পোল্ট্রি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সাধারণত পোল্ট্রির রোগ হলে রেজিস্টার্ড প্রাণি চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে খামারিরা ফার্মেসী, গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে যান। এসময়ে অনেক ক্ষেত্রে ফার্মেসী ও পশু চিকিৎসকরা মানহীন ওষুধ ও অ্যান্টিবায়েটিক জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

এতে খামারিদের উৎপাদন খরচ বেশী হয়ে যায়, উৎপাদন কমে যায়,  লোকসানে পড়েন তারা। আবার গুটি কয়েক ব্যবসায়ী যারা পোল্ট্রির খাদ্য উৎপাদন করে থাকেন। তারা মুরগির খামার, ওষুধ বিক্রিসহ খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায় জড়িত।

সাধারন খামারীরা তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে মুরগি বিক্রিতে লোকসানে পড়েন। অন্যদিকে যারা পশুর ওষুধ বিক্রি করেন, তাদের বিক্রয় প্রতিনিধিদের মাসিক একটি লক্ষ্য মাত্রা দেয়া থাকে, সে লক্ষ্য মাত্রা অর্জনের জন্য তারা অনেক সময় গ্রাম্য পশু চিকিৎসক, ফার্মেসীসহ এখাতের ব্যক্তিবর্গের কাছে গিয়ে টার্গেট পুরণে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নেন। ফলে মানহীন মুরগির খাদ্য ও অ্যান্টিবায়েটিক অনেক সময় বাজারজাত হয়ে থাকে।

অন্যদিকে কিছু বৃহৎ ব্যবসায়ী পুরো পোল্ট্রি সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র খামারীদের লোকসানে নিয়ে ব্যবসা থেকে বিতাড়ন করতে নানা ফন্দিফিকির করে থাকেন।

এছাড়াও পোল্ট্রি খাতে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে দেশের মানুষকে আমিষের সহজ যোগানকে বাধাগ্রস্থ করা ও পুষ্ঠির ঘাটতি পুরণে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে।

এসব কারনে পোল্ট্রি শিল্পে এ ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলমান থাকলে দেশের প্রানীজ আমিষ ও পুষ্ঠির যোগান যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এরপাশাপাশি বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠির জীবন জীবিকা নির্বাহে বিশাল ভুমিকা পালনকারী এ শিল্প গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।

তাই জনগনের মাঝে প্রানীজ আমিষ, পুষ্টি, নিরাপদ খাদ্য, বিশেষ করে পোল্ট্রি মাংস নিশ্চিত করতে পোল্ট্রি সেক্টরে অন্যায় ব্যবসা রোধে নীতিমালা প্রণয়ণ ও সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

ইউকে এইড, বৃটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় প্রকাশ প্রকল্পের কারিগরী সহযোগিতায় পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্প, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম আয়োজনে ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ইং নগরীর পর্যটন হোটেল সৈকতের সম্মেলন কক্ষে নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনে বেসরকারী সেক্টরের সাথে লার্নিং শেয়ারিং কর্মশালায় বক্তারা এসব মত প্রকাশ করেন।

ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রিয়াজুল হক জসিম, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস, সিটিকর্পোরেশনের কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, ক্যাব আইবিপি প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দা আমিরুন নুজহাত। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন থানা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জাকিয়া খাতুন।

আলোচনায় অংশ নেন ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগর সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, জানে আলম, জান্নাতুল ফেরদৌস, শাহীন চৌধুরী, রুবি খান, মোনায়েম বাপ্পি, সেলিম জাহাঙ্গীর, ডেইলী নিউএজ চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ফেরদৌস আরা, বাংলানিউজ২৪ডটকমের আল রহমান, দৈনিক পূর্বদেশ’র এম এ হোসেন, এলবিয়ন গ্রুপের ডাঃ মফিজুল ইসলাম, আজিম অ্যান্ড সন্সের মোহাম্মদ যোবায়ের, ফতেয়াবাদ চিকস’র মুসলেম উদ্দীন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, নানামুখি ষড়যন্ত্রের কারনে বিভিন্ন সময় পোল্ট্রি মাংস নিয়ে উদ্দেশ্যমুলকভাবে ভিত্তিহীন, কাল্পনিক, অবৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশ করে যাচ্ছেন একটি মহল।

আবার দেশী মুরগি বলে সোনালী মুরগি বিক্রি করে ভোক্তাদের ঠকিয়ে বেশী মূল্য আদায় করছে। কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশে দেশী মুরগির চাষ ও বিক্রি বলে কিছু নাই। কর্মশালায় আরও বলা হয় পোল্ট্রি শিল্পে ভ্যকসিন ছাড়া সরাসরি কোন ভুতর্কি ও অন্যকোন প্রণোদনা নাই।

সেকারনে তারা বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়, ফায়ার, পরিবেশ, ট্রেড লাইন্সেসহ বিভিন্ন লাইসেন্স গ্রহনের জন্য বেশী মূল্য দিতে হয়। এমনকি পোল্ট্রি খাতে কম সুদে ব্যাংক ঋনও পাচ্ছে না।

কর্মশালায় বলা হয় কৃষি, মৎস্য, পশু সম্পদ সেক্টরে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারনে সকলের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। মানুষ এখন না খেয়ে মরছে না। কিন্তু নিরাপদ খাদ্যে নিশ্চিতে সবগুলি ধাপ অনুসরণ না করার কারনে কিছু কিছু জায়গায় নিরাপদ খাদ্যও অনিরাপদ হয়ে অকাল মৃত্যুসহ নানা প্রাণঘাতি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

কর্মশালায় সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, ওষুধ প্রস্তুতকারী, খামারী, পোল্ট্রি ফিড মিল, বিক্রেতা, সাংবাদিক, বাজার সমিতির প্রতিনিধি ও ক্যাব প্রতিনিধিরা অংশগ্রহন করেন।