মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে অনীহা কৃষকের। বাজারে ধান বিক্রি করতেই বেশ স্বচ্ছন্দ্য বোধ করছেন তারা। চলতি আগস্ট মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সরকারি গুদামের জন্য বোরো ধান সংগ্রহ শেষ করার করা ছিল খাদ্য অধিদপ্তরের। কিন্তু এ সময়ে রাজশাহী অঞ্চলে সরকারি বোরো সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশের কম।

এ অঞ্চলের ৮ টি জেলা ( রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া,জয়পুহাট, পাবনা) থেকে ধান সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে বগুড়া থেকে সবচেয়ে বেশি। বাজারে ধান বিক্রি বহুলাংশে সহজ ও জটিলতা মুক্ত বলছেন কৃষকরা। অপরদিকে সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে সরকারি ও বাজারের দরের পার্থক্য খুব বেশি না হওয়া, ধান কেনার জটিলতা এবং হয়রানির কারণে ধান কিনতে অনেকটাই ধকল সহ্য করতে হচেছ বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহী খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ অঞ্চলের ৮ জেলায় প্রাথমিকভাবে বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিকটন। পরবর্তী সময়ে ধান সংগ্রহের চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা কমবেশি হয়নি। এ পরিমান নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিকটন। ৮ জেলার ৬৭টি উপজেলা থেকে এ ধান সংগ্রহের কথা ছিল। ধান ক্রয় করার জন্য এ অঞ্চলের ৪ লাখ ১৪ হাজার ৩০০ জনের তালিকা দিয়েছিল রাজশাহী খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এদিকে সরকার নির্ধারিত সময় ১৫ আগস্ট পেরিয়ে গেলেও রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।

তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি ধানের দাম নির্ধারণ করা হয় ২৬ টাকা। এই ২৬ টাকা হিসেবে প্রতি মণ ধানের দাম পড়ে ১ হাজার ৪০ টাকা। বাজারে ঠিক একই রকম দামে ধান বিক্রি হতে দেখো গেছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক চলতি মৌসুমে জুনের মধ্যে ৬০ শতাংশ, জুলাইয়ে ৯০ শতাংশ ও আগস্টের ১৫ তারিখের মধ্যে শতভাগ ধান ক্রয় সম্পন্ন করা কথা ছিল। চলতি মাসের ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ধান সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশের কাছাকাছি।

কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একজন কৃষক এক টন ধান বিক্রি করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সরকারি তালিকাভুক্ত হতে হবে। এমন বিষয় ছাড়াও ধাপে ধাপে টাকা খরচ করতে হয়। ধান মাপার সময়, ধান পরিবহনের জন্য টাকা দিতে হয়। আবার অনেক সময় ফড়িয়া বা কার্ডধারীদের কিছু অংশের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। কমিশন দিতে হয়। নানা হয়রানি হতে হয়। ধানে চিটা আছে, ধান ভালো কালার না আবার ধান শুকায়নি এরকম অভিযোগ মেলে অহরহ। আর সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করে খুববেশি লাভ বা টাকা পাওয়া না যাওয়ায় ঝামেলা মুক্ত হয়ে বাজারে ধান বিক্রি করতেই বেশি ভালো মনে করছেন কৃষকরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সুধেন্দ্রনাথ রায় এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, চলতি ২৬ আগস্ট পর্যন্ত আমার কাছে ধান সংগ্রহের পরিমান ৮ হাজার ৩৬ মেট্রিকটন। সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬১ হাজার ৩৫৫ মেট্রিকটন। তবে সামগ্রিক ৮ জেলার তথ্য খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দিতে পারবেন।

জানা যায়, সরকারি তালিকাভুক্ত কৃষকদের ধান খুব উন্নত না হলেও তা কেনা হয়েছে। তবে সরকারি নিয়ম মেনে বিভিন্ন জটিলতায় এবং বাজারে বিক্রি করে দ্রুত টাকা পাওয়ার জন্য লক্ষ্যে কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান দেননি। কর্মকর্তাদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ধানের নির্ধারিত মাত্রার আর্দ্রতা, চিটামুক্ত ধান, শুকনো ধান এবং কেনার সময় ওজনের দিকে নজর দিয়েই কেনা হয়েছে। নানা কারণে ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি বলেও জানা গেছে।

রাজশাহী অঞ্চলের খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: রায়হানুল কবীর এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, রাজশাহীর ৮ জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিকটন। পরবর্তী সময়ে চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা একই ছিল। এখন পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিকটন। এসব ধান ক্রয়ের জন্য ৪ লাখ ১৪ হাজার ৩০০ জন কৃষকের তালিকা হয়েছিল এবং ধান সংগ্রহ করাও হয়েছে।