আসাদুজ্জামান মিলন, শরণখোলা থেকে, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ঋতু বৈচিত্রের বাংলাদেশে মানুষের জীবন আচরণে গ্রীষ্মকালের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় তীব্র তাপদাহে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পরে। আবার গ্রীষ্মকালের দু’টি মাস বৈশাখ আর জৈষ্ঠ্য মধু মাস হিসাবে ও বিশেষ সমাদৃত।

গ্রীষ্মের তাপদাহে পানি তাল ও তালের শাঁসের কদর বেড়ে যায়। এই সময় যে তাল পাওয়া যায় সেটা রসালো এ ফলের প্রাথমিক রুপ। মিষ্টি রসে টুই টুম্বুর থাকে বলে এটাকে স্থানীয় ভাষায় বলে পানি তাল। এটা আর একটু পরিনত হলে তাকে তালের শাঁস বলে।

বাঙালীর মধু মাস খ্যাত বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য অনুযায়ী ইংরেজী এপ্রিল ও মে মাসে শহর, বন্দর ও গ্রামের হাট বাজারে পানি তাল ও তালের শাঁসের পসরা বসে। গ্রামে এসব তাল ২ থেকে ৩ টাকায় কেনা বেঁচা হলেও শহরে তা বিক্রি হয় দশগুন বেশী দামে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।

দীর্ঘ দিন পানি তাল ও তালের শাঁসের ব্যাবসার সাথে সম্পৃক্ত ব্যাবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে গ্রামে ঘুরে ঘুরে একটি একটি গাছের তাল ৬০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায় ক্রয় করেন। এসব গাছে ১৫ থেকে ২০টি ছড়া থাকে। প্রতিটি ছড়ায় ১৫ থেকে ২০ টি তাল থাকে।

গড়ে গাছে থাকা প্রতিটি তাল ২ থেকে ৩ টাকা দরে কেনা পড়ে। গাছ থেকে যারা তাল কেটে নামিয়ে দেয় তাদের গাছ প্রতি দিতে হয় ১০০ থেকে ২০০ টাকা। এর পর গ্রাম থেকে নির্ধারিত আড়তে আবার আড়ৎ থেকে ঢাকা পাঠানোর পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বাবদ তাদের প্রতিটি তালের জন্য আরো দুই টাকা খরচ হয়ে যায়।

প্রতি পিচ তালের জন্য ৫ টাকা খরচ হলেও ঢাকার আড়তে তারা প্রতি পিচ তাল ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করতে পারেন। আড়ৎ থেকে ১৫ টাকায় কিনে নিয়ে বিক্রেতারা খুচরা ক্রেতা পর্যায় প্রতি পিচ তাল ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন বলে জানান তারা।

উপজেলার খাদা গ্রামের আঃ সবুর আকন জানান, তিনি গত ২৫ বছর ধরে তালের ব্যবসা করছেন। তালের ব্যাবসা করে তার মত অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। একই গ্রামের হায়দার আলী জানান, এ মৌসুমে শরণখোলা থেকে প্রায় প্রতিদিন হাজার হাজার তাল রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে যাচ্ছে।

গ্রামের চেয়ে শহরে পানি তাল ও তালের শাঁসের চাহিদা বেশী থাকায় সেখানে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাতে তাদের ভালো লাভ হয় বলে জানান তারা। তাদের মতে, নানা কারনে এ অঞ্চলে দিনদিন তাল গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

পুষ্টিবিদদের মতে, গরমের দিনে পানি তাল ও তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দূর করে দেহ কে প্রাকৃতিক ভাবে ক্লান্তিহীন ও সবল রাখে। তালে থাকা ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স পানি পানের তৃপ্তি ও খাবারের রুচি বাড়িয়ে দেয়। ভিটামিন এ দৃষ্টি শক্তিকে উন্নত করে। এন্টি অক্সিডেন্ট মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া কচি তালে থাকা নানা উপকরণ ত্বক, লিভার, হাড় গঠন ও রক্তশূন্যতা দূরীকরনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ প্রিয় গোপাল বলেন, কচি তাল নিঃসন্দেহে একটি রসালো ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। এতে প্রচুর পরিমানে আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক ও মিনারেল আছে। যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী। যেহেতু বছরের নির্ধারিত একটি মৌসুমে এ ফল টি পাওয়া যায়, তাই সবারই কম বেশী তাল খাওয়া উচিৎ। তবে অতিমাত্রায় পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ এ ফল টি খালি পেটে না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।