ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: দেশের উত্তরাঞ্চলের ধান-চালের রাজ্য হিসেবে পরিচিত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় প্রচণ্ড শীত ও হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে বোরো ধান রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠ জুড়ে বোরো আবাদের ধুম চলছে। প্রতিদিন পূর্ব দিগন্তে সূর্যের আলো ফুটে ওঠার আগেই ফসলের মাঠে নেমে পড়ছেন কৃষকরা।

গত মৌসুমে ধানের দাম ভাল পাওয়ায় এবং বাজারে কৃষি উপকরণ সার, তেল পর্যাপ্ত সরবরাহের ফলে বোরো চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে বোরো চাষ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এ পরিমান জমিতে বোরো চাষ করতে ১ হাজার ৮৩০ হেক্টর বীজতলা তৈরীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি বুধবার পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপন সম্পন্ন হয়েছে। এ মৌসুমে হাইব্রিড ধান চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে ৬ হাজার ৭৫০ জন কৃষককে ২ কেজি উন্নত জাতের হাইব্রিড বীজ সরবরাহ করছেন। যার বাজার মূল্য ৩৪ লাখ টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর পাড়ে, খালের ধারে, রাস্তার পাশের জমিতে ও ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা। কোথাও গভীর নলকূপ দিয়ে চলছে সেচ, আবার কোথাও ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে জমি চাষের কাজ। এছাড়া ধান রোপনের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে চারা। চারা তোলা আর রোপনের ব্যস্ততায় কৃষকের গায়ে শীত যেন স্পর্শ করছেনা। মাঠের পর মাঠ ব্যস্ত আর ব্যস্তÍ হয়ে উঠেছে। সবমিলিয়ে কৃষকদের একটাই উদ্দেশ্য ঘরে তুলতে হবে বোরো ধান।

উপজেলার হাতুড় গ্রামের কৃষক আমির আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘প্রচন্ড শীতের কারনে কৃষি শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না। এ কারনে অনেকাংশে শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি তাদের অতিরিক্ত মজুরি দিতে হচ্ছে। তাদের এই চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। শীতের কারনে এ বছর বোরো চাষ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।’

ঝলঝলি গ্রামের কৃষক নাজমুল হাসান ও আজিজুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘তারা প্রায় ২০ বিঘা জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে। তাদের মতে, প্রতি বিঘা জমিতে বোরো চাষ শেষ করতে কমপক্ষে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে খরচের পরিমান আরো বেড়ে যাবে।’

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিদিব অরুন চন্দ্র রায় এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘গত মৌসুমে মহাদেবপুরসহ নওগাঁ জেলার বাজারগুলোতে মোটা চালের সংকট দেখা দেওয়ায়, চলতি মৌসুমে হাইব্রিড ধান চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন। এই জাতের হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ৬ মেট্রিক টন। আর জীবনকাল ১শ’ ৪০ থেকে ১শ’ ৪৫ দিন।’

তিনি আরোও বলেন, ‘বাজারে ইউরিয়া, ফসফেট, টিএসপি, পটাশসহ সকল প্রকার সার, তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় বোরো ধানের ভরা মৌসুমে কোন সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা নেই। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।’

মহাদেবপুর উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ইউএনও মো. মিজানুর রহমান মিলন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘শীত উপেক্ষা করে কৃষকরা বোরো চাষ করছেন। সেচ সংক্রান্ত কোন সমস্যা নেই। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ৫৭৯ টি গভীর নলকূপ ও ১ হাজার ১০৫ টি অগভীর নলকূপ চালু রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত মুনাফার আশায় কোন ব্যবসায়ী সার-তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ