নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নাটোরের বাগাতিপাড়ায় নকল কীটনাশকে ১৫ বিঘা জমির ফসল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ ১১ কৃষক বিক্ষুব্ধ হয়ে বাজারের কীটনাশক ডিলারের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, ফসলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এ নিয়ে কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত বুধবার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও এবং কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে উপজেলার খাটখইর মাঠে কৃষকরা পেঁয়াজ, রসুন, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেছেন। এসব ফসলের রোগ বালাই দূরীকরণে কীটনাশক প্রয়োগ করেন। কিন্তু সম্প্রতি ওই এলাকার হাকিমপুর বাজারের শরিফুল ইসলামের কাউছার ট্রেডার্স এবং সোহরাব হোসেনের দোকান থেকে বিভিন্ন কোম্পানির নামের কীটনাশক ক্রয় করে তাদের ফসলে স্প্রে করেন। প্রায় ১০ থেকে ২৫ দিন পূর্বে এই বালাইনাশক প্রয়োগের পর ১১ জন কৃষকের প্রায় ১৫ বিঘা জমির পেঁয়াজ, রসুন এবং পেয়ারা নষ্ট হয়ে গেছে।

পড়তে পারেন: কীটনাশকের পরিবর্তে মেহগনির তেল, বেশ সুফল পাচ্ছেন কৃষক

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা হলেন, বিকাশ, রাজিব, কুরবান, আশরাফ, রতন, নজরুল, মতিউর, বিপ্লব, আসাদ, কামরুল, সালমান।

ক্ষতির বিষয়গুলো কৃষকরা দোকান মালিকদের জানালেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় কৃষকরা সংশ্লিষ্ট কীটনাশক কোম্পানির লোকজনদের জানান। কোম্পানির লোকজন মঙ্গলবার মাঠ পরিদর্শন করেন এবং প্রয়োগকৃত কীটনাশকগুলো দেখে নকল বলে কৃষকদের জানান। এরপর ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওইদিন উপজেলার হাকিমপুর বাজারের দুই কীটনাশক ডিলারের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

পড়তে পারেন: নওগাঁয় পানের দোকানে বিপুল পরিমান নকল কীটনাশক জব্দ

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক রাজিব জানান, তিনি চলতি মওসুমে তিন মাসের জন্য বিঘা প্রতি ১০ মণ গমের বিনিময়ে জমি লিজ নিয়ে সাড়ে চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। নকল কীটনাশক প্রয়োগের পর তার সব পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তার মাথায় হাত পড়েছে।

কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, ওই দুই দোকান থেকে কীটনাশক ক্রয় করে পেয়ারা বাগানে প্রয়োগ করেছিলেন। এরপর থেকেই তার বাগানের গাছ পুড়ে গেছে, পেয়ারায় লাল দাগ পড়ে গেছে, নতুন নতুন ফুল মরে যাচ্ছে। তিনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিষয়গুলো নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্মকর্তারা কীটনাশক মালিকদের সামান্য জরিমানা করছেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

পড়তে পারেন: লিচু গাছে মুকুল আসা থেকে ফল ধরা পর্যন্ত পরিচর্যা

সরেজমিনে খাটখইর মাঠের ক্ষতিগ্রস্থ পেঁয়াজ-রসুন খেত ও পেয়ারা বাগান ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজের গাছগুলো মরে গেছে, কিছু কিছু গাছের পাতার মাথাগুলো মরে পুরো গাছ হলুদাভ হয়ে গেছে। পেয়ারার নতুন ফুলগুলো মরে গেছে, পেয়ারার গায়ে কালো দাগ পড়ে গেছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাছাড়া প্রয়োগ করা কীটনাশকের নমুনা কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো টেস্টের জন্য ল্যাবে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত ইউএনও নিশাত আনজুম অনন্যা বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে কৃষকদের মাঠ পরিদর্শন করা হয়েছে। তাছাড়া অভিযুক্ত দুই কীটনাশক ডিলারের দোকানে কৃষকদের লাগানো তালা খুলে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশক পাওয়া গেছে।

এছাড়াও সঠিক পথে না কিনে কিছু কীটনাশক বাইরে থেকে কম মূল্যে ক্রয় করে বিক্রি করার কথা দোকান মালিকরা স্বীকার করেছেন। এ কারণে দুই দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কাউছার ট্রেডার্সের শরিফুল ইসলামকে ৭ হাজার এবং অপর দোকানের সোহরাব হোসেনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাউছার ট্রেডার্সের মালিক ডিলার শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রায় মাস খানেক পূর্বে নেয়া যেসব কীটনাশকের কথা কৃষকরা বলছেন তা তার দোকান থেকে নেয়া নাও হতে পারে। তাছাড়া তিনি নকল কীটনাশক বিক্রি করেন না। তার দোকান থেকে নতুন কিছু কীটনাশক অফিসাররা নকল কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে গেছেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ