ইউসুফ আলী সুমন, নওগাঁ প্রতিনিধি: উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত এবং দেশের সর্ববৃহৎ আম উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি মাল্টা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা।

মাল্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। তবে অন্যান্য ফল ও ফসলের দাম কমে যাওয়ায় এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় মাল্টার দিকে ঝুঁকেছেন চাষিরা।

চাষিরা বলছেন, নতুন জাতের ফল ও ফসলের প্রতি সবারই আগ্রহ থাকে। স্থানীয় ভাবে উৎপাদন করা যেকোনো ফলের প্রতি ক্রেতাদেরও আগ্রহ থাকে এবং দামও ভালো পাওয়া যায়। এ কারণে কৃষকরা মাল্টা চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছেন। এছাড়া মাল্টা চাষে আবহাওয়া অনুকূলে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহিষ্ণু।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ৫১ হেক্টর জমিতে বারি-১ মাল্টা চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে নওগাঁয় ২ হেক্টর, রানীনগরে ২ হেক্টর, আত্রাইয়ে দশমিক ২৫ হেক্টর, বদলগাছীতে ৫ হেক্টর, মহাদেবপুরে দশমিক শূন্য ৫ হেক্টর, পত্নীতলায় ৫ হেক্টর, ধামইরহাটে ২০ হেক্টর, সাপাহারে ৫ হেক্টর, পোরশায় ৬ হেক্টর, মান্দায় দশমিক ৫ হেক্টর, নিয়ামতপুরে দশমিক ২৫ হেক্টর।

কৃষি বিভাগ বলছে, মাল্টা একটি সুস্বাদু ফল। জেলায় সুস্বাদু এ পুষ্টিকর রসালো ফল চাষ করা হচ্ছে। এলাকার বেকার যুবকরাও অন্যান্য ফসল চাষের পাশাপাশি মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষকদের নতুন ফল ও ফসলের প্রতি আগ্রহ থাকে। জেলার কয়েকটি এলাকায় ভারমিক পদ্ধতিতে বারি-১ মাল্টা চাষের উপযোগী জমিতে চাষ করা হচ্ছে। যেখানে কৃষকরা ধানের পাশাপাশি মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো জাতের মাল্টা গাছের চারা রোপণ করতে পারলে এবং নিবিড় পরিচর্যায় মাল্টার ফলন ভালো হয়।

গত তিন থেকে চার বছর ধরে নওগাঁয় মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এবং চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। গত বছর সুস্বাদু রসালো এ মাল্টা স্থানীয় বাজারে স্বল্প আকারে বিক্রি করা হয়েছিল। কোনো ধরনের রাসায়নিক প্রয়োগ ছাড়াই জমি থেকে মাল্টা বিক্রি করা হয়েছে। ক্রেতারা স্থানীয় এসব ফল কিনতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। স্বাদও মোটামুটি ভালো বলে জানা গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী বলে মনে করছেন চাষিরা।

রানীনগর উপজেলার বেদগাড়ী গ্রামের মাল্টা চাষি মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘বছর বছর ধানের দাম কমায় লোকসানে পড়তে হয়েছে। কোনো ফল বা ফসলের দাম একবার পাওয়া গেলে কৃষকরা পরের বছর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটা আবাদ করে। এতে একই ফসল বাজারে থাকায় দাম কম পাওয়া যায়।’

তিনি বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তিতে নতুন ফসলের দিকে আগ্রহ বেড়েছে। ২০১৮ সালে এক একর জমিতে কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শনী নিয়ে ও নিজে কিছু বারি-১ জাতের মাল্টার চারা দিয়ে শুরু করেছি। বাগানে প্রায় ২০০টি মাল্টার গাছ আছে। মাল্টা চাষে কৃষি অফিস থেকে সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রথম দফায় প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। মাল্টা চাষে তেমন খরচ বা শ্রম দিতে হয় না।’

ধামইরহাট উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের কৃষক রেজুয়ান হোসেন বলেন, ‘প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করা হয়েছে। মাল্টা চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ার কারণ হচ্ছে- এটি নতুন একটি ফসল। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ফসল থেকে ঝামেলা ও পরিশ্রম কম। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে গাছ ভেঙে যাওয়ার কোনো সম্ভবনা থাকে না।’

রানীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মাল্টা একটি পুষ্টিকর ফল। মাল্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাজারে এর চাহিদা বেশি থাকায় ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। আগামীতে এর আবাদ আরও বাড়ানো হবে।’

নওগাঁর কৃষকরা মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন উল্লেখ করে ধামইরহাট উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। উপজেলায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে। আমাদের এলাকার জমি মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী।’

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ