নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনা ও বন্যা পরিস্থিতিতে গত ২১ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় ভোক্তা পর্যায়ে আলুর খুচরামূল্য নির্ধারণ করা হয় কেজি ৩৫ টাকা। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু। সেইসাথে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

খুচরা আলু বিক্রেতারা বলছেন, ‘৩৮ টাকা কিনে ৪০ টাকা বিক্রি। খুব বেশি লাভ নেই। অন্যান্য সবজির সাথে বিক্রি করতে হয় তাই বিক্রি করছি।’

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকা এবং কোল্ডস্টোরেজে ২৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ৫ দিন আগে ১৯ অক্টোবর সরকার ঘোষিত নির্ধারিত দামে আলু বেচতে রাজশাহীর কোল্ড স্টোর মালিকদের ৭ দিন সময় বেঁধে দেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।

এরপর কিছুদিন আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হয়। বর্তমানে আবারো কেজিতে ৫ টাকা বৃদ্ধিতে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। কিছুদিন প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও ত াআবারো ৮০ টাকায় পৌঁছে গেছে। অপরদিকে সপ্তাহজুড়ে অপরিবর্তিত রয়েছে লাউ, কুমড়া, পেঁপে, পটল, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির দাম।

আজ শুক্রবার (৬ নভেম্বর ২০২০) নগরীর সাহেববাজার ও মাস্টারপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি মানভেদে ৭০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত মাসের( অক্টোবর) শুরুতে হঠাৎ করেই আলুর দাম বেড়ে যায়। ১৮-২০ টাকার আলু এক লাফে ৫০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয়। গত ১৪ অক্টোবর প্রথম দফা আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তিন পর্যায়ে এই দাম নির্ধারণ করা হয়। কেজিপ্রতি খুচরা পর্যায়ে ৩০, পাইকারিতে ২৫ ও হিমাগার থেকে ২৩ টাকা।

আলু ব্যবসায়ীরা সরকারি সিদ্ধান্ত মোটেই গ্রাহ্য না করে সিন্ডিকেটের সাহায্যে ইচ্ছামত দাম বৃদ্ধি করতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে গত ২১ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় আবারো আলুর দাম নির্ধারণ করে সরকার। ভোক্তা পর্যায়ে কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে খুচরামূল্য নির্ধারণ করা হয় কেজি ৩৫ টাকা। সেই ক্ষেত্রে পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকা এবং কোল্ডস্টোরেজে ২৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়।

রাজশাহীতে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু। এ বিষয়ে খাত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘আলুর বাজার মনিটরিং কার্যক্রম করলেও কোন কাজ দেবে না। বাজারে অন্যান্য সবজির দাম বেশি। শুধু আলুর দাম বেশি নয়। অন্যান্য সবজির দাম কমলে আলুর দাম আপনা-আপনি কমে যাবে। ছোট ব্যবসায়ীদের ধরলে তারা ক্রেতার রশিদ দেখায়। ৩৮ টাকা দামে আলু কিনে ৪০ টাকা বিক্রি করছে তারা। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।’

এদিকে বাজারে প্রতিকেজি বেগুন- কাটা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, সিম ১৪০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, ফুলকপি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া ৩৫ টাকা, হাইব্রিড শসা-দেশি শসা ৪০-৫০ টাকা, কাকরোল ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, কচু ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, সবুজ শাক ৪০ টাকা, কলমি শাক ২০ টাকা, লাল শাক ৪০ টাকা, পালং শাক ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পুুুুঁইশাক ৩০ টাকা, মুলা ৫৫-৬০ টাকা, ডুমুর ৩০ টাকা, ঝিংগা ৬০ টাকা, কলা ৩০ টাকা হালি, চাউল কুমড়া ৪০ টাকা পিস ও লাউ ৪০ টাকা পিস।

এছাড়া কাঁচামরিচ ১৬০ টাকা, রসুন ১০০ টাকা, দেশি রসুন ১৪০ টাকা, বার্মা আদা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, দেশি আদা ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মাছের মধ্যে গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা কেজি, ছোট চিংড়ি ৪০০ টাকা কেজি, পাবদা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, গুচি ৮০০ টাকা কেজি, রুই ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি, আইর ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজি, কই ৪০০ টাকা কেজি , দেশি কই ১ হাজার কেজি, কাতল ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি, দেশি পাঙ্গাস ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, নদীর পাঙ্গাস ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি, চিতল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

চালের মধ্যে মিনিকেট ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা কেজি, আঠাশ চাল ৫২ টাকা কেজি, বাসমতি চাল ৬০ টাকা কেজি, নাজিরশাল ৬০ টাকা কেজি, চিনিগুড়া চাল ৯০ টাকা কেজি ও কালোজিরা চাল ৮৫ টাকা কেজি।

রাজশাহীতে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু-পেঁয়াজ। কবে নাগাদ আলু-পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি দাম কম হবে জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শামসুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাজারে নতুন আলু-পেঁয়াজ আসবে। রাজশাহীর আলু আসতে দেরি হলেও নীলফামারি, কুড়িগ্রাম ঐসব অঞ্চলের আলু আসতে শুরু করবে। আশা করা যায় নতুন সবজি এবং আলু-পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম কমে যাবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ