মামুনার রশীদ, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বর্তমানে পৃথিবীর সব জায়গায় সাইট্রাস জাতীয় ফলের গাছ জন্মায়। এখন পর্যন্ত ৩০ টি জাতীয় সাইট্রাস ফলের সন্ধান পাওয়া গেছে। লেবু, কমলা লেবু, জাম্বুরা, বাতাবি লেবু, জামির, মাল্টা সহ অনেক ধরনের সাইট্রাস জাতীয় ফল আমাদের দেশে চাষ করতে দেখা যায়।

আমাদের দেশে সাইট্রাস ফসলের মধ্যে মাল্টা খুবই জনপ্রিয় ও সহজলভ্য একটি ফল। দাম কিছুটা কম হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে, সেই সাথে জনপ্রিয়তা ও বাড়তেছে। মাল্টাতে আছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, এবং চর্বিমুক্ত ক্যালরি।

মাল্টা ফলটি জাম্বুরা এবং কমলা এই দুই ফলের সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে। এর আদি উৎপত্তি স্থল ভিয়েতনাম, উত্তর পশ্চিম ভারত ও দক্ষিণ চীনে । বাংলাদেশের বাজারে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সবুজ ও কমলা রঙের মাল্টা দেখা যায়। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট “বারী মাল্টা- ১” নামে মাল্টার একটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে, যে জাতটির পাকা ফল দেখতে সবুজ ও খেতেও সুস্বাদু ।

পড়তে পারেন: পাহাড়ে চাষ হচ্ছে সুস্বাদু ফল মাল্টা

মাল্টার বংশ বিস্তারঃ মাল্টার বংশবিস্তার সাধারণত বীজ ও কলমের মাধ্যমে করা হয়। তবে আমাদের দেশের মাটি ও আবহাওয়া সাথে তাল মিলিয়ে বীজের চারা বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না বলে, কলমের মাধ্যমে চারা উৎপন্ন করা হয় নার্সারি গুলোতে । এছাড়াও কলমের মাধ্যমে উৎপন্ন চারা গাছে মাতৃ গাছের গুনাগুন বজায় থাকে ও দ্রুত ফল ধরে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধী ও বলিষ্ঠ শিকড় সমৃদ্ধ আদি জোড়ের মাধ্যমে কলম করলে গাছের জীবনকাল ও ফলন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

বর্তমানে এই ফলটি বিশ্বের উষ্ণ ও অব–উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় বেশী চাষ হচ্ছে। কমলার তুলনায় এর অভিযোজন ক্ষমতা বেশী হওয়ায়, পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য এলাকায় সহজেই চাষ করা যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা মাল্টা চাষের মাধ্যমে নিজেকে সাবলম্বী করার চেষ্টা করছে। উন্নত জাত নির্বাচন ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করে এর উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব।

পড়তে পারেন: মাল্টা গাছের পাতা হলুদ হয়ে মারা গেলে করণীয়

মাল্টার উপকারিতাঃ

১. মাল্টা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস মূহের সমৃদ্ধ উৎস। এটি ত্বকে সজীবতা বজায় রাখে এবং ত্বকের বলি রেখা প্রতিরোধ করে লাবণ্য ধরে রাখে। মাল্টা ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি প্রদাহ জনিত রোগ সারিয়ে তোলে।

২. মাল্টার জুস কে ভিটামিন সি উৎস বলে মনে করা হয়। এটাকে ভিটামিন সি ট্যাবলেট হিসেবেও গ্রহণ করা যায়।

৩. মাল্টার ভিটামিন সি উপাদান আমাদের শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের শরীরের কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের অন্যতম সেল প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

৪. মাল্টার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখে এবং কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ভালো রাখতে সহায়তা করে।

৫. মাল্টা পাকস্থলী কে সুস্থ রাখে।পাকস্থলীর আলসার ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সুরক্ষা দেবে।

৬. গবেষণায় জানা যায়,মাল্টাতে উপস্থিত লিমিণয়েড যা মুখ,ত্বক, ফুসফুস, পাকস্থলী কোমল ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।

৭. মাল্টাতে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন সেল ড্যামেজ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, যা দাঁত ও হাড়ের গঠনে সাহায্য করে।

৮. মাল্টা খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে। কারণ, মাল্টায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি ও পটাসিয়াম। এ ভিটামিনগুলো আমাদের দৃষ্টিশক্তির জন্য বেশ উপকারী।

৯. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, কারণ এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এই কাজটি করে । ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে, ওজন কমাতেও সহায়তা করে।

১০. জন্ডিস রোগ সারাতেও মাল্টা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। জন্ডিস লিভারজনিত একটি রোগ। আর মাল্টা হলো খুবই সহজপাচ্য খাবার, খুব সহজেই এটা হজম করা যায়। এটি লিভারকে ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করে থাকে। লিভারের কার্যক্ষমতাকে স্বাভাবিক রাখতেও সাহায্য করে মাল্টা।

১১. গর্ভবতী নারীদের জন্য মালটা খুবই ভালো। এতে থাকা ভিটামিন সি গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ককে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে থাকে। প্রবীণ,মাতৃদুগ্ধদানকারী মহিলাদের নিয়মিত মাল্টা খাওয়া উচিত, কারণ এতে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।

১২. সর্দি, নাক বন্ধ থাকা, টনসিলের সমস্যা, গলাব্যথা, জ্বর জ্বর ভাব, হাঁচি-কাশি, মাথাব্যথা, ঠান্ডাজনিত দুর্বলতা-এজাতীয় সমস্যাগুলো দূর করে মাল্টা।

যেভাবে মাল্টার বংশবিস্তার ও জেনে নিন উপকারিতা লেখাটি লিখেছেন মামুনার রশীদ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ