মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: শীতকালে কিংবা গ্রীষ্মকালে মাছের বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয়ে গেলে মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা পানির পরিবেশ খারাপ থাকলে তা ঠিক করতে হয়। তবে তার আগে মাছের রোগ সম্পকে জানতে হবে। মাছের ফুলকা কৃমি রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিরোধ বিষয়ে আজ জানব।

মাছের ফুলকা কৃমি

রোগের কারণ ও লক্ষণ : ড্যাকটাইলোগাইরোসিস পরজীবী সংক্রমণে এ রোগ হয়। আক্রান্ত মাছের শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যায়। দেহের বর্ণ ফ্যাকাশে হয়। ফুলকায় রক্তক্ষরণ হয়। ফুলকা পচে ও ফুলে যায়। মাছ দ্রুত মারা যায়। মাছ লাফালাফি করে।

প্রতিরোধ ও প্রতিকার : মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথর চুন ৩ মাস পর পর দিতে হবে। জৈবসার ও সম্পূরক খাদ্য কম দিতে হয়। আক্রান্ত মাছ ২০০ পিপিএম লবণ দ্রবণে সপ্তাহে একবার হিসাবে মোট দুইবার গোসল করাতে হবে। অথবা ৫০ পিপিএম ফরমালিনে আক্রান্ত মাছকে ১ ঘণ্টা ডুবিয়ে ছেড়ে দিতে হয়।

কৃমি রোগ
বর্ষা ও শীতকালে নার্সারি ও লালন পুকুরে এ কৃমি বেশি দেখা যায়। এ জাতীয় কৃমি নাইলোটিকা মাছের ফুলকায় আক্রমণ করে এবং শিরা উপশিরা থেকে রক্ত চুষে নেয়।

লক্ষণ হলো : রোগাক্রান্ত মাছ খুব অস্থিরভাবে চলাফেরা করে। মাছের দেহে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। মাছের শ্বাসকষ্ট হয় ও পুকুর পাড়ে ভাসতে থাকে। পুকুরের পাড়ে কোনো কিছুতে গা ঘষতে থাকে। মাছ দুর্বল হয়। মাছের শ্বাসকষ্ট হয় ও মারা যেতে পারে।

প্রতিরোধ-প্রতিকার : জলাশয়ের শামুক পরিষ্কার করা। প্রতি শতাংশে পুকুরে ১ মিটার গভীরতার জন্য ৪০ গ্রাম ডিপ্টারেক্স ৭ দিন পরপর মোট ২ বার প্রয়োগ করতে হয়। ৩.৫ লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার ফরমালিন মিশিয়ে সেই দ্রবণে মাছ ৫ থেকে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে।

ক্ষতরোগ
বাংলাদেশে প্রায় ৩২ প্রজাতির মাছ এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ রোগে আক্রান্ত মাছের গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। অঢ়যধহড়সুপবং নামক ছত্রাক সংক্রমণে এ রোগ হয়। পরে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এরোগ সৃষ্টি হয়।

এ রোগে মাছের গায়ে ছোট ছোট লাল দাগ দেখা যায়। লাল দাগের স্থানে গভীর ক্ষত হয়। মাছ দ্রুত মারা যায়। চোখ নষ্ট হতে পারে। ক্ষত স্থান থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। মাছ খাদ্য গ্রহণ করে না। ক্ষতে চাপ দিলে দুর্গন্ধ ও পুঁজ বের হয়। মাছ দুর্বল হয় এবং ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। আক্রান্ত বেশি হলে লেজ ও পাখনা পচে খসে পড়ে।

প্রতিরোধ ও প্রতিকার : শুকনো মৌসুমে পুকুরের তলা শুকাতে হবে। শীতের শুরুতে প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন ও ১ কেজি লবণ একত্রে প্রয়োগ করতে হবে। পোনা মজুদের আগে ২-৩% লবণ পানিতে পোনা গোসল করানো। জৈবসার প্রয়োগ সীমিত করা। জাল রোদে শুকিয়ে পুকুরে ব্যবহার করা।

প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৬০-১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন বা ১ গ্রাম ক্লোরোমাইসিটিন ওষুধ মিশিয়ে পরপর ৭-১০ দিন প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত মাছকে ৫ পিপিএম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে ১ ঘণ্টা অথবা ১ পিপিএম তুঁতের দ্রবণে ১০-১৫ মিনিট গোসল করাতে হয়।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ