দিল্লিতে ঢোকার অপেক্ষায় সিংঘু সীমান্তে হাজার হাজার কৃষক। ছবি: গেটি ইমেজেস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভারতে হাজার হাজার কৃষক গত প্রায় চার-পাঁচদিন ধরে পাঞ্জাব, হরিয়ানা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে রাজধানী দিল্লির উত্তরপ্রান্তে এক বিশাল এলাকা দখল করেছে। সেইসাথে রাজধানীর ‘লাইফলাইন’ জাতীয় সড়ক ৪৪ ও দিল্লির একটা বিস্তীর্ণ অংশ কৃষক আন্দোলনে অচল হয়ে রয়েছে।

কয়েক মাসের রেশন নিয়ে, খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে শীতের রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের ট্রাক্টর ও ট্রলিতে করে তারা আন্দোলনে নামেন। এরমধ্যে দিল্লিতে অবস্থানরত হাজার হাজার কৃষক কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া আগাম আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাক্ষান করেন।

মূলত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আনা নতুন কৃষি আইনের প্রতিবাদে সরব পাঞ্জাব, হরিয়ানা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা। নতুন কৃষি আইনের প্রতিবাদে মিছিল করে এসে রাজধানী দিল্লিতে জমায়েত করেন কৃষকরা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গতকাল তার মাসিক রেডিও ভাষণে নতুন কৃষি আইনের পক্ষে জোরালো সওয়াল করার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠে। আন্দোলনরত একজন কৃষক গণমা্যেমকে বলেন “পাঞ্জাব থেকে লাঠি-জলকামান অনেক কিছু সহ্য করে আমরা এতদূর এসেছি। আর এখন সরকার বলছে আমাদের চুপচাপ গিয়ে বুরারি ময়দানে বসে পড়তে, যেটা কিছুতেই আমরা মানব না। তাহলে আমাদের এই আওয়াজ চাপা পড়ে যাবে।”

এই কৃষক আরো বলেন “আমরা চাই দিল্লির জল-দুধ-ফল-সব্জির সাপ্লাই লাইন বন্ধ করে দিতে, যাতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ে ও তারা আমাদের কথা শুনতে বাধ্য হয়।”

পাটিয়ালা থেকে আসা অমৃক সিং নামের আরেক কৃষক গণমাধ্যমকে বলেন, “সরকার যতক্ষণ না তিনটি কালা আইন বাতিল করছে এবং কৃষককে সহায়ক মূল্যের গ্যারান্টি দিয়ে একটি চতুর্থ আইন আনছে ততক্ষণ এই আন্দোলন চলবে।”

বস্তুত গতকালই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কৃষকরা যদি রাস্তা ছেড়ে দিয়ে দিল্লির বুরারি ময়দানে থিতু হন – তাহলে নির্ধারিত ৩রা ডিসেম্বরের আগেও সরকার আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। কিন্তু আজ রবিবার কিষাণ নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সে প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন, অন্যদিকে রাজধানীতে উত্তেজনা বাড়ছে।

অপরদিকে কৃষকদের আন্দোলনে ভোগান্তিতে পড়েন শহরবাসীরা। দিল্লির রোহিণীর বাসিন্দা এক তরুণী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “কৃষক আন্দোলনের নামে যেভাবে শহরের চাকরিজীবী বা সাধারণ মানুষ সবাই হেনস্থা হচ্ছেন তা মেনে নেওয়া যায় না।” আরেকজন জানান, তারা পিছু হঠবেন না এবং দরকারে পাঞ্জাবের গ্রাম থেকে নতুন বাহিনীও দিল্লি অভিমুখে রওনা দেবে।

ইতিমধ্যে দিল্লি-হরিয়ানার বিভিন্ন গুরদোয়ারা থেকেও আন্দোলনরত কৃষকদের লঙ্গর তৈরি করে বিনি পয়সায় খাওয়ানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। এরমধ্যে মন্তব্য করে কৃষকদের আরও চটিয়ে দিয়েছেন হরিয়ানার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টার। কিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনে খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত আছে।’

এদিকে বসে নেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মাসের শেষ রবিবার প্রধানমন্ত্রী মোদী যে ‘মন কি বাত’ ভাষণ দিয়ে থাকেন, তাতে তিনি আজ বলেন “পার্লামেন্ট অনেক ভেবেচিন্তেই কৃষি সংস্কারের লক্ষ্যে নতুন আইন এনেছে। তাতে কৃষকদের অনেক বাধা দূর হয়েছে, অতি অল্প সময়েই তারা এর লাভ পাচ্ছেন”

কিন্তু কৃষকদের আন্দোলন সরকারের আইনগুলোর বিরুদ্ধেই, তারা প্রধানমন্ত্রীর কথা মানতে নারাজ। দিল্লিতে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেওয়া অ্যাক্টিভিস্ট মেধা পাটকর বলেন, “সরকার তো দাবি করে তাদের সব সিদ্ধান্তই মানুষের পক্ষে। কিন্তু দেশের কিষাণ-মজদুররা সেই চালাকি এখন ধরে ফেলেছে, এবং তারা বুঝে গেছে সরকার শুধু বৃহৎ কর্পোরেটদেরই ধামাধরা।”

যে কারণে ভারতে হাজার হাজার কৃষকের আন্দোলন সংবাদের তথ্য বিবিসি থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ