মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর দূর্গাপুরে সরকারি প্রণোদনায় ‘সমালয়ে চাষাবাদ’ (Synchronize) প্রকল্পের আওতায় রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ১৫০ বিঘায় বোরো ধান রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দুর্গাপুর উপজেলার সিংগা গ্রামের আইপিএম কৃষক ক্লাবের ৪৫ জন কৃষকের ১৫০ বিঘা বোরো ধানের সমালয়ে চাষাবাদ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ধানের বীজতলা তৈরি, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে চারা রোপণ ও কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কর্তন পর্যন্ত সহায়তা দিবে কৃষি বিভাগ। এজন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ রয়েছে ১৪ লাখ টাকা।

কৃষিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে উন্নত ফসল ব্যবস্থাপনার দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ সরকার। সেই ধারাবাহিতকতায় সমালয়ে চাষাবাদ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উৎপাদন খরচ কমানো, কর্তনোত্তার অপচয় রোধ, কায়িক শ্রম লাঘব, শ্রমিকের অভাব পূরণ ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতেই এই বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৬ হাজার ২৬৫ হেক্টর। আর দুর্গাপুর উপজেলায় সেটা ৫ হাজার ১৯০ হেক্টর। ফলে মৌসুমের শুরু থেকেই বোরো চাষের জন্য বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষকরা।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান দেখভাল করছেন নিজস্ব জোনের বোরো কর্মকান্ড। তিনি ছাড়াও কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে মাঠে ঘুরে বোরো ধান চাষে উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষ, বীজ শোধন, আদর্শ বীজতলা, তীব্র শৈত্যপ্রবাহে বোরো বীজতলার যত্ন ইত্যাদি গ্রহণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন।

দুর্গাপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বোরো ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধান কর্তন পর্যন্ত যন্ত্র ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে। ৪৫ জন কৃষকের দেঁড়শ বিঘা জমিতে । কৃষি অফিসের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ও ৪৫ জন কৃষকসহ স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি করা হয়েছে বীজতলা। এছাড়া এই পদ্ধতি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।

কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বীজতলা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫৮*২৮*২.৫ সেমি সাইজের ২ হাজার ১০০টি প্লাস্টিক ট্রে। এতে ২ সেমি জৈব সার মিশ্রিত মাটি ভরাট করে কাঠ দিয়ে ভালভাবে সমতল করে মাটিতে স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেতে ১২০-১৫০ গ্রাম অঙ্কুরিত বীজ বপন করে ০.৫ সেমি মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও শৈত্যপ্রবাহের হাত থেকে রক্ষা করতে স্বচ্ছ সাদা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢাকা হয়েছে।

বোরো ধানের আধুনিক জাত হিসেবে লাল তীরের হাইব্রিড টিয়া ভিত্তি বীজ ব্যবহার করা হয়েছে। কৃষকরা নিজেরাই নিয়মিত বীজতলার পরিচর্যা করছেন। বীজতলার দু’পার্শ্বে পানি নিস্কাশনের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে সেচ। জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে দেঁড়শ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হবে।

সিংগা গ্রামের কৃষক খালিদ হাসান, শিমুল ও বাবর জানান, সরকারের প্রণোদনায় তারা সার, বীজ বিনামূল্যে পেয়েছেন। সমালয়ে চাষাবাদ পদ্ধতিতে যন্ত্র ব্যবহার করে একই সময়ে একই জাতের ফসলের চারা রোপণ, আন্ত:পরিচর্যা ও কর্তন করা হয়। এ পদ্ধতিতে সঠিক সময়ে অল্প দিনের মধ্যে চারা রোপণ করা সম্ভব। কোন টাকা খরচ করতে হয়নি কৃষকদের। সম্পূর্ণ খরচ বহন করছেন কৃষি বিভাগ।

রোপণ কাজে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্র ব্যবহার করা হবে বলেই ট্রেতে চারা উৎপাদন করা হয়। ট্রেতে চারা রোগবালাইমুক্ত, সম-ঘনত্বের ও সবল-সতেজ উৎপাদিত হয়। পলিথিন সিট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় বলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহেও চারা সুস্থ থাকে। এ যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা সারিতে রোপণ করা যায়। এতে করে গাছ পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়, সমভাবে খাদ্য গ্রহণ করে, কুশির সংখ্যা বৃদ্ধি হয়। ফলে ধানের ফলন বৃদ্ধি পায়। বীজতলা ও ধান ক্ষেতে আন্তঃপরিচর্যা যেমন সেচ, নিড়ানী, স্প্রে করতে সুবিধা হয়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারি প্রণোদনায় সমালয়ে চাষাবাদ প্রকল্পের আওতায় বোরো চাষাবাদ শুরু হয়েছে। একই ধারাবাগিকতায় দুর্গাপুর উপজেলায় ৫০ একর জমিতে বোরো চাষ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রযুক্তিটি কৃষকের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছে। আমরা সবসময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি। এ প্রযুক্তিতে বোরোধান চাষ করা হলে কৃষকের ধান চাষের উৎপাদন খরচ ও সময় দুই সাশ্রয় হবে। সেই সঙ্গে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। এতে কৃষক লাভবান হবেন।

তিনি আরো বলেন, প্রথম প্রথম মানুষ কোন কিছুই পরিবর্তন করতে চাইবে না। এই পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ কমে আসলে কৃষকরা নিজ থেকেই এগিয়ে আসবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ