বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফল কলা।এর ভেতরের মাংসল অংশ খাওয়ার উপযোগী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই কলার উৎপত্তিস্থল হলেও বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশে কলা চাষ হয়। বাংলাদেশের নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, প্রভৃতি এলাকায় শত শত বৎসর যাবৎ ব্যাপকভাবে কলার চাষ হয়ে আসছে। যেভাবে কলা চাষে শতভাগ সফলতা আসে লিখেছেন কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম। 

কলা চাষ : বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যেসব জাতের আবাদ হচ্ছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হচ্ছে বারিকলা-১ ও বারিকলা-২ (আনাজিকলা), অমৃতসাগর, সবরি, চম্পা, কবরি, মেহেরসাগর, বীচিকলা অন্যতম।

মাটি : পর্যাপ্ত রোদযুক্ত ও পানি নিকাশের সুবিধাযুক্ত উঁচু জমি কলা চাষের জন্য উপযুক্ত। উর্বর দো-আঁশ মাটি কলা চাষের জন্য উত্তম। চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল ও আগাছামুক্ত করে নিতে হবে।

চারা রোপণ : কলার চারা বছরে ৩ সময়ে রোপণ করা যায়। ১ম রোপণ কাল : আশ্বিন-কার্তিক সবচেয়ে ভালো সময়। ২য় রোপণ কাল : মাঘ-ফাল্গুন ভালো সময়। ৩য় রোপণ কাল : চৈত্র-বৈশাখ মোটামুটি ভালো সময়।

চারার দূরত্ব : সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ মিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ২ মিটার।

গর্ত তৈরি : চারা রোপণের মাসখানেক আগেই গর্ত খনন করতে হবে। গর্তের আকার হবে ৬০ সেমি. চওড়া ও ৬০ সেমি. গভীর। গর্ত তৈরি হয়ে গেলে গোবর ও টিএসপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরে রাখতে হবে।

চারা রোপণ : রোপণের জন্য অসি তেউড় উত্তম। অসি তেউরের পাতা সরু, সুঁচালো এবং অনেকটা তলোয়ারের মতো, গুড়ি বড় ও শক্তিশালী এবং কা- ক্রমশ গোড়া থেকে ওপরের দিকে সরু হয়। তিন মাস বয়স্ক সুস্থ সবল তেউড় রোগমুক্ত গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়।

সার ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি

অর্ধেক গোবর জমি তৈরির সময় এবং অবশিষ্ট অর্ধেক গর্তে দিতে হবে। অর্ধেক টিএসপি একই সঙ্গে গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের দেড় থেকে দুই মাস পর ৪ ভাগের ১ ভাগ ইউরিয়া, অর্ধেক এমপি ও বাকি টিএসপি জমিতে ছিটিয়ে ভালোভাবে কুপিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। এর দুই থেকে আড়াই মাস পর গাছ প্রতি বাকি অর্ধেক এমপি ও অর্ধেক ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। মোচা বের হওয়ার সময় অবশিষ্ট ৪ ভাগের ১ ভাগ ইউরিয়া জমিতে ছিটিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।

কলা গাছের পরিচর্যা : চারা রোপণের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে তখনই সেচ দেয়া উচিত। এছাড়া শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দেয়া দরকার। বর্ষার সময় কলা বাগানে যাতে পানি জমতে না পারে তার জন্য নালা থাকা আব্যশক। মোচা আসার পর গাছপ্রতি মাত্র একটি তেউড় বাড়তে দেয়া ভালো।

রোগ ও প্রতিকার : কলা গাছের প্রধানতম রোগগুলো হচ্ছে পানামা, বানচিটপ ভাইরাস, সিগাটোকা ও কলার দাগ রোগ।

পানামা রোগ প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত গাছের তেউড় হিসেবে চারা ব্যবহার করা যাবে না।

বানচিটপ ভাইরাস রোগ প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। গাছ উঠানো আগে জীবাণু বহনকারী ‘জাব পোকা’ ও ‘থ্রিপস’ কীটনাশক ওষুধ দ্বারা দমন করতে হবে। সুস্থ গাছেও কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে।

সিগাটোকা রোগ আক্রান্ত গাছের পাতা পুড়ে ফলতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি লিটার টিল্ট ২৫০ ইসি ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর গাছে ছিটাতে হবে।

বিটল পোকার আক্রমণে কলার গায়ে বসন্ত রোগের দাগের মতো দাগ হতে দেখলে কলার মোচা বের হওয়ার সময় ছিদ্রবিশিষ্ট পলিথিন ব্যাগ দিয়ে মোড়ে দিতে হবে। এছাড়াও অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। যে কোনো ধরনের রোগের প্রতিকারের জন্য রোগ আক্রান্ত মাঠে বার বার কলা চাষ করা যাবে না।

ফসল সংগ্রহ : কলার চারা রোপণের ১১-১৫ মাসের মধ্যেই সাধারণত সব জাতের কলা পাকার উপযুক্ত হয়। প্রতি হেক্টরে ১২-১৫ টন কলার ফলন পাওয়া যাবে।

যেভাবে কলা চাষে শতভাগ সফলতা আসে শিরোনামে লেখাটির লেখক কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ।