নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজির দাম কমলেও বাড়ছে চালের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৩-৪ টাকা। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে পুরনো ধানের দাম বেড়েছে। বাধ্য হয়েই তাদের এইসব চালের দাম বাড়াতে হয়েছে। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের চালের দাম বাড়নোতে হাত নেই। সবকিছু হয় অদৃশ্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। সরকার সবকিছু মনিটরিং করছে ঠিকই কিন্তু কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে চালকল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কথার ভিন্নতা পাওয়া যাচ্ছে। একের দোষ অপরের ঘাড়ে চাপাতেই ব্যস্ত এ দুটি মহল।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত দাম পাবার আশায় চাল মজুদ করে রাখছেন মিল মালিকরা। চালের দাম বাড়ানোর নেপথ্যে একটা অদৃশ্য সিন্ডিকেট কাজ করছে। জনগণকে জিম্মি করে এক শ্রেণীর অসাধু মিল মালিকরা মুনাফা করতে চায়।

অপরদিকে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ মিল মালিকরা। তারা বলছেন, করোনায় অনেক মিল বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া ধানের দাম অন্যান্য দু-পাঁচ বছরের চেয়ে বেশি। বেশি দামে ধান কেনার কারনে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। তাছাড়া মিল মালিকদের অবৈধভাবে চাল গুদামজাত করার কোন সুযোগ নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিল মালিক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত চাল আমদানি করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া সামনে আরও চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হবে বলে সরকার জানিয়েছে। আসলে সরষে ফুলেই ভুত লুকিয়ে আছে। দেশে যে পরিমান ধান উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশে চাল আমদানির মানে হয় না। বরং আমরা রফতানি করতে পারি। গত নবেম্বর মাসের শুরুতে চালের দাম বেড়ে গেলে বিভিন্ন জায়গায় চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছিল। সেই সময় দাম কমেছে তাহলে আবার কেন দাম বাড়ছে? সরকার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জনগণকে সঁপে দিয়েছে। কোন তদারকি নেই, বাজার মনিটরিং নেই।’

নগরের মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারের চাল ব্যবসায়ী সুশীল কুমার এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন,‘ চালের দাম আরোও বাড়বে। আমরা আড়তে গিয়ে চাল পাচ্ছি না। ধানের দাম বাড়ার কারনে চালের দাম বাড়তি। সরকার চাল আমদানি করবে বলছে কিন্তু সেই চাল সাধারণ জনগণ পাবে বলে মনে হয় না। মানুষ কমদামী হাইব্রিড চালের ভাত খায় না।’

তিনি আরো বলেন, ফের বাড়ছে চালের দাম। এক সপ্তাহ আগের চেয়ে বর্তমানে প্রতিকেজি চালে বেড়েছে ৪-৫ টাকা। মিনিকেট চাল ৩ হাজার ৩০০ টাকা বস্তা থাকলেও তা এখন ৪ হাজার ২০০ টাকা। আঠাস ৫২ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫-৬৮ টাকা, জিরাশাইল ৪ টাকা বেড়ে ৫৬ টাকা হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য চালের কেজিতে বেড়েছে ১-২ টাকা। বাজারে বাসমতি ৬৩ টাকা, পায়জাম ৬০ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ টাকা, কাটারিভোগ সিদ্ধ ৭৫ টাকা, কাজল লতা ৬০ টাকা, কারজিরা ৯০ টাকা, চিনিগুঁড়া ৯৫-১০০ টাকা, রাধুনী ৭০ টাকা, কাটারি আতপ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বাজারে উধাও মোটা স্বর্ণা ও চায়না ইরি চাল। দু-এক দোকানে দেখা মিললেও ৪৫-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু চালকল মালিক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি থাকতে পাওে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

তাঁদের মতে, চালের মোকাম ও মিলগুলোতে কারসাজি করে চালের দাম নির্ধারণ করা হয়। খুচরা ব্যবসায়ীদের পকেটে লাভের টাকা আসে না। যা যায় সিন্ডিকেট আর পাইকারি ব্যবসায়ীদের পকেটে। অল্প দাম থাকলে খুচরা ব্যবসায়ীদের বেশি সুবিধা হয়।

এদিকে চালের দাম বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ জনগণ। তাঁদের দাবি, চালের বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উচিত শীঘ্রই একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করা। মিল মালিকদের সঙ্গে বসে যদি সুরাহা না করা যায় তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ