ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম ধান-চাল উৎপাদনকারী উপজেলা নওগাঁর মহাদেবপুরে রেকর্ড পরিমান জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গাঢ় সবুজের বিপ্লব। ধানের চারায় দুলছে লাখো কৃষকের রঙিণ স্বপ্ন।

কোথাও কোথাও ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত কৃষক। আবার কোথাও সার-কীটনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষি শ্রমিকরা। কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন ধানচাষীরা। যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের। আর ধান ক্ষেতে রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ ঠেকাতে তৎপর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ৩০টি ব্লকে বাদামী ঘাস ফড়িং (কারেন্ট পোকা) এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকা ও রোগের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় আলোচনা সভা, লিফলেট বিতরণসহ নানা সচেতনতামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। সন্ধ্যার পর ধান ক্ষেতের আইলে আলোক ফাঁদ পেতে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি নিশ্চিত করে কৃষকদের বালাইনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। এতে কৃষকরা ধান ক্ষেতে আক্রমণকারী পোকা ও রোগ চিহ্নিত করে বালাইনাশক প্রয়োগ করছেন। প্রতিদিনই কোন না কোন গ্রামে গিয়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। স্থানীয় বাজারে ধানের দামও ভালো রয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ মৌসুমে কৃষকরা অধিক মুনাফা লাভ করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাদেবপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২০২২ খরিপ-২ মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২৮ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ১৮ হাজার ৫২০ হেক্টর, ১০ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের চিনি আতব (সুগন্ধি) এবং ২৩০ হেক্টরে হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে। উপজেলার প্রায় ২০টি অটো রাইসমিলে প্রতিদিন এক হাজার মেট্রিক টনের অধিক চিনি আতব চাল উৎপাদন হয়।

যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। চিনি আতব চালের পোলাও, বিরিয়ানি, পায়েস ইত্যাদি খাবার প্রাচীনকাল থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয়। এসব খাবার বাদ দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন কিংবা অনুষ্ঠান যেন অপূর্ণ থেকে যায়। বিয়ে, জন্মদিনসহ সামাজিক উৎসবে চিনি আতব চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া ছোট-বড় মিলে উপজেলাজুড়ে প্রায় ৬০০টি অটোমেটিক-হাসকিং রাইস মিল রয়েছে।

এসব মিলে উৎপাদিত মোটা চাল (ভাতের চাল) স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। সরেজমিনে উপজেলার উত্তরগ্রাম, সিদ্দিকপুর, দাশড়া, চৌমাশিয়া ও রাইগাঁ এলাকার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের প্রায় ৬০-৭০ ভাগ মানুষ ধান ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত। মাঠের পর মাঠ বাতাসে দোল খাচ্ছে আমন ক্ষেত।

উপজেলার সিদ্দিকপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম, রকেট হোসেন, রফিকুল ইসলামসহ ১০ থেকে ১২ জন আমন ধানচাষী বলেন, স্বর্ণা-৫, সুমন স্বর্ণা, ব্রিধান ৪৯, ব্রিধান-৫১, গোল্ডেন ও স্থানীয় জাতের চিনি আতব ধান রোপণ করা হয়েছে। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কৃষি অফিসের পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ ও আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত রয়েছেন তারা। সফাপুর গ্রামের কৃষক সম্রাট হোসেন বলেন, একদিকে সার-কীটনাশকের দাম ঊর্ধ্বগতি। অপরদিকে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেচকার্য ব্যাহত হচ্ছে।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলা পর্যায়ে দেশের সর্বাধিক চিনি আতব ধান মহাদেবপুরে চাষ হয়। মৌসুমের শুরু থেকেই ক্ষেতে সঠিক সময় সেচ, সার ও বালাইনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে আসছেন তারা।

মহাদেবপুর উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ইউএনও মিজানুর রহমান মিলন বলেন, গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সার-কীটনাশক বিক্রি করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কৃষি বিভাগ আমন চাষীদের প্রণোদনা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ