মেহেদী হাসান, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীতে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজশাহীতে আলু, পেঁয়াজের প্রতি কেজিতে কমেছে ১০ টাকা। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে লাউ, কুমড়া, পেঁপে, পটল, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির দাম।

গতকাল শুক্রবার ৫ টাকা কমে যথাক্রমে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা এবং পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা। আজ শনিবার (২৪ অক্টোবর ২০২০) নগরীর সাহেববাজার ও মাস্টারপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি আলু ১০ টাকা কমে ৩৫ টাকা এবং পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এই মাসের শুরুতে হঠাৎ করেই আলুর দাম বেড়ে যায়। ১৮-২০ টাকার আলু এক লাফে ৫০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয়। গত ১৪ অক্টোবর প্রথম দফা আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তিন পর্যায়ে এই দাম নির্ধারণ করা হয়। কেজিপ্রতি খুচরা পর্যায়ে ৩০, পাইকারিতে ২৫ ও হিমাগার থেকে ২৩ টাকা।

দাম নির্ধারণের পর কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে দেশের সব জেলা প্রশাসককে এই ব্যাপারে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু আলু ব্যবসায়ীরা এই সিদ্ধান্ত মোটেই গ্রাহ্য না করে সিন্ডিকেটের সাহায্যে ইচ্ছামত দাম বৃদ্ধি করতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে গত ২১ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় আবারো আলুর দাম নির্ধারণ করে সরকার। ভোক্তা পর্যায়ে কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে খুচরামূল্য নির্ধারণ করা হয় কেজি ৩৫ টাকা। সেই ক্ষেত্রে পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকা এবং কোল্ডস্টোরেজে ২৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়।
সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ৫ দিন আগে ১৯ অক্টোবর সরকার ঘোষিত নির্ধারিত দামে আলু বেচতে রাজশাহীর কোল্ড স্টোর মালিকদের ৭ দিন সময় বেঁধে দেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। বর্তমানে বাজারে আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, আলুর বাজার মনিটরিং কার্যক্রম নিয়মিত চলছে। কোল্ডস্টেরেজ মালিকদের সাথে কথা হয়েছে, আমরা পরিদর্শন করেছি। কোল্ডস্টেরেজ থেকে ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত পাইকারী ব্যবসায়ীরা কী পরিমাণ দামে বেঁচা-কেনা করছে এই বিষয়গুলোও পরিদর্শন করেছি। মনিটরিংয়ের জন্য এবং সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ  নেওয়ার জন্য মূলত দাম কমেছে।

এছাড়া রাজশাহী মহানগরসহ জেলার প্রত্যেক উপজেলাতে আলুর বাজারসহ বিভিন্ন দ্রব্যে মূল্যের বাজার মনিটরিং এর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং আলুর দাম আর বৃদ্ধি পাবেনা বলেও জানান তিনি।

বাজারে প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, কাটা বেগুন ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, সিম ১২০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, ফুলকপি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০ টাকা, হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৩০ টাকা, দেশি শসা ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, কচু ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ঢেড়শ ৬০ টাকা, সবুজ শাক ৪০ টাকা, কলমি শাক ২০ টাকা, লাল শাক ৪০ টাকা, পালং শাক ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পুুুুঁই শাক ৩০ টাকা, মুলা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, ডুমুর ৩০ টাকা, ঝিংগা ৬০ টাকা, কলা ৩০ টাকা হালি, চাউল কুমড়া ৩০ টাকা পিস ও লাউ ৪০ টাকা পিস।

এছাড়া বার্মা পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, রসুন ১০০ টাকা, দেশি রসুন ১৬০ টাকা, বার্মা আদা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, দেশি আদা ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

এছাড়া মাছের মধ্যে গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা কেজি, ছোট চিংড়ি ৪০০ টাকা কেজি, পাবদা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, গুচি ৮০০ টাকা কেজি, রুই ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি, আইর ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজি, কই ৪০০ টাকা কেজি , দেশি কই ১ হাজার কেজি, কাতল ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি, দেশি পাঙ্গাস ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, নদীর পাঙ্গাস ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি, চিতল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া চালের মধ্যে মিনিকেট ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা কেজি, আঠাশ চাল ৫০ টাকা কেজি, বাসমতি চাল ৬০ টাকা কেজি, নাজিরশাল ৬০ টাকা কেজি, চিনিগুড়া চাল ৯০ টাকা কেজি ও কালোজিরা চাল ৮৫ টাকা কেজি।

রাজশাহীতে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি শুরু হওয়ায় বদরুদ্দোজা নামের এক ক্রেতা এগ্রিকেয়ার২৪.কম বলেন, আলুর দাম কমাতে খুশি হয়েছি। তবে, আরো ১০ থেকে ১৫ টাকা কমানো উচিত। এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্মমধ্যবিত্তরা বাঁচতে পারবেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ