নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ৫০-৬০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ একলাফে ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায় পৌঁছে। দেশে চলমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ও বন্যায় নিত্য প্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়ে বর্তমানে ২২০ টাকা থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । অপরদিকে ব্রয়লার মুরগির দামে ধ্বস নেমেছে। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। ফলে, দাম হিসেবে রাজশাহীর বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ১ কেজি মরিচের দামে ২ কেজি ব্রয়লার।

রাজশাহীর কাঁচাবাজারে আগুন। কাঁচা সবজির দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত। দাম বেড়েছে আলু, বেগুন, করলা, শশা, পটলসহ সকল সবজির। বন্যায় মরিচ ও অন্যান্য সবজির ক্ষতির কারণে পর্যাপ্ত আমদানি না থাকায় এমন দাম বেড়েছে বলে জানান সবজি বিক্রেতারা।

আজ বুধবার ২৬ আগস্ট ২০২০ রাজশাহীর সাহেববাজার, নিউমার্কেটে পাইকারি বাজারে মরিচ ও অন্যান্য সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আধাকেজি কাঁচামরিচ ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা এবং এককেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। ভালো মানের কাঁচামরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকা থেকে ১০ টাকা কমে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজি বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম তানোর থেকে লালশাক ও পুুঁইশাক ভ্যানভর্তি করে এসেছেন বাজারে। তাঁর সাথে কথা হলে তিনি জানান, শাক ভালো দামে বিক্রি করতে পেরে ভালো লাগছে। কারণ, লালশাক ২৫ টাকা আটি( প্রতিকেজি) বিক্রি করা সব সময় হয় না। আর পুঁইশাক ৫-৬ টাকা আগে বিক্রি করলেও এখন ১০ টাকা পাইকারি বিক্রি করছি। আটি বর্তমান পরিস্থিতিতে দাম বাড়া স্বাভাবিক। বন্যার পানিতে ক্ষতি হয়েছে। পানি উঠলে মরিচ, পটল, ঢেঁড়স গাছ মরে যায়।

সাহেব বাজারের সবজি ব্যবসায়ী কামাল হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, টানা বর্ষণের কারণে নিচু এলাকার সবজি খেতগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে মরিচ যে দাম ছিল বর্তমানে সেই মরিচ প্রায় তিনগুণ দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। টানা বর্ষণ ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে আগামী দেড়-দুই মাস সবজির দাম বাড়তি থাকবে বলেও জানান এই বিক্রেতা।
গত ১৫ দিনের ব্যবধানে বেড়েছে সবজির দাম।

বাজারে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, সাদা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা, আলু ৩০-৩২ টাকা, শশা ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা, চাল কুমড়া ২৫ টাকা, পটল ৪০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, বরবটি ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ টাকা, দেশি গাজর ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা।

এছাড়া প্রতি কেজি লাল শাক ৩০ টাকা, পুঁইশাক ১০ টাকা ও সবুজ শাক ২০ টাকা, প্রতি হালি কাঁচা কলা ২০ টাকা, প্রতি হালি লেবু ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা, ঝিঙ্গা ৩৫ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, কচু ৪০ টাকা, কচুর লতি ৩৫ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, আদা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা, প্রতিহালি সাদা ডিম ২৮ টাকা ও লাল ডিম ৩২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও ভোজ্য তেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮০-৯০ টাকা, বোতলজাত তেল ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।

মাছের বাজারে রকমভেদে দাম উঠানামা করতে দেখা গেছে। বাজারে রকমভেদে ইলিশ ৬০০-৭০০টাকা, সিলভার কার্প ১৪০-১৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৬০-১৮০ টাকা, চিংড়ি ও গলদা চিংড়ি ৯০০ টাকা, পাবদা ৩০০-৪০০ টাকা,কালবাউশ ১৮০ কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও রুই মাছ ওজনভেদে প্রতিকেজি ২৫০- ৩০০ টাকা, কাতল ২২০ টাকা, শিং ৪০০-৬০০ টাকা, তেলাপুয়া ১২০ টাকা, ট্যাংরা ৪৮০-৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

এদিকে ব্রয়লার মুরগি ছাড়া সকল ধরনের মাংসের দাম স্থির আছে। বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫২০-৫৪০ টাকা, খাঁশি ৭২০ টাকা, হাঁস ২৬০টাকা, ব্রয়লার ১১০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৩০-২৪০ টাকা ও দেশি মুরগি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়তে পারে কি না জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ব্রয়লার মুরগির খামারিরা আবারো মার খেয়ে গেলেন। আগামী ১৫ দিন বা ১ মাসের মধ্যে দাম বাড়ার কোন সম্ভাবনা দেখছি না। তবে, বন্যা চলে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে দাম বাড়বে বলে আশা করছি।

গত ১৫ দিনে রাজশাহীর বাজারে বেড়েছে চালের দাম। পুরাতন আঠাশ চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দু- এক টাকা করে বৃদ্ধি পেয়ে শরনা ৪৬, জিরাশাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা ও বাসমতি ৬০ টাকা, পায়জাম ৬০ টাকা, নাজিরশাইল ৬০, কাটারিভোগ সিদ্ধ ৭৫ টাকা, কাজললতা ৬৫, কালোজিরা ৯০, চিনিগুঁড়া আতপ ৯৫, রাধুনি ৮০, মোটা আতপ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ