ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: দেশের উত্তরাঞ্চলের ধান-চালের রাজ্য বলে খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় সরকারি সহায়তায় বাড়ছে পাটের আবাদ। গেলো বছর বাজারে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় এবারও সোনালি আঁশ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। চলতি মওসুমে লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে পাটচাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্তারা।

একসময় উপজেলার কৃষকরা ব্যাপক জমিতে পাটচাষ করতেন। কয়েক বছর আগেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চাষীরা পাটচাষ ছেড়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে পাটের দাম। একই সঙ্গে দেশ-বিদেশে চাহিদাও বেড়েছে।

উপজেলার এনায়েতপুর, শিবরামপুর ও ধর্মপুর এলাকার পাটচাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চৈত্র-বৈশাখ মাসে সার-গোবর ছিটিয়ে জমি তৈরি করে পাটের বীজ বপণ করেছেন কৃষকরা। ২০-২৫ দিনে গাছ একটু বড় হওয়ার পর ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেছেন। এর দুই থেকে আড়াই মাস পর পাট পরিপক্কতা লাভ করবে এবং আঁশযুক্ত হবে। পরিপক্কতা লাভের পরই পাট কেটে আঁটি বেঁধে ডোবায় জাগ দেবেন। মৌসুমের শুরু থেকে নিয়মমাফিক বৃষ্টি হয়েছে। পাটচাষে বর্ষার পানি অন্যতম উপকরণ। কৃষকরা আশা করছেন, এবার পাট বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে তা জাগ দিতে পানির অভাব হবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাদেবপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে পাটচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে আবাদ হয়েছে ২০০ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত জমি থেকে ১০ দশমিক ২ বেল পাট উৎপাদন হবে বলে কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা। গত বছর আবাদ হয়েছিল ১৭০ হেক্টর জমিতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, সরকার পাটজাত দ্রব্য ব্যবহার বাধ্যতা মূলক করায় পাটের মূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি হিসেবে পাটকাটি ব্যবহার ও জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কৃষকরা পাট চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে উঠছেন। পাট চাষ সফল করতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে হাতে-কলমে চাষীদের প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের পাটবীজ সরবরাহ।

উপজেলার এনায়েতপুর এলাকার পাটচাষী একরামুল হক বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পাটচাষ করছি। গাছ ভালো হয়েছে। বর্ষার পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া গেছে। তাই আশা করছি এবার বিঘায় ১৪-১৫ মণ পাট ঘরে তুলতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পাটচাষ করতে বীজ বপন থেকে শুরু করে পাটের আঁশ ছড়িয়ে শুকানো পর্যন্ত ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়।’ উপজেলার পাট ব্যবসায়ী লোকমান আলী বলেন, ‘গতবার পাট ওঠার শুরুর দিকে প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ১৬০০-১৮০০ টাকায়। পরের দিকে দাম বেড়ে ২০০০-৩০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।’

মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, ‘পাটচাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে পাটের আবাদ। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। কৃষকেরা পাট উৎপাদনে আবারও মনযোগী হয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ