পশু ক্রয় এবং নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন ধরণের পশু কিনলে নিশ্চিত হওয়া যায় এ পশু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে লাভবান হওয়া যাবে। এ ধরণের পশু চেনার কয়েকটি উপায় আছে। যে ধরণের পশু কিনলে লাভ হবে শতভাগ, কীভাবে চিনবেন! সে বিষয়ে লিখেছেন ডা. এম এ সবুর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এফ.ডি.আই.এল. মানিকগঞ্জ।

পশু ক্রয়ের ক্ষেত্রে পশুর বয়স ২-৩ বছরের মধ্যে হলে সহজে মোটাতাজা করা যায়। বয়স্ক গরু মোটাতাজাকরণের জন্য খুব বেশি উপযোগী নয়। গরু সাধারণত ষাড় হওয়া ভালো। ষাড় গরুর মাংসের মূল্য এবং চাহিদা বেশি।

গরু নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখবেন প্রাণীটির দেহের কাঠামো যেন একটু বড় হয়।

যেমন লম্বা এবং উচ্চতা এ দুটো বিষয়ই খেয়াল রাখতে হয়।

বড় আকারের একটি কংকালসার গরুর গায়ে বেশ মাংস উৎপন্ন করা যায়।

প্রাণী ক্রয়ের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন প্রাণীটির বাহ্যত কোনো সংক্রামক রোগ আছে কি নেই।

এ ক্ষেত্রে আমরা মূলত লক্ষ করতে বলি ‘ক্ষুরারোগ’ আছে কি নেই। কারণ ক্ষুরারোগ প্রাণীর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এ কারণে যে অল্প বয়স্ক রুগ্ন পশুতে ক্ষুরারোগ থাকলে তা পশুর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। সুতরাং তাপ দেখবেন, ক্ষুরার ক্ষত দেখবেন, প্রাণীটি অস্থির কিনা তা দেখবেন, চোখ লাল এবং ছলছল করছে কিনা সেটাও দেখবেন।

যদি এসব লক্ষণ দেখেন তবে বুঝবেন প্রাণীটির ক্ষুরারোগ থাকতে পারে। এরপর পশু পাতলা পায়খানা করছে, রক্ত আমাশয় আছে, পশু হাড্ডি কংকালসার এসব যতো সমস্যাই থাক এগুলো সবকিছু নিরাময় করে মোটাতাজাকরণকে লাভজনক করা যায়। মোটাতাজাকরণ কার্যক্রমটি একজন ভেটেরিনারি ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে করবেন। তিনি এসব সামান্য রোগব্যাধি নিরাময়ের ব্যবস্থা নেবেন।

পশু ক্রয় করার পর তার গোবর পরীক্ষা করান। দেখা যাবে সেখানে প্রচুর কৃমির ডিম পাওয়া যাবে, এছাড়া পশুটি লম্বা সময় পুষ্টিহীনতার কারণে তার পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম দুর্বল থাকতে পারে। দীর্ঘদিন পশু অপুষ্টিতে ভুগলে তার ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।

কৃষক ভাইদের প্রাথমিক ধারণা থাকার জন্য বলছি ভেটেরিনারি ডাক্তার সাধারণত কী কী করেন।

১. তিনি মল পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে কৃমির ওষুধ দেন;
২. পেটে কোনো জীবাণু সংক্রামণ থাকলে সেখানে শুধু পেটে অথবা পরিপাকতন্ত্রে কাজ করে এমন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করেন। এতে পাতলা পায়খানা চলে যায়;
৩. যদি আমাশয় থাকে, সেক্ষেত্রে মেট্রোনিডাজল গ্রুপের যে কোনো ভালো ওষুধ দিয়ে তা দূর করেন। খাদ্য হজমটি ভালোভাবে হলে প্রাণীর স্বাস্থ্য ভালো হতে বাধ্য।

সবাইকে মনে রাখতে হবে গবাদিপশু মোটাতাজা করতে ৪-৫ মাস সময় লাগে। হঠাৎ করে স্টেরয়েড খাইয়ে গরু মোটাতাজা করা যায়। তবে কাজটি অনৈতিক, নিষিদ্ধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। স্টেরয়েডের ব্যবহারের কারণে খামারেই গরুর মৃত্যু ঘটে এমন নজির প্রচুর আছে। কারণ স্টেরয়েড প্রাণীর স্বাভাবিক মেটাবলিজমকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংগ যেমন লিভার, লাং, হৃদপি- এসব স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় স্টেরয়েড খাওয়ানো গরু হাইপারটেনশনে বেশি মারা যায়।

এ ছাড়া স্টেরয়েড মানব দেহের জন্যও যথেষ্ট ক্ষতিকর। সুতরাং মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ার কোথাও স্টেরয়েডের প্রয়োজন হয় না। যদি তা স্বাভাবিক সময় এবং নিয়ম জেনে করা হয়। তবে মোটাতাজাকরণের সময় চিকিৎসকরা সহনীয় মাত্রায় ভিটামিন, মিনারেল ব্যবহার করেন। যা প্রাণীর জন্যও ক্ষতিকর নয়, মানুষের জন্যও ক্ষতিকর নয়। এ হচ্ছে সাধারণ রোগব্যাধির প্রতিকার। সংক্রামক রোগ আছে এমন প্রাণী ক্রয় করা যাবে না। দ্বিতীয়ত প্রাণী ক্রয়ের পর পর ক্ষুরা, তড়কা এবং গলাফুলা রোগের টিকা দেয়া বাঞ্ছনীয়।

যে ধরণের পশু কিনলে লাভ হবে শতভাগ, কীভাবে চিনবেন! লিখেছেন ডা. এম এ সবুর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এফ.ডি.আই.এল. মানিকগঞ্জ।