যন্ত্রের মাধ্যমে আলু রোপনে

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: যন্ত্রের মাধ্যমে আলু রোপনে ৭৩ এবং উত্তোলনে ৫০ ভাগ খরচ কমবে। এছাড়া আলু ও আলুর বীজের মানও ভালো হয়। শ্রমিক দিয়ে জমি তৈরির ঝক্কি ঝামেলাও নেই। তাই ছুটতে হবে না শ্রমিকের পেছনে।

এ পদ্ধতিতে দ্রুত সময়ে আলু রোপন ও উত্তোলনের ফলে বাঁচবে সময়। মিলবে প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঝুঁকি থেকেও।

এ যন্ত্রের মাধ্যমে জমি চাষ, আলু বপন, বেড তৈরি এক সঙ্গে করা যায়। এছাড়া আস্ত ও কাট পিচ উভয়ই আলু বোপন করা যায়। এতে শ্রমিক সাশ্রয় হবে শতকরা ৯৪ ভাগ।



বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটউটের (বারি) ফার্ম মেশিনারি অ্যান্ড পোস্টহার্ভেস্ট প্রোসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাঠ পর্যায়ে গবেষণায় এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

উন্নত প্রযুক্তির এই দুই যন্ত্র ব্যবহার করে আলু চাষিদের আলু চাষে সিংহভাগ খরচ কমে যাবে বলে জানান বারি’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইসরাইল হোসাইন।

বারি’র গবেষণায় দেখা যায়, যন্ত্রের সাহায্যে আলু রোপনে হেক্টর প্রতি জমি তৈরি, বীজ বপন ও শ্রমিকের খরচ হয় সাত হাজার ৫৪ টাকা। আর একই পরিমাণ জমিতে সনাতন পদ্ধতিতে জমি তৈরি, বীজ বপন ও শ্রমিকের খরচ হয় ২৬ হাজার চারশ’ত টাকা।

এ হিসাবে যন্ত্রের মাধ্যমে জমিতে আলু রোপনে হেক্টর প্রতি খরচ বাঁচবে প্রায় বিশ হাজার টাকা। অর্থাৎ যন্ত্র ব্যবহার করে চারভাগের তিন ভাগ কম খরচে আলু চাষিরা আলু রোপন করতে পারছেন।

বর্তমানে মাঠ পর্যাযে এ ধরণের ১০টি যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। এ যন্ত্রটি কিনতে ৪০ হাজার টাকার মতো লাগবে। তবে পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে যন্ত্রটি ব্যবহার করতে হবে।

ধীর গতিতে দীর্ঘ সময় ধরে আলু উত্তোলনের ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এ যন্ত্র ব্যবহার করে। এতে আলুর বীজের মানও ঠিক থাকবে। এই যন্ত্রটি সহজেই পরিচালনা করা যায়। সবগুলো আলুই মাটির নীচ থেকে উত্তোলন সম্ভব হয়।

এছাড়া আলু উত্তোলনের পর পরবর্তী ফসল বপনের জন্য জমিও প্রস্তুত হয়ে যায়। যন্ত্রটি কিনতে খরচ পরবে ৩০ হাজার টাকার মতো। তবে এই যন্ত্রটিও পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে ব্যবহার করতে হয়।

প্রচলিত পদ্ধতিতে এক হেক্টর জমিতে আলু ‍উত্তোলনে শ্রমিক দরকার হয় প্রায় ৬০ জনের মতো। কিন্তু যন্ত্রের সাহায্যে মাত্র ২১ জনকে দিয়েই আলু উত্তোলন সম্ভব। সবমিলিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি আলু উত্তোলনে খরচ হয় ১৭ হাজার একশ’ত টাকা। কিন্তু যন্ত্রের সাহায্যে খরচ হয় আট হাজার তিনশ’ত ৫৭ টাকা।

মেশিনের সাহায্যে আলু লাগানোর পাশাপাশি উত্তোলন করেছিলেন রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার আলু চাষি আনিছুর রহমান।

তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে অনেক কম খরচে আলুর চাষ করা যায়। বেশি জমি হলে ভালো হয়। কোনো ঝামেলা ছাড়াই আলু চাষ সম্ভব। প্রচলিত পদ্ধতিতে আলু তোলার সময়ে জমিতে আলু কম বেশি থাকেই। কিন্তু যন্ত্রের মাধ্যমে আলু তুললে একটি আলুও থাকে না।

তিনি জানান, জমিতে পানি দিতে একটু সমস্যা হয়। কিন্তু কৌশলে বেড তৈরি করতে পারলে এটিও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ ধরণের মেশিন দিলে তারা বেশি উপকৃত হবেন।

আলু রোপন ও উত্তোলনে এই দুই যন্ত্র একবার কেনার পর দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করতে পারবেন আলু চাষিরা। আর যন্ত্র দুটি খুব সহজে ব্যবহার করা যায়।

আরও পড়ুন: উন্নত গবেষনায় জলবায়ু সহিষ্ণু শষ্যের জাত উদ্ভাবনে গুরুত্ব দিতে হবে; ড. আনসারী

মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইসরাইল হোসাইন বলেন, মাঠ পর্যায়ে এই যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হলে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি। কেননা এর মাধ্যমে আলু চাষে অনেক বেশি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি আলুর বীজের গুণগত মানও ভালো রাখা সম্ভব।