ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মাদাগাসকারের প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন হারবাল চা পানে করোনা রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠছেন। এমন দাবি করার পর দেশটি থেকে হারবাল চা আমদানির হিড়িক পড়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ মাদাগাসকারের এই চা আমদানিও করেছে। ইতোমধ্যে চা আমদানি করতে তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট জন ম্যাগুফুলি মাদাগাসকারে একটি বিশেষ বিমান পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

কঙ্গো-ব্রাজাভিলের প্রেসিডেন্টও এই হারবাল চা আমদানি করবেন বলে জানিয়েছেন। বিবিসি বলছে, মাদাগাসকারে আর্টেমিসিয়া নামের এক ধরনের গাছ থেকে এই চায়ের দানা তৈরি হয়। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার ওষুধের উপাদানের উৎস এই গাছ।

আফ্রিকায় এই হারবাল চা আমদানির হিড়িক পড়ে যাওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই চা পানে করোনা নিরাময়েরে কোনও প্রমাণ নেই। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ না করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

মাদাগাসকারের প্রেসিডেন্টের চিফ অফ স্টাফ হাসিনিরিনা রনোরোমারো বলেছেন, কোভিড-অর্গানিক হিসাবে এই পানীয় বাজারে আনা হয়েছে। তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ২০ জনের ওপর এই পানীয়র পরীক্ষা চালানোর পর বাজারজাত তা করা হয়েছে।

মাদাগাসকারের কোভিড-অর্গানিক পানীয় বাজারজাত করার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিবৃতিতে বলেছে, করোনা চিকিৎসার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেকোনো ধরনের ওষুধের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর স্বেচ্ছা-চিকিৎসা, প্রতিরোধ অথবা নিরাময়ের সুপারিশ করে না।

এর আগে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, করোনাভাইরাসের লড়াইয়ে শর্ট-কাট কার্যকরী কোনো চিকিৎসা এখনও পাওয়া যায়নি। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের একটি কার্যকরী চিকিৎসা খুঁজে পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অনেক ট্রায়াল চলছে।

আরোও পড়ুন: আক্রান্ত বেশি হলে সেই কারখানা কিছুদিন বন্ধ থাকবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড ইন্টেগ্রেটিভ হেলথ করোনাভাইরাস প্রতিকারে হারবাল থেরাপি এবং চা পানের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেয়। মার্কিন এই সংস্থাটি বলছে, সংক্রমণ ঠেকানোর সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে এই ভাইরাসের সংস্পর্শে না আসা।

আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে মাদাগাসকারের এই হারবাল চা আমদানি করেছে। শনিবারও গিনি-বিসাও এই চায়ের প্রথম চালান দেশে এনেছে। মালাগাসির প্রেসিডেন্ট এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ইকুয়াটোরিয়াল গিনির একজন বিশেষ দূত এই চা নেয়ার জন্য দেশে এসেছেন।

তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট জন ম্যাগুফুলি বলেছেন, তিনি ইতোমধ্যে মাদাগাসকারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং এই ওষুধ আমদানির জন্য দেশটিতে একটি বিশেষ বিমান পাঠিয়ে দেবেন।

তিনি বলেন, আমি মাদাগাসকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা ইতোমধ্যে একটি চিঠি লিখেছে। এতে বলা হয়েছে, তারা বেশ কিছু ওষুধ উদ্ভাবন করেছেন। আমরা এই ওষুধ আনার জন্য একটি বিশেষ বিমান পাঠাবো। এর মাধ্যমে তানজানিয়ানরা উপকৃত হবে। এজন্য দেশের সরকার দিন-রাত কাজ করে চলেছে।

করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করে আফ্রিকা মহাদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন তানজানিয়ার এই প্রেসিডেন্ট। পুরো বিশ্ব করোনার লড়াইয়ে কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকলেও ম্যাগুফুলি দেশটির জনগণকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে গণজমায়েত চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

করোনাভাইরাস মহামারির প্রবল ধাক্কা তানজানিয়ায় শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনার বিস্তার রোধে দেশটির সরকার কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এ সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক এই সংস্থা।

তানজানিয়ায় এখন পর্যন্ত ৪৮০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে কঙ্গো-ব্রাজাভিলেতে ২২৯ এবং মাদাগাসকারে ১৩৫ জন করোনা সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে।