মুজিব বর্ষ’কে স্মরণীয় রাখতে

পোল্ট্রি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও ‘মুজিব বর্ষ’কে স্মরণীয় করে রাখতে পোল্ট্রি শিল্প উদযাপন করবে ‘পোল্ট্রি দিবস’। এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করবে শিল্পটি।

এর ফলে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প চলতি বছর থেকে তাদের ক্যালেন্ডারে যুক্ত করতে যাচ্ছে আরও একটি নতুন দিবস। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি দিবস’। আগামী মাচের্র ১৯ তারিখে সারাদেশে উদযাপিত হবে দিবসটি।

দেশের প্রতিটি মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবান ও মেধাবি জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে বাঙালী জাতিকে সম্মানজনক অবস্থানে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য নিয়েই বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পের পক্ষ থেকে নতুন এ কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি, ২০২০) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য তুলে ধরে ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি)।

ওয়াপসা-বিবি’র সভাপতি আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান (শাহরিয়ার) বলেন, ‘পোল্ট্রি দিবস’ হচ্ছে এমন একটি দিন যে দিনটি জুড়েই থাকবে পোল্ট্রি নিয়ে নানান সব আয়োজন।

তিনি জানান, এদিনে দেশের স্বনামধন্য বাবুর্চিদের দিয়ে পোল্ট্রি’র মাংস ও ডিমের মজার মজার খাবার রান্না করা হবে, চলবে প্রতিযোগিতা! শিশুদের জন্য থাকবে ফানগেমস, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক আলোচনা সভা, এছাড়াও হ্রাসকৃত মূল্যে ডিম ও মুরগির মাংস বিক্রিরও ব্যবস্থা থাকবে।

তবে সবকিছু ছাড়িয়ে পোল্ট্রি’র মাংস যে কতটা সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্য-সম্মত সে বার্তাটি পৌঁছে দেয়াই হবে এবারের মূল উদ্দেশ্য।

ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সাধারন সম্পাদক ডা. মো. আলী ইমাম বলেন, সার্বজনিনভাবে ‘পোল্ট্রি দিবস’ পালনের রীতি এখনও শুরু না হলেও এ দিবসটির উদযাপন শুরু হয়েছিল আজ থেকে বহুবছর আগেই।

যতটুকু জানা যায় ১৯৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও’র ভার্সাইলেস নামক একটি ছোট্ট গ্রামে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন শুরু হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘পোল্ট্রি’হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক উৎপাদিত মাংস। বিশ্বে উৎপাদিত মোট মাংসের প্রায় ৩০ শতাংশই পোল্ট্রি থেকে আসে। আর বাংলাদেশে মোট প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৪৫ শতাংশের যোগান দেয় পোল্ট্রি খাত।

ওয়াপসা- বাংলাদেশ শাখার সাবেক সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, পুষ্টি সূচকে বাংলাদেশ পূর্বের চেয়ে যথেষ্ঠ অগ্রগতি অর্জন করলেও অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা এখনও নিতান্তই কম নয়।

অপুষ্টির কারণে মানুষ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, কম ওজনের শিশুর জন্ম হচ্ছে, শিশুরা খর্বাকৃতির হচ্ছে, রক্ত-স্বল্পতা, অকাল বার্ধক্য, অকালে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, এমনকি অকাল মৃত্যুর কারণও ঘটছে।

সবচেয়ে ভয়ের বিষয়টি হচ্ছে অপুষ্টি’র প্রভাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। আর সবচেয়ে ভরসার বিষয়টি হচ্ছে- একটু সচেতন হলে খুব সহজেই এ অপুষ্টির অভিশাপ থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি এবং সেজন্য অনেক বেশি টাকা খরচেরও প্রয়োজন পড়েনা। পোল্ট্রি আমাদের জন্য সে সুবিধাটিই এনে দিয়েছে।

খালেদ বলেন, নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদন নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি সজাগ এখন পোল্ট্রি শিল্প। এন্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার বন্ধ করার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাথে যৌথ উদ্যোগে তৃণমূল খামারিদের প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে, এমনকি দেশের বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক দেশে এনে মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে নিরাপদ পোল্ট্রির ডিম ও মাংস উৎপাদনে অনেকখানি এগিয়েছে তার প্রমাণ হচ্ছে- এন্টিবায়োটিক নয় বরং প্রোবায়োটিক, প্রিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়েছে পোল্ট্রি শিল্পে।

২০১৭ সালে দেশীয় ফিড ইন্ডাষ্ট্রিতে প্রায় ৩০০০ মে.টন এজিপি অলটারনেটিভ এডিটিভস (অঅঅ) আমদানি হয়েছিল যার মূল্য প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা। প্রায় ৩৪ লাখ মে.টন ফিড এ পরিমান অঅঅ দিয়ে তৈরি করা যায়- যা ছিল ২০১৭ সালে উৎপাদিত ফিডের প্রায় ৮০ শতাংশ।

তিনি বলেন, খামারিদের এ সচেতনতার কারণেই ব্রয়লার মুরগির মাংস এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও নিরাপদ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, চলতি অর্থবছরে এফ.এ.ও নির্দেশিত ১০৪টি ডিমের নূন্যতম চাহিদা পূরণ হয়েছে। তাছাড়া মাংসের মাথাপিছু বার্ষিক চাহিদা ৪৩.২৫ কেজি’র বিপরীতে গত বছরই ৪৫.১০ কেজি উৎপাদিত হয়েছে।

অর্থাৎ ডিম ও মাংসে স্বয়ং-সম্পূর্ণ বাংলাদেশ। তাই দৃষ্টি এখন রপ্তানী বাজারের দিকে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, চীন, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং হালাল মার্কেটগুলোতে বাংলাদেশের মাংসের যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। চীনে ইতোমধ্যে প্রায় ২০ লাখ মে.টন রেড মিটের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

অদূর ভবিষ্যতে ভারত ও চীন উভয় দেশকেই হয়ত মাংসের চাহিদা মেটাতে আমদানিমুখী হতে হবে। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতেও রেড মিটের ওপর থেকে সাবসিডি তুলে নেয়া হচ্ছে।

এতে করে ঐসব দেশেও বিলিয়ন ডলারের মার্কেট উন্মুক্ত হতে পারে বাংলাদেশের জন্য।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যেই ভারতের কয়েকটি রাজ্যে পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের রপ্তানী শুরু হয়েছে। তবে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে অনেক রপ্তানীকারক আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

ডিম ও মুরগির মাংস রপ্তানীর পূর্বশর্ত হিসেবে সব ধরনের বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামার, ব্রিডার ফার্ম ও হ্যাচারি এবং ফিড মিল বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন সম্পন্ন করার ওপর জোর দেন পোল্ট্রি নেতারা।

তাঁরা বলেন, সোনালী মুরগিতে রোগ জীবানুর সংক্রমণ বেড়েছে, তাই এখাতকে অনতিবিলম্বে পোল্ট্রি উন্নয়ন নীতিমালার আওতায় আনতে হবে। ব্রয়লার খামারিরা উৎপাদন খরচের টাকা ঘরে তুলতে পারছেন না।

ব্রিডার্স ইন্ডাষ্ট্রি’র অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। তাই খামারিদের রক্ষায় পোল্ট্রি শিল্পের প্রতি বিশেষ নজর দেয়ার সময় এসেছে।

পোল্ট্রি নেতারা বলেন, বঙ্গবন্ধু কৃষিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি গ্রাম বাংলার উন্নয়নের কথা বলেছিলেন। পোল্ট্রি শিল্পও মূলত: গ্রাম কেন্দ্রিক। সরকার নির্ধারিত ২০২১, ২০২৪, ২০৩০ এবং ২০৪১ সালের লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখতে চান পোল্ট্রি উদ্যোক্তারা। মুজিব বর্ষের সফলতা কামনা করে সংবাদ সম্মেলনের সমাপ্তি টানা হয়।

মুজিব বর্ষ’কে স্মরণীয় রাখতে পোল্ট্রি শিল্প উদযাপন করবে ‘পোল্ট্রি দিবস’ এ আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে এগ্রিকেয়ার২৪.কম।