ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বারি মাল্টা-১ বাংলাদেশে উদ্ভাবিত এক প্রকার মাল্টা ফল। বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকা বারি মাল্টা- ১ এর চাষাবাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। সঠিক পদ্ধতিতে বারি মাল্টা-১ চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যায়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক যে পদ্ধতিতে বারি মাল্টা-১ চাষে অধিক লাভবান হওয়া যায়:

জলবায়ু ও মাটি: শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য উত্তম। বায়ুর আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত ফলের গুণাগুণকে প্রভাবিত করে। অতি বৃষ্টিতে ফল বেশি রসালো হয়। মাল্টা প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মে। তবে ছায়া পড়ে না এমন সুনিষ্কাশিত উর্বর, মধ্যম থেকে হালকা দো-আঁশ মাটি চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। মাটির অম্লত্ব ৫.৫ থেকে ৬.৫ হওয়া উত্তম।

আরও পড়ুন: যেভাবে চিচিঙ্গা চাষে শতভাগ সফলতা আসে

জাত:দেশি বিদেশি বিভিন্ন জাত রয়েছে। তবে এদেশে চাষ উপযোগী জাতের মধ্যে বারি মাল্টা-১ অন্যতম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এ জাতটি উচ্চফলনশীল। গাছের ডালপালা ছড়ানো এবং ঝোপানো থাকে।

কলম: বীজ ও অঙ্গজ উভয় পদ্ধতিতে মাল্টার বংশবিস্তার হয়। তবে মাতৃগুণ বজায় রাখা, দ্রুত ফল ধরা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং অধিক ফলন পেতে অঙ্গজ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। জোড় কলম (গ্রাফটিং) ও চোখ কলমের (বাডিং) মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা যায়।

রোপণ পদ্ধতি: মে থেকে অগাষ্ট মাস মাল্টা গাছের চারা/কলম লাগানোর উত্তম সময়। তবে বছরের অন্যান্য সময়ে পানি সেচের ব্যাবস্থা করা গেলে যে কোন সময় মাল্টার চারা/কলম লাগানো যাবে। চারা রোপণের জন্য ৭৫ সেমি দৈঘ্যে, ৭৫ সেমি’র প্রস্থ এবং ৭৫ সেমি গভীরতার ৩-৪ মিটার দূরত্বে গর্ত করে নিতে হবে।

গর্ত করার পর, জৈব সার ১৫ কেজি, ছাই ৪-৫ কেজি, টিএসপি সার ২৫০ গ্রাম, এমওপি সার ২৫০ গ্রাম এবং চুন ২৫০ গ্রাম গর্তের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ১৫-২০ দিন মাটি দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে। ১৫ দিন পর গর্তের মাটি আবার কোদাল দিয়ে আলগা করে সংগ্রহীত চারা গর্তে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর প্রয়োজন মত পানি দিতে হবে এবং শক্ত খুঁটি গেড়ে তার সাথে বেঁধে দিতে হবে। যাতে করে সদ্যরোপণকৃত চারা বাতাসে হেলে না পড়ে।

সার ব্যবস্থাপনা: গাছের বৃদ্ধি এবং কাক্সিক্ষত ফল ধারণের জন্য বছরে তিন বার সার দেয়া দরকার। বর্ষার আগে মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য চৈত্রে এবং মধ্য বৈশাখ হতে মধ্য জ্যৈষ্ঠে। বর্ষার পরে মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য আশ্বিন মাসে। দুপুরবেলায় মাটিতে গাছের ছায়া যতটুকু পড়ে ততোটুকু স্থানে ৬ ইঞ্চি গভীর করে ভালোভাবে কুপিয়ে সার দেয়া উত্তম। অথবা গাছের গোড়া হতে ১ ফুট বাদ দিয়ে এরপর ৪ ফুট পরিমাণ জমি বৃত্তাকারে অনুরূপভাবে কুপিয়ে দিলেও হবে। সার প্রয়োগের পর সেচ দিতে হয়। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাবারের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। তাই বয়সভেদে যে পরিমাণ জৈব ও অজৈব সার দেয়া প্রয়োজন তা হলো-

পরিচর্যা: আগাছা খাবারে ভাগ বসায়। ক্ষতিকর পোকার আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার হয়। তাই বাগান সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। গাছের গোড়া হতে একটু দূরে শুকনো লতাপাতা, খড়, কুটা বিছিয়ে মালচিংয়ের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। এতে আগাছা জন্মাবে না। মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকবে।

ব্যাগিং: ব্যাগিং ফলের জন্য আশীর্বাদ। চীনে উৎপাদিত এ ব্যাগ এখন আমাদের দেশেও পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটির মূল্য আড়াই থেকে তিন টাকা। ব্যাগিং করলে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ হয় না। তাই ফল পরিপক্বতার আগেই ছত্রাকনাশক (টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলিলিটার/১ লিটার) প্রয়োগ করে ব্যাগিং করতে হবে।

রোগ ব্যবস্থাপনা: মাল্টা ফসলে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় এবং রোগের আক্রমণ হতে পারে।এজন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে রোগ দমন ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

আরও পড়ুন: যেভাবে পান চাষে অধিক লাভবান হবেন

ফল সংগ্রহ: পরিপক্ব অবস্থায় মাল্টা সংগ্রহ করতে হয়। সংগ্রহের সময় ফল যাতে আঘাতপ্রাপ্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ফলের আকার অনুযায়ী গ্রেডিং করা উত্তম। পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে প্যাকেট করে বাজারজাত করতে হবে।

যে পদ্ধতিতে বারি মাল্টা-১ চাষে অধিক লাভবান হবেন শিরোনামে লেখাটি লিখেছেন নাহিদ বিন রফিক, টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস, বরিশাল।  লেখাটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার / এমবি