ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: হঠাৎ করে পোল্ট্রির ডিম, মুরগির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয় নিয়ে বাজার ও পরিবারে সবাই আলোচনা করছেন। গণমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এ দাম বৃদ্ধির পেছনে সংশ্লিষ্টরা একাধিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন। যেসব কারণে বাড়ছে ডিম, মুরগির দাম তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে এক ডজন ডিম কিনতে খরচ করতে হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। এক মাস পরে ফেব্রুয়ারি মাসে সেই ডিমের দাম বেড়ে কিনতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। এরকম দাম গত আগষ্ট মাসে হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছিলো।

একইভাবে পোল্ট্রির মুরগির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৩৫ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগির দাম এখন খুচরা বাজারে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। সোনালী মুরগির দামও অনেক বেড়েছে।

গত আগষ্ট মাসে ডিমের দাম নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন “বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ডিম আমদানি করা হবে।”

ডিমের দাম আবার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে যে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট তৈরি হয়েছে সেটার প্রভাব পড়েছে পোল্ট্রি খাদ্যের দামে।

তারা বলছেন, পোল্ট্রি খাদ্য তৈরিতে ভুট্টা, সয়ামিলসহ বিভিন্ন কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। আর এই পোল্ট্রি শিল্পের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই আমদানি নির্ভর। পোল্ট্রি খাদ্য, জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে, সে কারণে ডিম ও মুরগির দামও বেড়েছে।

পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি ডলারের দামের কারণে আমদানির খরচ বেড়েছে। এছাড়া, ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট থাকায় এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে খাদ্য আমদানি বাজারে সরবরাহে ঘাটতিও তৈরি হয়েছে।

এছাড়া পোল্ট্রি খাদ্যের চড়া দামের কারণে লোকসান দিয়ে ছোট অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে উৎপাদন এখন কম। ফলে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে মুরগির বাচ্চার দাম না পাওয়ায় দেশে মুরগি ও ডিমের বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, গত এক বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

খামারিরা বলছেন, ডিমের দাম বাড়লেও খামারিরা এর কোনও সুফল পাচ্ছে না। কারণ বিভিন্ন জায়গা বিভিন্ন আড়ত ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়। দেশের যে কয়টি জায়গায় দাম নির্ধারণ হয় সেটাকে কেন্দ্র করেই দেশব্যাপী ডিমের দাম ওঠানামা করে।

এই দাম বেঁধে দিলেও বাজারে তার প্রভাব পড়ে না, পোল্ট্রি খাদ্যের দাম পরিবহন খরচ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ডিমের দাম নির্ধারণ হয়। বাজারে যে চাহিদা এর বিপরীতে কম সরবরাহ হলেও ডিমের দাম বেড়ে যায়। সুতারাং উৎপাদন খরচ কমাতে না পারলে ডিমের দাম কমবে না।

ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ার দুটি কারণকে দায়ি করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মার্কিন ডলারের দামের কারণে পোলট্রি খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার বিপরীতে কম সরবরাহ।

অনেকেই বলছেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে সামাজিক অনুষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ে। এতে চাহিদা বেড়ে যায়। এ বছর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। এ কারণে দাম বৃদ্ধি পেতে পারে।

খাদ্যের দাম ২০% বেড়েছে: পোলট্রি খাদ্য তৈরিতে ভুট্টা, সয়ামিলসহ বিভিন্ন কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। খাদ্য উৎপাদনকারীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি ডলারের দামের কারণে আমদানির খরচ বেড়েছে।

আরেকটি সমস্যা হলো, ব্যাংকগুলোতে ডলার–সংকট থাকায় আমদানির ঋণপত্র খুলতে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গত মে মাসে দেশে মার্কিন ডলার ছিল ৮৬ টাকার আশপাশে। এখন তা ১০৬ টাকা পড়ছে।

খামারিরা বলছেন, ব্রয়লার মুরগির এক কেজি খাদ্যের দাম এখন ৬৮ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে। মাস তিনেক আগেও তা ৬০ থেকে ৬২ টাকা ছিল। বছর খানেক আগে ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা।