখা দিতে শুরু করেছে। এতে গুদামে মজুদ পেঁয়াজ নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। তারা জানান, এখনো প্রায় দুই লাখ কুইন্টালের বেশি পেঁয়াজ গুদামে মজুদ আছে।

গত বুধবার নাসিক জেলার মারুতি গুন্ড নামে এক কৃষককে স্থানীয় পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের জন্য ১৯১ রুপি দাম দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। এতে হতাশ হয়ে তিনি পেঁয়াজ বাজার থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। পরে তিনি ৩০ কুইন্টাল পেঁয়াজ জমিতে ফেলে দিয়ে তার ওপর ট্রাক্টর চালিয়ে দেন।

তার কাছে এখনো ২০ কুইন্টাল পেঁয়াজ রয়েছে। এসব পেঁয়াজও একইভাবে জমিতে মিশিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, আমি অন্তত ভালো সার পাব। এ কারণে আমাকে পরবর্তী মৌসুমে সারের জন্য অর্থ ব্যয় করতে হবে না।

এর আগে গত মাসে নাসিকের আরেক কৃষক প্রতিবাদস্বরূপ ৭৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে প্রাপ্ত ১ হাজার ৬৪ রুপি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পাঠিয়ে দেন। তিনি জানান, নিম্নমূল্যের কারণে কৃষকরা যে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন তা কমাতে সরকার যেন ব্যবস্থা নেয়, সে উদ্দেশ্যে তিনি এ অর্থ পাঠিয়েছেন। তবে পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর তার কাছে ওই অর্থ ফেরত পাঠায়।

পেঁয়াজচাষীদের দুর্ভোগ কমাতে মহারাষ্ট্র সরকার ১৫০ কোটি রুপি সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। এ সহায়তার আওতায় প্রতি কৃষককে এক কুইন্টাল পেঁয়াজের বিপরীতে ২০০ রুপি সহায়তা দেয়া হবে। তবে এ সহায়তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন কৃষকরা।

গত বছরের জুলাইয়েও ভারতে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১ রুপিতে নেমে এসেছিল। এছাড়া ২০১৬ সালে পেঁয়াজের দাম নেমে এসেছিল মাত্র ৫ পয়সায়। সূত্র: বণিক বার্তা।