জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: শস্য বীমা সংশ্লিষ্ট কোন বিষয় সভা, বক্তব্যে বা আলোচনায় না নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্। তিনি জানান, সরকারের নীতি হচ্ছে কৃষি শস্য বীমাতে সরকার যাবে না।

আজ বুধবার (৮ আগষ্ট ২০১৮) রাজধানীর ফার্মগেট সংলগ্ন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটরিয়ামে ‘জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ২০১৮ চূড়ান্তকরণ’ শীর্ষক কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি তথ্যটি জানান।

জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতির খসড়াতে শস্য বীমার বিষয়টি সংযোজন দেখে তিনি বলেন, এখানে এটি সংযোজন করা হয়েছে, এটা সরকারের নীতির লঙ্ঘন। এটা যারা করেছে তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।

তিনি আরও বলেন, শস্য বীমা সংক্রান্ত কোনো সভায় কেউ যাবেন না, কোনো বক্তব্য দেবেন না। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা উঠে আসলে বলতে হবে সরকারের অবস্থান শস্য বীমায় নেই।

সিনিয়র সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের কৃষি যাতে লাভবান হয়, সে কথা মাথায় রেখে জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮ এর আলোকে জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ২০১৮ চুড়ান্ত করতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮ আসছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এ কর্মকর্তা বলেন, শস্য নিবিড়তা, মাটির স্বাস্থ্য, উদ্ভাবিত প্রযুক্তির দুর্বলতা, জলবায়ু পরিবর্তন, ফসলের সংগ্রহোত্তর অপচয়সহ কৃষির চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনা নিয়ে জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি চুড়ান্ত করতে হবে। নীতি চুড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের চ্যলেঞ্জও বিবেচনায় রাখতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীদের উদ্দেশ্যে সিনিয়র সচিব বলেন, চাষীদের লাভের কথা মাথায় রেখে তাদেরকে ফসল চাষের উপদেশ দিতে হবে।  কৃষি পণ্যের বাজার নিশ্চিত না হলে উপদেশ দিয়ে তাদেরকে ক্ষতি ও হয়রানির মুখে ফেলা ঠিক হবে না।

তিনি জানান, ধান উৎপাদনে ৪র্থ, সবজিতে ৩য়, আমে উৎপাদনে ৭ম, পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম এসব বক্তব্য দিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগে লাভ নেই।  আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, দানাদার ফসলের মধ্যে ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও আমরা গম আমদানি করছি। আবার বন্যা ও বিভিন্ন দৈবদুর্বিপাকের সময় কৃষি ভার্নারেবল অবস্থায় চলে যায়। এটা আমাদের স্মরণ করতে হবে কৃষি নীতি প্রনয়নের সময়। আমাদের এখন পুষ্টিসম্মত খাদ্য দরকার।

ধান উৎপাদনের পাশাপাশি ডাল, তেল, ফল, সবজি প্রভৃতি ফসলের উৎপাদন আরো বাড়াতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দ্রুত মাঠে নিয়ে যেতে হবে।

কৃষি পণ্যের বাজার যদি নিশ্চিত না করা যায় তাহলে কীভাবে এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে সচিব বলেন, এ বিষয়টি নীতিমালায় ভেবে দেখতে হবে।

জাতীয় কৃষিনীতিতে যেমন যুব সমাজ, সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকরা যেন সহজে ঋৃণ পেতে পারে সে বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এদিক দিয়ে সম্প্রসারণ কর্মীরা কী ভূমিকা রাখতে পারে তা অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

গতানুগতিক পদ্ধতি পরিবর্তন করে কীভাবে কৃষকদের সাথে সম্পৃক্ততা থাকা যায় এ বিষয়টিও রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেন সিনিয়র সচিব। এ সময় তিনি মাঠ পর্যায়ের অবস্থান নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ কর্মশালার আয়োজন করে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতির খসড়া উপস্থাপন করেন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাশেম।

নির্ধারিত আলোচকের বক্তব্য দেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মো. সেকেন্দার আলী ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ওয়ায়েস কবীর।

স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ। বিএআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কবির ইকরামুল হকসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও কৃষক প্রতিনিধিরা এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন।