ডিমের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভারত থেকে ৫১ কোটি ডিম আমদানি করতে চান আমদানিকারকেরা। ইতিমধ্যে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত আত্মঘাতির সামিল হবে।

ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সেটা আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত হবে বলে মত দিয়েছেন দেশের ডিম উৎপাদনের সাথে জড়িতরা। এদিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের অনেকেই বলছেন ডিমের উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে দেশে প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি পিস ডিম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৯-১২ শতাংশ কর্পোরেট পোল্ট্রি ফার্ম এবং বাকি ডিম উৎপাদিত হয় গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক খামারিদের মাধ্যমে। অন্যদিকে দেশের ডিমের দাম বাড়তির অজুহাত ও সরবরাহ ঘাটতির ধোঁয়া তুলে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ৫১ কোটি ডিম আমদানির পাঁয়তারা করছে একটি ব্যবসায়ী চক্র।

তবে ডিমের আমদানি নিয়ে চলতি বছরের আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে কথা বলেছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এক সংবাদ সম্মেলনের ডিম আমদানির প্রসঙ্গ তুলে এনেছিলেন। এসময় তিনি বিষয়টাকে আলোচনা সাপেক্ষ ব্যাপার বলে উল্লেখ করেছিলেন। এরপর ডিমের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দু-তিন মাসের মধ্যে কমে যাবে। তবে খামারিদের কথা বিবেচনায় রেখে ডিম আমদানি করা উচিত হবে না।

সম্প্রতি দ্যা ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সংবাদ মাধ্যম প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করেছে, বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ভারত থেকে ৫১০ মিলিয়ন পিস ডিম আমদানির জন্য সরকারের অনুমোদন চেয়েছে। যদিও দেশীয় উৎপাদন দেশের বার্ষিক চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট হবে।

এদিকে বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ (বি.পি.কে.আর.জে.পি) এবং পোল্ট্রি প্রফেশনাস’স বাংলাদেশ (পিপিবি), পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশসহ পোল্ট্রি খামারিরা আমদানি প্রস্তাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। খামারিা বলছেন, সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দিলে এর বৃদ্ধি খারাপভাবে প্রভাবিত হবে। প্রান্তিক খামারিরা ধ্বংস হয়ে যাবে। সেইসাথে ডিম সরবরাহ ঘাটতি মেটাতে দীর্ঘমেয়াদি নীতি গ্রহণেরও পরামর্শ দেন তারা।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

মাছ মাংস ডিমের উৎপাদন রপ্তানির পর্যায়ে পৌঁছেছে

ডিমের দামে হতাশ খামারিরা, উঠছেনা উৎপাদন খরচ

মাছ, মাংস, দুধ, ডিম উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে

কারা ডিম আমদানি করতে চায়: ঢাকা ভিত্তিক কিছু ট্রেডিং হাউস -পপুলার ট্রেড সিন্ডিকেট, রিপ এন্টারপ্রাইজ, আহমেদ বিজনেস অ্যান্ড কমার্স, টাইগার ট্রেডিং, সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ এবং সেভ অ্যান্ড সেফটি ইন্টারন্যাশনাল – সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে (এমওসি) বিদ্যমান আমদানির অধীনে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে।

নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তারা বলেন, কোম্পানিগুলো বলছে যে তারা ডিম আমদানি করতে চায় তার বর্তমান সরবরাহ ঘাটতি মেটাতে এবং স্থানীয় বাজারে এর বর্ধিত দাম স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে। দেশের বাজারে ডিমের বাজার বেড়ে যাওয়ার কারণে ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখতে ডিম আমদানি আবশ্যক।

এমওসি ইতিমধ্যেই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রকের কাছে ব্যবসায়ীদের চিঠি পাঠিয়েছে, এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছে। তবে, তথ্য বলছে কিছু সরকারি উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ডিম আমদানির অনুমতি দিতে চান। কিছু স্থানীয় পোল্ট্রি সেক্টরকে রক্ষা করার জন্য আমদানির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। যারা ডিম আমদানির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তারা মূলত সেক্টরকে রক্ষা করতে চান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, এটি অনুমোদিত হলে দেশীয় পোল্ট্রি খাত মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এছাড়া সরকারের উচিত অবিলম্বে কিছু বড় ডিম উৎপাদনকারীর ডিমের দাম নির্ধারণ বন্ধ করা। বড় উৎপাদকদের ডিমের দামের কারসাজির কারণে বেশ কয়েকটি পোল্ট্রি ফার্ম, বিশেষ করে ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ফিডের অতিরিক্ত দামের কারণে স্থানীয় বাজারে ডিম বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে- সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফিড কোম্পানির চার্জ।

তিনি জানান, স্থানীয় পোল্ট্রি সেক্টরের জন্য ফিড আমদানির জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, কারণ এর খরচের প্রায় ৮০ শতাংশ ফিড সংগ্রহের জন্য ব্যয় করা হয়। ক্ষুদ্র চাষিরা তাদের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ডিম বিক্রি করছেন। বর্তমানে প্রতিটি ডিম উৎপাদনে তাদের প্রয়োজন প্রায় ১০.৫০ টাকা।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

কাউকে পাশে পাচ্ছে না খামরিরা, জেনে নিন ডিমের দামে কারসাজি!

সরকারিভাবে ডিম-মুরগির দাম নির্ধারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

ডিম-মুরগির দাম শীঘ্রই বাড়ার সম্ভাবনা

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে খামারের ডিমের (বাদামী) দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৬০-১৮০ টাকায় পৌঁছে যায়। বর্তমানে ডিমের দাম আবার তলানীতে চলে এসেছে। এখন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা ডজন ডিম খুচরা বাজারে ক্রেতারা কিনতে পারছেন। ভারত থেকে ৫১ কোটি ডিম আমদানি করতে চান আমদানিকারকেরা এ পরিস্থিতি তৈরি হলে দেশের ডিমের খামারিরা অনেক বড় ধরণের বিপদে পরবেন।

কথা হয় পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা এনামুলের সাথে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৭০ শতাংশ পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা চাই পোল্ট্রি খাত টিকে থাকুক। কিন্তু পোল্ট্রি খাতের সিন্ডিকেট অনেক গভীরে। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন কারসাজির কারনে ডিম মুরগির দাম উঠনামা হচ্ছে। এর ফলে প্রান্তিক খামারিরা দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে।

অপরদিকে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের উৎপাদিত বাচ্চা, খাদ্যের ডিম-মাংস উৎপাদন করছে। কিছুদিন পর দেখা যাবে কর্পোরেটরা এই খাত নিয়ন্ত্রণ করছে আর খামারিরা পথে বসছে। ডিম মুরগির দাম বেধে দেওয়া প্রয়োজন বলেই মনে হচ্ছে।

ডিম আমদানির বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ডিম আমদানির মতো এমন কান্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে না। কারণ, ডিম আমদানির কারণে দেশের খামারিরা খামার বন্ধ করে দিবে। ফলে কর্পোরেটদের হাতে সব চলে যাবে। পোল্ট্রি খাত এমনিতেই ধ্বংশের মুখে রয়েছে এবার তার ষোলকলা পূর্ণ হবে।