মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: দেশের উত্তরাঞ্চলের খাদ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে বৃষ্টি নির্ভর আউশ ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চাষাবাদের ধুম চলছে। প্রতিদিন সূর্যের আলো ফুটে ওঠার আগেই মাঠে নেমে পড়ছেন কৃষকরা। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে খাদ্য-শস্যের সংকট মোকাবিলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কৃষকরা সংগ্রামে নেমেছে।

কৃষকেরা যাতে করোনা মোকাবেলা করে ফসল ফলাতে পারেন এজন্য উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চাষাবাদের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের প্রণোদনাও দিচ্ছেন। কৃষকদের মতে, আউশ চাষ বৃষ্টি নির্ভর হওয়ায় সেচ খরচ লাগে না। সার-কীটনাশকও খুবই কম প্রয়োগ করতে হয় বলে এ ধান চাষে তুলনামূলক খরচ কম, লাভ বেশি। ফলে উপজেলায় প্রতি বছরই বাড়ছে আউশ চাষ।

সরেজমিনে উপজেলার উত্তরগ্রাম, মোল্লাকুড়ি, তেরমাইলসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে, খালের ধারে, রাস্তার পাশের জমিতে এবং ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা। কোথাও কোথাও ট্রাক্টর-পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে জমি চাষের কাজ। এছাড়া ধান রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে চারা। আউশ রোপণে মাঠের পর মাঠ কৃষকেরা মহাব্যস্ত। কে কার আগে ধানের চারা রোপণ করবেন-এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাদেবপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পরিমান জমি আবাদ করতে ৭৫০ হেক্টর বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে। ১৩ জুন পর্যন্ত ৪৫০ হেক্টর জমিতে চারা রোপন সম্পন্ন হয়েছে। আউশ চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে এক হাজার ৫০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের প্রত্যেককে পাঁচ কেজি বীজ, ১০ কেজি এমওপি এবং ২০ কেজি ডিএপি সার সরবরাহ করেছে।

তেরমাইল এলাকার কৃষক ইয়াছিন আলী বলেন, ‘বর্তমানে মাঠে আউশ রোপণ চলছে। বৃষ্টির পানি দিয়ে এ ধান চাষাবাদ হয়। সার-কীটনাশক খুবই কম লাগে। ফলে অধিক লাভ হয়।’ মোল্লাকুড়ি এলাকার কৃষক খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার পর গত বোরো মৌসুমে ধানের দাম অনেকটা ভাল পেয়েছি। সেই আশায় ফের আউশ আবাদ শুরু করেছি।’

মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, ‘খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা বৃষ্টি নির্ভর আউশ ধান চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বাজারে ইউরিয়া, ফসফেট, টিএসপি, পটাশসহ সকল প্রকার সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় ভরা মৌসুমে কোন সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা নেই।’

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ