নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীতে লোকসানে লোকসানে নানান সংকটে ২০ হাজার পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ডিম মুরগিতে বর্তমানে ক্রমাগত চলছে লোকসান। ডিমের প্রতি পিসে ২ টাকা গচ্চা দিচ্ছেন খামারিরা। এ পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে ডিম-মুরগির দাম নির্ধারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে রাজশাহী পোল্ট্রিফার্মার ঐক্য পরিষদ।

আজ শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী পোল্ট্রিফার্মার ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটি আহ্বায়ক হাসিবুল আলম লিখিত বক্তব্যে পোল্ট্রি খাতের নানান সমস্যা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশের রাজশাহী অঞ্চলে বিভিন্নভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে অনেক খামারী। লোকসানের বোঝা টানতে না পেরে ইতোমধ্যেই রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ অঞ্চলে চলতি বছরে বন্ধ হয়েছে প্রায় অর্ধেক পোল্ট্রি খামার।

পড়তে পারেন: ডিমের হালি ৪, ব্রয়লার মুরগির কেজিতে বাড়লো ২০ টাকা

একজন খামারীর জমির খাজনা, ১ দিন বয়সের বাচ্চার মূল্য, খাদ্য, মেডিসিন খরচ, কর্মচারীর বেতন ও বিভিন্ন রোগবালাইয়ে মুরগির মৃতের হার বিবেচনাপূর্বক বর্তমানে সাদা ডিম উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৯ টাকা ৫০ পয়সা এবং লাল ডিমের ক্ষেত্রে খরচ পড়ছে ১০ টাকা। একজন খামারী বর্তমানে কর্তৃক সাদা ডিমের মূল্য পাচ্ছেন ৭ টাকা ৬০ পয়সা এবং লাল ডিমে পাচ্ছেন ৮ টাকা। এতে করে একজন খামারীকে প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে সাদা ডিম ১ টাকা ৯০ পয়সা এবং লাল ডিমে ২ টাকা।

সুতরাং ৫ হাজার ডিম উৎপাদনকারী একজন খামারীকে প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। প্রতিমাসে এই লোকসানের পরিমান দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজার দর ও খাদ্য খরচসহ অন্যান্য খরচাদির হিসেব করে প্রতি কেজি সোনালীর উৎপাদন খরচ পড়ছে ২২০ থেকে ২০০ টাকা, হাইব্রিড সোনালীর ২০০ থেকে ২১০ টাকা এবং ব্রয়লারের ক্ষেত্রে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। অধিকাংশ সময় খামারীরা তাদের কাঙ্খিত মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

বর্তমানে দফায় দফায় মেডিসিনসহ প্রয়োজনীয় সকল পন্য সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে মাংসজাত মুরগী ডিম উৎপাদন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পোল্ট্রি খাবারা ও মেডিসিন এর মূল্যবৃদ্ধি হলেও ২০০৯ সাল থেকে অদ্যবধি ডিমের দাম বাড়েনি। ২০০৮ সালে ৫০ কেজি ফিডের দাম ছিলো ১৩শত থেকে ১৪ শ টাকা।

পড়তে পারেন: ডিমের দাম নিয়ে কারসাজি, শীঘ্রই ব্যবস্থা

বর্তমানে সেই ফিডের দাম ৩০০০ টাকা। একই সাথে মেডিসিন, ভ্যাকসিন, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতনসহ প্রয়াজনীয় সকল সামগ্রীর খরচ দ্বিগুন হয়েছে। একই কারণে, মাংসজাত মুরগী যেমন, সোনালী, হাইব্রিড সোনালী ও ব্রয়লার উৎপাদনের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি বিরাজমান। অথচ দেশে পোল্ট্রি সেক্টরের উন্ন সরকারী সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থাকলেও মূলত এই গুলোর কার্যকর কোন ভূমিকা নেই এতে করে কোনভাবেই ভোগান্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না খামারীরা।

খাদ্য ও মেডিসিন ছাড়াও সরকারী নিয়ন্ত্রন না থাকায় প্রতিদিন অস্বাভাবিক হারে উঠা-নামা করছে ১ দিন বয়সি বাচ্চার দাম। একদিন বয়সী বাচ্চার দাম কখনো ১৫ টাকা, কোন কারণ ছাড়াই রাতের ব্যবধানে সেই বাচ্চা কখনো ৩০ টাকা, কখনো বা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট নরগুলো নজর নেই বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারী প্রতিষ্ঠনগুলোর দিকে। এতে করে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে খামারীরা।

আহ্বায়ক হাসিবুল আলম বলেন, আমরা আপনারা নিজ নিজ পর্যায়ে আমরা সকলেই ভোক্তা। দেশে কোনপ্রকার দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি আমাদের কাম্য নয়। আমরা খামারীরা কোন অবস্থাতেই অধিক লোভ্যাংশ প্রত্যাশা করছি না। আমরা হায় সঠিক ভাবে ডিম ও মুরগীর উদপাদন খরচ নির্ধারণ করে খামারী পর্যায়ে প্রতিটি ডিমে খামারীকে ৬০ থেকে ৮০ পয়সা এবং প্রতিকেজি মুরগীতে ২০ থেকে ২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হোক। খামারীরা এতেই সভোষ্ট

এবার আপনারাই বিবেচনা করুন লোকসানের এই বোঝা নিয়ে একজন খামারীর নিঃস্ব হতে কত দিন সময় আপনাদের মাধ্যমে এই প্রশ্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

সংগঠনটি দাবি করেন, সরকারী ভাবে সঠিক উৎপাদন খরচ নির্ধারনের মাধ্যমে ডিম ও মাংসজাত মুরগীর মূল্য নির্ধারিত করতে হবে। সরকারীভাবে স্বল্প মূল্য খামারীদের প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন, মেডিসিন ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হবে। পোল্ট্রিখামারগুলোতে স্থাপিত বৈদ্যুতিক মিটারগুলোকে কৃষিভিত্তিক মিটারে রুপান্তর করতে হবে। সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে ও সহজ পদ্ধতিতে জামানত বিহীন ঋণপ্রদান করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ খামারীদের পুনর্বাসনে সরকারী প্রণোদনা প্রদান করতে হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ