মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত রাজশাহীর ৮ হাজার ২৪১ জন খামারি পেলেন ৯ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার ৮৭৫ টাকার আর্থিক প্রণোদনা। জেলার ৯টি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত ডেইরি ও পোল্ট্রি খামারিরা এ সহায়তা পাচ্ছেন।

গতকাল ১৭ ফেব্রুয়ারি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (নগদ, বিকাশ) মাধ্যমে এ অর্থ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) থেকে জরুরি কার্যক্রমের আওতায় খামারিদের এ আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে সরকার। করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত গরু, লেয়ার, সোনালী, ব্রয়লার ও হাঁস খামারিদের আর্থিক ক্ষতি পোষাতেই এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

আরোও পড়ুন: কৌশলেই সফল খামারি প্রবাস ফেরত বাবলু

জেলা প্রাণিসম্পদ সূত্রে জানা গেছে, প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের মধ্যে জেলার পবা উপজেলার ৬৩৬ জন, বাঘা উপজেলার ৯৪১ জন, চারঘাট উপজেলার ৪২৭ জন, দুর্গাপুর উপজেলার ৪৬২ জন, গোদাগাড়ী উপজেলার ৫৪৫ জন, মোহনপুর উপজেলার ৮৯০ জন, পুঠিয়া উপজেলার ৫৭৮ জন, তানোর উপজেলার ৫৫৯ জন এবং সবচেয়ে বেশি পবা উপজেলার ৩ হাজার ২০৩ জন পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারি এই প্রণোদনা তালিকার অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন। যারা প্রত্যেকেই এই অর্থ পাবেন।

৯টি উপজেলায় মোট ৫ হাজার ২০২টি ডেইরি খামারি, ১ হাজার ১৩২ জন সোনালী মুরগি খামারি, ৭২১ জন ব্রয়লার মুরগি খামারি, ৮৯২ জন লেয়ার মুরগি খামারি এবং ১০৯ টি হাঁসের খামারি রয়েছে। এরমধ্যে ডেইরি ক্যাটাগরিতে সি-১ (২-৫ টি গরু বিশিষ্ট খামার) রয়েছে ৩ হাজার ৯৬৫ জন, সি-২ (৬-৯টি গরু) খামারি রয়েছে ১ হাজার ১১৪ জন এবং সি-৩ (১০-২০ টি গরু) খামারি রয়েছে ১২৩ জন। জেলায় ডেইরি খামার রয়েছে সর্বাধিক।

প্রথম পর্যায়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৬ জন খামারিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে মোট ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ ৪১ হাজার ২৫০ টাকা আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। খামারিদের আর্থিক পরিমাণ খামারের ক্যাটাগরি/সাব ক্যাটাগরি অনুযায়ী পাবেন।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডেইরি (২-৫টি গরু) ১০ হাজার, ডেইরি (৬-৯টি গরু) ১৫ হাজার, ডেইরি (১০-২০ টি গরু) ২০ হাজার, সোনালী মুরগি (১০০-৫০০টি) ৪ হাজার ৫’শ টাকা, সোনালী (৫০১-১হাজার) ৬ হাজার ৭৫০ টাকা, সোনালী (১হাজার- বেশি) ৯ হাজার, ব্রয়লার (৫’শ -১ হাজার) ১১ হাজার ২৫০ টাকা, ব্রয়লার (১ হাজার-২ হাজার) ১৬ হাজার ৮৭৫ টাকা, ব্রয়লার (২ হাজারের বেশি) ২২ হাজার ৫’শ টাকা, লেয়ার (২’শ -৫’শ) ১১ হাজার ২৫০, লেয়ার (৫’শ- ১ হাজার) ১৬ হাজার ৮৭৫ টাকা, লেয়ার (১ হাজারের বেশি) ২২ হাজার ৫০০ টাকা পাবেন। সেইসাথে হাঁসের খামার (১’শ -৩’শ) ৩ হাজার ৩৭৫ টাকা, হাঁস (১’শ -৩’শ) ৬ হাজার ৭৫০ টাকা, হাঁস ৫০০ এর বেশি থাকলে সেই খামারি পাবেন ১১ হাজার ২৫০ টাকা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহা. ইসমাইল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন হয়েছে। ৩ দিন এই টাকা বিতরণ চলবে। এরমধ্যে যদি কোন খামারি টাকা না পেয়ে থাকেন তাহলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন। অ্যাকাউন্টে ভুল থাকলে তা সংশোধন করা হবে। ভয়ের কোন কারণ নাই। তালিকাভুক্ত সকল পোল্ট্রি ও ডেইরি খামরি এই প্রণোদনার টাকা পাবেন।

উল্লেখ্য, দেশের ৪৬৬টি উপজেলা থেকে যাচাই করে প্রাণিসম্পদ খাতের ৪ লাখ ৭ হাজার ৪০২ জন খামারিকে (ডেইরি, লেয়ার মুরগী, পোল্ট্রি মুরগি, সোনালি মুরগি, ব্রয়লার মুরগি ও হাঁস খামারি) ১৫টি ক্যাটাগরিতে ৪৬৮ কোটি ৮৬ লাখ ৪১ হাজার ২৫০ টাকা এবং ৭৫টি উপজেলা থেকে যাচাই করে মৎস্য খাতের ৭৮ হাজার ৭৪ জন খামারিকে (মৎস্য চাষি, চিংড়ি চাষি ও কাঁকড়া/কুঁচিয়া সংগ্রাহক) সাতটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ খাতের খামারিদের মধ্যে ৩ লাখ ১ হাজার ৩৫৩ জন ডেইরি খামারি, ৯৭ হাজার ৮২৩ জন মুরগি খামারি এবং ৮ হাজার ২২৬ জন হাঁস খামারিকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের মোট ডেইরি খামারির ৩০ শতাংশ এবং পোল্ট্রি খামারির প্রায় ৮০ শতাংশকে সরকারের এ আর্থিক সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ