নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাজশাহীতে লাল লেয়ার মুরগির ডিম প্রতি পিস ৯ টাকায় বিক্রি হলেও হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকায়। আর দেশী মুরগির ডিম হালি ৪৫ টাকা। অন্যদিকে হাঁসের ডিম হালি ৫৬ টাকা ও ডজন ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও এরআগে ৪৮ টাকা হালির বেশি দামে হাঁসের ডিম বিক্রি হয়নি।

বেড়েছে গরীবের মাংস নামে পরিচিত ডালের দাম। সেইসাথে মাংসের পরিবর্তে পুষ্টির যোগানদাতা ডিমের দাম যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, দিনমজুর মানুষের বড় অংশের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ডিম। শরীরে প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্যের ঘাটতি মেটাতে মাছ ও মাংসের পরিবর্তে ডিম খাচ্ছিলেন, এখন সেই ডিমের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে।

পড়তে পারেন: ডিমের দামে হতাশ খামারিরা, উঠছেনা উৎপাদন খরচ

শুক্রবার (৪ মার্চ) রাজশাহীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, সাহেববাজার মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজার ও লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব জায়গাতেই ডিমের দাম একই। রাজশাহীতে ডিম আসে মূলত আশেপাশের জেলা থেকে। নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ জেলা রাজশাহীর ডিমের মূল যোগানদাতা। নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জে ডিমের দাম সবসময় কম থাকায় সেখান থেকেই আসে বেশি ডিম। তবে, কারসাজির কারণেই ডিমের প্রতিপিসে ২ টাকা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রাজশাহীর স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রউফ এসেছিলেন এক পাতা (৩০ ডিম রাখা প্লাস্টিকের পাত্র) ডিম কিনতে। ডিমের দাম শুনে কিনলেন ১৫ টি ডিম। রউফ বলেন, ডিমের দাম ৬-৭ টাকা হলে সবচেয়ে ভালো হয়। এখন মুরগির মাংস ১৫০ টাকা, গরুর মাংস ৬০০ টাকা আবার খাশির মাংসের কথা জিজ্ঞেস করলাম ৯০০ টাকা। তো ভাবলাম ৩০ টা ডিম কিনে নিই। তেল, এককেজি মাছ কিনে ৫০০ টাকা উধাও। কিছু করার নাই বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন এই ক্রেতা।

পড়তে পারেন: কমেছে পেঁয়াজ ব্রয়লার মুরগির দাম, আবার বাড়লো চাল-তেলের

ডিমের দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহীর সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া এলাকার ডিম ব্যবসায়ী মিলন হোসেন বলেন, ডিমের যা দাম আছে তাতে কিছুটা কমতে পারে। আবার নাও কমতে পারে; বলা যায় না পোল্ট্রি সেক্টরের কথা! হটাৎ আমদানি বেড়ে গেলে দাম কমে যায়। আবার বাজার টান পড়লে দাম বাড়ে। এটা নিশ্চিত খামারিরা কিছুটা লাভ পেয়েছে। বর্তমান দাম থাকলে তারা ভালো থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু ভোক্তাদের অসন্তোস বাড়ছে।

কথা হয় পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তা মুজিবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, কঠিন শীতের সময় মুরগির রোগ-বালাই বেশি হয় । মুরগি মারা গিয়ে ডিম দেওয়া পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা কমে গেছে। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে মুরগি বিক্রি করে দিয়েছে। ৭ টাকা পিস খামারিদের কাছে কিনে হাতবদলের কারণে ৯ টাকা থেকে ১০ টাকা পড়ছে ভোক্তাদের কাছে। এ দায় তো আর আমরা নিবনা। তাছাড়া, ১৮’শ টাকার খাদ্যের বস্তা এখন ২৫’শ টাকা। সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই। ডিমের দাম বাড়াও যৌক্তিক!

পড়তে পারেন: মুরগিতে উঠানামা, থমকে আছে ডিমের দাম

বাজারের ডিম ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, ডিমের দাম বেড়েছে। কাঁচাবাজারের ঠিক নাই। মাল (ডিম) একটু টান পড়লে দাম বাড়ে আবার ক্রেতা কমে গেলে বা চাহিদা না থাকলে দাম কমে যায়। প্রতিহালি (৪টি) লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকায়। সাদা ডিম ৩২ টাকা ও হাঁসের ডিম ৫৬ টাকা হালি দরে বিক্রি করছি।

ডিমের দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, শীতে বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মুরগি মারা গেছে। ডিমের দাম এবার ৩৬ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে অনেক ডিমপাড়া লেয়ার খামারি মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। আর হাতবদলের কারণে ডিমের দাম বাড়ছে। খামার থেকে সংগ্রহ করেন একজন, সেখান থেকে ডিলারের কাছে আসতে দাম বাড়ে প্রতিপিসে ১ টাকা। আবার ডিলার নিজে নেন ৫০ থেকে ৬০ পয়সা। বাঁকি খুচরা যারা যা দামে বিক্রি করতে পারেন। মোটে ৭ টাকার ডিম হয় ৯ থেকে ১০ টাকা।

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডিমের ভোগ ৭ দশমিক ২ গ্রাম থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ গ্রাম বেড়েছে।

অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের উৎপাদনের তথ্য বলছে, দেশে ২০১০ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ৬০০ কোটি পিস, যা এখন ১ হাজার ৭৩৬ কোটিতে পৌঁছেছে। এক দশকে উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বেড়েছে। দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। পৃথক হিসাবে, কেবল মুরগির ডিম উৎপাদন হয় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি। তবে, হাঁসের ডিমের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ