শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ই শাওয়াল ১৪৪৫

ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ, খুশি চাষিরা

প্রচ্ছদ, বিভাগ: প্রচ্ছদ, ফসল, প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২১, মঙ্গলবার  

ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: তরমুজের ভালো দামে খুশি চাষিরা। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার তরমুজ চাষিরা প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি করছেন ১০০ টাকায়।

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় মোট ৩৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ও বিনয়কাঠি এবং গাবখান ধানসিঁড়ি ব্লকে তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া, চরকয়া ও পৌরসভা ব্লকে তরমুজ বেশি উৎপাদন হয়েছে। রাজাপুর উপজেলার সাংগর, শুক্তাগড়, কেওতা, মঠবাড়ি, পালট ব্লকে এবং কাঁঠালিয়া উপজেলার জাংগালিয়া ব্লকে তরমুজের চাষ বেশি হয়েছে।

উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের চরকয়া গ্রামের কৃষক মো. আব্দুস সালাম মল্লিক (৫২)। তিনি সহ আরো চারজন মিলে ৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন তরমুজ। ৪ বিঘা জমিতে তরমুজের ফলন হয়েছে বেশ। নিয়মিত সার-কীটনাশক প্রয়োগ ও আগাছা পরিষ্কার করার পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে হয়েছে বাম্পার ফলন।

আরেক চাষি মো. সোহাগ খলিফা বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এলাকায় তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। আমরা মোটামুটি ভালো দাম পাচ্ছি। একেকটি তরমুজ ১০০ টাকায় বিক্রি করছি। একেক গর্তে দুটি করে গাছ। দুই গাছে তিনটি বা চাররটি করে তরমুজ ধরেছে। এরকম চার হাজার গর্ত আছে এই ক্ষেতে।

তরমুজ ক্রেতা হাবিবা বেগম বলেন, এলাকার ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনতে পারছি; এটা আমাদের সৌভাগ্য। তাজা ও ফরমালিনমুক্ত তরমুজ কিনতে পেরে আমরা খুশি। দামও কম।

নলছিটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান মিলি বলেন, উপজেলায় ৯ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এবার বৃষ্টি কম, তাই একটু কম হয়েছে। এছাড়া বাম্পার ফলন হতো। আমরা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. ফজলুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এখানে ভালো তরমুজ চাষ হয়। বন্যার পানিতে চাষিদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। গত বছর ৯ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এ বছর ৩৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ বেড়েছে। এবার কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে হেক্টর প্রতি ৩৫-৪০ মেট্রিক টন ফলন হবে আশা করা যায়। আগামী বছর ৭০ হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছি।

করোনায় চাকরি হারিয়ে অভাব জয়ের পথ দেখাল মাসরুম!

মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সাইদুর রাহমান (৪৫) চাকরি করতেন রাজধানীর এক বেসরকারি হাসপাতালে। করোনার প্রথম ঢেউ টিকতে পারলেও দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগেই চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন। কীভাবে সংসার চলবে, এ চিন্তা করতে করতে হঠাৎ মাথায় আসে মাশরুম চাষের কথা। শেষপর্যন্ত অভাব জয়ের পথ দেখাল মাসরুম!

সাইদুরের দ্বাদশ শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে সাজিদ হোসেন আরাফাত। ইউটিউবে মাসরুম চাষের ভিডিও দেখে বাবাকে জানান ইচ্ছার কথা। স্বল্প পুঁজিতে দ্বিগুণ লাভের মাসরুম চাষে নেই তেমন পরিশ্রম। নিয়ম করে দু-বেলা পানি ছিঁটিয়ে যার যত্ন করতে হয়। এতেই হাজার হাজার টাকা লাভ করা যায়। বিষয়টি বুঝাতে সক্ষম হয় আরাফাত।

এদিকে মাসরুম চাষের ওপরে আরাফাত অনলাইনে একটি কোর্স সম্পন্ন করেন। কুরিয়ারের মাধ্যমে রাজধানীর মোহাম্মদপুর আঁটিবাজার থেকে আনেন মাসরুম বীজ প্যাকেট বা স্পন প্যাকেট। ৮ কেজি স্পন বাসায় পৌঁছাতে খরচ হয় ১ হাজার টাকা। ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ করে তৈরি হয় ৫৮টি ছত্রাকের প্যাকেট বা সিলিন্ডার। যা থেকে উৎপন্ন হয় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার মাসরুম!

গত ১০ এপ্রিল ২০২১ নওগাঁর মান্দা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ১১ নম্বর কালিকাপুর ইউনিয়নের চকরামাকান্ত দহপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ১২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রস্থের দ্বিতল ঘরে মাসরুমের পরিচর্যা করছেন সাইদুর রহমান। ঘরের ছাঁদের সাথে সিঁড়ি পদ্ধতিতে আটকানো লাইনলের দড়ি। তাতে এক-একটি ছত্রাকের প্যাকেট সাজানো।

প্যাকেটের মাশরুম বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানালেন, তিনি ওয়েস্টার জাতের মাশরুম চাষ করেন। মাশরুমের পাশাপাশি এ বছর মুরগি পালন শুরু করেছেন। এখন তাঁর জীবন জীবিকার উৎস মাশরুম চাষ, মুরগি পালন ও ছোট একটি মুদিখানা দোকান। করোনায় চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ায় খুব দুশ্চিন্তা ছিল। ছেলের কথায় সাঁয় দিয়ে শুরু করেন মাসরুম চাষ। ছেলে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মাশরুম চাষের ওপর অনলাইনে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ নেওয়ায় বেগ পেতে হয়নি। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ঢাকা থেকে বীজ এনে ওয়েস্টার জাতের মাশরুমের চাষ শুরু করছেন।

সাইদুর রহমান আরও জানান, বর্তমানে তাঁর ঘরে ৫৮টি মাশরুম বীজ প্যাকেট বা স্পন প্যাকেট রয়েছে। আশেপাশের লোকজন এসে মাশরুম কিনে নিয়ে যান। যখন বেশি উৎপাদন হয় তখন মাঝে মাঝে বাজারেও বিক্রির জন্য নিয়ে যান। এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৭ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করেছেন। অথচ দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। একেকটি স্পন প্যাকেট তৈরি করতে তাঁর ৩০ টাকা খরচ হয়। আর এমন স্পন প্যাকেট বিক্রি হয় সাড়ে ৪০০ টাকায়। প্রতি কেজি মাশরুম বিক্রি করেন ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়।

কথা হয় সাইদুরের ছেলে আরাফাতের সঙ্গে। আরাফাত জানান, মাশরুম চাষের জন্য দেড় বা দুই ইঞ্চি শুকনো খড় সেদ্ধ করতে হয়। এরপর সেদ্ধ খড় শুকাতে হয় হালকাভাবে। যাতে চাপ দিলে পানি না ঝরে। নানা উপাদান দিয়ে সেসব খড় প্লাস্টিকের পলিথিনে বা প্লাস্টিকের স্পন প্যাকেটে রেখে তাতে মাশরুমের বীজ দিতে হবে। ওয়েস্টার জাতের মাশরুম ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় চাষ শুরু করতে হবে। দিনে ৮-১০ বার স্পনগুলোতে পানি দিতে হয়। একমাসের মাথায় পলিথিনের গায়ে সুক্ষ ছিদ্র দিয়ে বের হবে মাসরুমের ছাতা। সেখান থেকে কেটে বিক্রির উপযোগী মাসরুম আলাদা করতে হয়। সাইদুর নিজেই এখন বাড়িতে উৎপাদিত মাশরুম খাচ্ছেন। পাশাপাশি বাইরেও বিক্রি করছেন।

মাসরুম চাষের ভবিষৎ পরিকল্পনার জানতে চাইলে এই মাসরুম চাষি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এলাকায় মাসরুম তেমন পরিচিত নয়। মাইকিং করে, লিফলেট লাগিয়ে প্রচারণা চালিয়েছি। অনেক ডায়াবেটিস রোগী, আবার কিছু সাধারণ মানুষ চাহিদা দেখিয়েছে। বড় পরিসরে করব বলে চিন্তা করেছি। প্রথমবার ভালো বীজ পাইনি তারপরও ভালো লাভ হয়েছে। উৎপাদন করা খুব সহজ হলেও বিক্রি করতে অনেকটাই ঝামেলা। এলাকার মোড়ে অনেককে নিজ হাতে চপ বানিয়ে খাইয়েছি। তারা ভালো বললেও পরে আগ্রহ করে কেনে না। যদি বিক্রির নিশ্চয়তা থাকত তাহলে কাজটি আরোও সহজ হতো।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার সালমা শারমিন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মাসরুম চাষি সাইদুরের মাসরুম প্রজেক্ট দেখেছি। আমরা কিছু কিনেছিলাম। মাসরুম চাষে মার্কেটিং সবচেয়ে বড় বিষয়। আমাদের কৃষি বিভাগে মাসরুম চাষের একটা বরাদ্দ এসেছিল, সেটা এখন আর নেই। তবে, তাঁর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। পরবর্তীতে কোন প্রজেক্ট আসলে তাঁর জন্য থাকবেই। আর যদি এখন মাসরুম বিক্রি করতে সমস্যা হয় তাহলে আমরা ব্যক্তিগতভাবে কিনতে পারি। তবে, বিক্রির বিষয়টি আপাতত নিজেকেই খুঁজতে হবে।

১১ নম্বর কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমার এলাকায় কেউ যদি ইনোভেটিভ কাজ করতে চায় তাহলে তাকে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে। কৃষি কাজের ক্ষেতে কোন সহায়তা আসলে তাঁর বিষয়টি আমরা বিবেচনা করে দেখব।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ

x