ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীতে আসন্ন কোরবানির পশু বিক্রির শঙ্কায় রয়েছে শত শত খামারি। করোনায় ক্রেতার অভাব, সেইসাথে কোরবানির পশু বিক্রির হাটগুলো চালু থাকবে কিনা সন্দেহ। হাজার হাজার গরু নিয়ে এসব খামারিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।এ সংকট মোকাবেলায় রাজশাহীতে কোরবানির পশু অনলাইনে বেঁচা-কেনার পরামর্শ প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের।

সারা বছরের এসব গরু বিক্রি করতে না পারলে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়বেন। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার ঝুঁকি এড়াতে তারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনলাইনে কেনাবেচা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে বিক্রেতা যেমন ক্রেতা খুঁজে পাবেন তেমনি ক্রেতারাও হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনার ঝামেলা থেকে বাঁচবেন। প্রাণিসম্পদ দফতর রাজশাহীর খামারিদের অনলাইন ডাটাবেস করেছে। সেখান থেকে যে কেউ ঠিকানা নিয়ে কোরবানির গরু কিনতে পারবেন।

রাজশাহীর খামারিরা জানিয়েছেন, গত কয়েকটি কোরবানির ঈদের সময় রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত পথে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় গরু আসার কারণে তারা খামারে পালন করা গরুর ভালো দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কিন্তু গত এক বছর ধরে রাজশাহী অঞ্চলের সীমান্ত পথে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ রয়েছে সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে। ফলে এবার খামারিরা গরুর ভালো দাম পাওয়ার আশা করেছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপে তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

রাজশাহী প্রাণিসম্পদ দফতরের তথ্যমতে, রাজশাহীতে গত বছর ২ লাখ ৬০ হাজার কোরবানি পশুর চাহিদা ছিল। এ বছরও রাজশাহী জেলার চাহিদা প্রায় সমান। রাজশাহী জেলার ১৩ হাজার ৭০০ খামারে কোরবানির জন্য ৩ লাখ ৭০ হাজার গবাদি পশু মজুদ আছে। জেলার চাহিদা মিটিয়েও লক্ষাধিক পশু জেলার বাইরে চালান করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু করোনাকালে সেটা সম্ভব হবে কিনা তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আবার উত্তরবঙ্গে বৃহত্তম পশুরহাট রাজশাহী সিটি হাট কোরবানির দুই মাস আগে থেকেই কেনাবেচায় সরগরম থাকে। কিন্তু এখনও প্রশাসন এ হাটে গবাদিপশু কেনাবেচার অনুমতি প্রদান করেনি। রাজশাহীর আশপাশের পশুর হাটগুলোও এখন পর্যন্ত চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে খামারিরা বিপুলসংখ্যক গরু নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

রাজশাহীর খামারি সেতাবুর রহমান জানান, করোনার কারণে পশু খাদ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত ৪ মাস ধরে তারা বেশি দামে গোখাদ্য কিনে পশুগুলোকে খাওয়াচ্ছেন। কিন্তু ঈদ আসন্ন হলেও গরু বিক্রি অনিশ্চিত থাকায় তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। রাজশাহীর বড়গাছির খামারি জোবদুল হক জানান, তারা প্রতিবছর খামারে পালিত গরু ঢাকার গাবতলী হাটে বিক্রি করেন। ঢাকা ছাড়াও গাজীপুর ও নোয়াখালীতেও গরু চালান করে থাকেন। কিন্তু এ বছর সেসব হাট লাগবে কিনা তাও জানতে পারছেন না। খামারে পালিত ৬৭টি গরু কিভাবে বিক্রি করবেন সেটাই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে তাদের। এসব গরু পালনে ১০ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণও আছে। ভালো দামে বিক্রি করতে না পারলে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রিশিকুল এলাকার সাফি অ্যাগ্রো খামারের মালিক সাফিউল আলম বলেন, করোনায় সব খাতে সহায়তা দিচ্ছে সরকার। কিন্তু খামারিদের জন্য কিছুই নেই। প্রাণিসম্পদ দফতর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। বাজারে পশু খাদ্যের দাম চড়া। এখন শুধু খাদ্য জোটাতে না পেরে তারা কম দামে হলেও গরু বিক্রি করতে চান। কিছু টাকা উঠে এলেও তা দিয়ে কোনো রকমে বাঁচবেন। করোনার কারণে গরু ঠিকমতো হাটে তোলা যাবে কিনা, আবার ক্রেতা পাওয়া যাবে কিনা- তা নিয়েই তারা বেশি চিন্তায় আছেন। জেলার তানোরের খামারি তমরুল সেখ বলেন, গরু যে ঢাকা-চট্টগ্রাম বা অন্য কোনো জেলায় নিয়ে যাব সেখানে ট্রাক বা যানবাহন পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। করোনার ভয়ে ট্রাকচালকরা ঢাকায় যেতে চাইছেন না। এটাও একটা সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।

রাজশাহীতে মজুদ বিপুলসংখ্যক কোরবানির পশু নিয়ে খামারিদের অনিশ্চয়তা সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অন্তিম কুমার সরকার বলেন, জেলায় যে পরিমাণ গবাদি পশু রয়েছে তাতে কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র চালান করা যাবে। তবে করোনার প্রভাবে গোখাদ্যের দাম বাড়ায় এবার খামারিদের লাভ কম হবে। বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকবে না। কারণ সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুরহাট চালু রাখতে নির্দেশ দিয়েছে।

তবে এর পাশাপাশি আমরা খামারিদের অনলাইনেও পশু বিক্রির পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের প্রতিটি জেলা ও উপজেলাতে এ সংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা ক্রেতাদের রাজশাহীর খামারিদের ঠিকানা দিয়ে দেব। এতে বিক্রেতা যেমন ক্রেতা খুঁজে পাবেন তেমনি ক্রেতারাও হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনার ঝামেলা থেকে বাঁচবেন। সময়ের কারণে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনায় প্রাণিসম্পদ দফতর সহায়তা করছে বলে জানান তিনি।

রাজশাহীতে কোরবানির পশু অনলাইনে বেঁচা-কেনার পরামর্শ জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের শিরোনামে সংবাদের তথ্য যুগান্তর থেকে নেওয়া হয়েছে।