মো. আব্দুল বাতেন, রাজশাহী প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মুকুল থেকে গুটি। গুটি থেকে আম। বাড়ছে অতিদ্রুত। এক মাসের মধ্যে বাজারে চলে আসবে গুটি আম। আমের শহর খ্যাত রাজশাহীতে মিলবে নানা জাতের আম। এবার এই আমের উৎপাদনও গত বারের চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন উপর্যুপরি যদি শিলা বৃষ্টি ও কাল বৈশাখী ঝড় না হয় তাহলে আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি। এ পরিমাণ জমিতেই আমের চাষ করা হয়েছে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি। আর এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন। তবে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আম উৎপাদন হবে বলে মনে করছেন চাষী ও কৃষি কর্মকর্তারা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালী এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। যদি আম পরিপক্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকৃতিতে উপর্যুপরি শিলা বৃষ্টি ও কাল বৈশাখী হানা না দেয় তাহলে রাজশাহীতে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

তিনি আরো জানান, বর্তমান সময়ে গাছে যে পরিমানে আম আছে তাতে একটি গাছে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। এতো আম গাছে থাকালে আকারে ছোট হবে। এছাড়াও আমের ভার গাছ সহ্য করতে পারবে না।

কৃষিবিদ দেব দুলাল ঢালী জানান, আম বড় হতে হতে এক অথবা দুইটি কালবৈশাখী ঝড় হলেও আমের বিশেষ ক্ষতি হবে। ঝড়ে যে পরিমানে আম ঝরবে তা একদিক দিয়ে চাষীদের জন্য লাভের কারণ হবে। দুই একটি ঝড়ে যে পরিমানে আম ঝরবে তাতে গাছে আম পাতলা হবে ও ফলনও বাড়বে। তবে অতিরিক্ত ঝড় আমের জন্য ক্ষতির কারণ হবে পারে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষি বিভাগের পরামর্শে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষীরা। গুটিতেই স্বপ্ন দেখছেন রাজশাহীর আম চাষীরা। গাছে মুকুল আসার আগ থেকে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে ব্যবহার করা হয়েছে বালাইনাশক। এর ফলে আগাম আসা মুকুলের গুটি বেশ বড় হয়ে উঠেছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, এ অঞ্চলে প্রতিবছর প্রায় আড়াইশ’ জাতের আম উৎপন্ন হয়। এগুলোর মধ্যে এ বছর ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাতি, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি, আশ্বিনা, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লখনা ও মোহনভোগ জাতের আমের চাষ বেশি হয়েছে। রাজশাহীর ৯টি উপজেলায়ই আম চাষ হয়।

তবে সবচেয়ে বেশি হয় বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট ও গোদাগাড়ীতে। ফলন ও লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা আম চাষের দিকে ঝুঁকছেন। অনেক চাষী অন্য ফসলের সঙ্গেও আমের আবাদ করছেন। এর ফলে আমের আবাদ বাড়ছে।

এদিকে আমের জেলা খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে গাছ থেকে আম সংগ্রহের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। বিষমুক্ত আম উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে জেলাব্যাপী আম ক্যালেন্ডার প্রণয়ন বিষয়ক সভায় এ সময় সূচি প্রকাশ হয়েছে।

জেলায় এ বছর প্রণয়ন করা আম ক্যালেন্ডারে সকল প্রকার গুটিআম ২০ মে, গোপালভোগ ২৫ মে, হিমসাগর ও ক্ষিরসাপাতা ২৮ মে, লক্ষনভোগ ১ জুন, ল্যাংড়া ও বোম্বায় ৫ জুন, ফজলী ও সুরমা ফজলী ১৫ জুন, আম্রপালি ১৫ জুন, আশ্বিনা ১ জুলাই বাজারজাত করণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।