তুষার কুমার সাহা, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সবজির ধরনভেদে বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশলে সংগ্রহে নিয়ম রয়েছে। শীত মৌসুম শুরুতে বা শীত মৌসুম শুরুর মাস খানেক আগে থেকে সবজি বাজারজাত করা হয়। শীতকালীন সবজি সংরক্ষণের কৌশল জানলে চাষিরা লাভবান হতে পারে।

১. টমেটো, বেগুন. শসা, কুমড়া এসব সবজিকে বোঁটা থেকে ধারালো ছুরি দিয়ে গাছ থেকে আলাদা করে নিতে হবে।
২. চারা গাছ পাতলা করার সময় ছোট গাছ হিসেবে লালশাক, পালংশাক এসবের শাককে সংগ্রহ করে নিতে হবে ।
৩. পালংশাক, লালশাক, মুলাশাক সংগ্রহের সময় সম্পূর্ণ গাছটি শিকড়সহ উপড়ে ফেলে সংগ্রহ করতে হয় ।
৪. শাক হিসেবে ব্যবহারের জন্য পুঁইশাক ও লাউয়ের ডগা প্রুনিং বা ছাঁটার করাই সময় গাছের অংশ কেটে সংগ্রহ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

আবার বিভিন্ন সবজি সংগ্রহের উপযোগী সময় ও উপযুক্ত অবস্থাভেদে সংগ্রহ করতে হবে।

যেমন- বেগুন সবজি : ফল যথেষ্ট কচি অবস্থায় তবে এটি পরিপূর্ণ আকার এবং রঙ প্রাপ্তির পর সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঢেঁড়স : কোমল ও কচি অবস্থায় ঢেঁড়সের ফল তুলতে হবে, তা না হলে ফল শক্ত ও খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফল বের হওয়ার ৩ থেকে ৫ দিন পর ঢেঁড়স খাওয়ার উপযোগী হয়। ফল তোলা না হলে কান্ডের বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফলন কম হয়।

ধুন্দল : বীজ বুনার দেড় থেকে দুইমাস পর থেকে ধুন্দল ফল ধরা শুরু হয় এবং এটি দুই-তিন মাস পর্যন্ত চলতে থাকে। গাছে ফল ধরার ৮ থেকে ১০ দিন পরেই সংগ্রহ উপযোগী হয়। ফল কচি অবস্থায় সংগ্রহ করা উচিত, এতে পুষ্টিমান বজায় থাকে। বেশি পরিপক্ব ফলের স্বাদ ও পুষ্টিমান দুইটিই কমে যায়।

বরবটি : শুটি পরিপূর্ণ লম্বা ও মোটা হলে এবং বীজের অংশ সামান্য স্ফীত হতে শুরু করলে বরবটি তোলা যাবে।

লাউ : ফলের ত্বকের লোমশ ভাগ পরিপক্বতার সাথে সাথে কমতে থাকে, ফলের লোমশ ঘনত্ব দেখেও এর সংগ্রহ উপযোগিতা নির্ণয় করা যায় এবং সংগ্রহ করতে হয়।

মূলা : বীজ বপনের ২০-২৫ দিন পর থেকে সংগ্রহ করা যায়। শাকের জন্য ঘন করে লাগালে ফসল ২০ দিন পর এবং মুলার জন্য ৪০ দিন পর থেকে ফুল ফোটা পর্যন্ত সংগ্রহ করা যাবে।

শিম : ফুল ফোঁটার ২০-২৫ দিন পর সংগ্রহ করা যায়। শুটি পরিপূর্ণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে এর বীজের অংশ কিছুটা স্ফীত হওয়ার পর পরই সংগ্রহ করতে হবে। তবে অতিরিক্ত পরিপক্ব শুটিতে আঁশ জন্মালে কোমলতা ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।

সবজি সংগ্রহের সময় যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তাহলো-

হাত দিয়ে মোচড়ায়ে সবজি ফসল সংগ্রহ করা যাবে না, এতে মাতৃ গাছের ক্ষতি হয়। মোচড়ানোর ফলে গাছে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, সেখান দিয়ে রোগ জীবাণুর আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ক্ষতি এড়ানোর জন্য ধারালো ছুরি বা ক্লিপার দিয়ে সংগ্রহ করা উচিত। ফসল সংগ্রহ করে ফসল তোলার পাত্রে রাখতে হবে ।

সবজি সংগ্রহ থেকে বাজারে নেয়া পর্যন্ত কার্যক্রমকে বাজারজাতকরণ বলা হয়ে থাকে। আর যেসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখলে বাজারজাতকরণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পাদন করে শাকসবজির সংগ্রহোওর ক্ষতির পরিমাণকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে যেসব খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হলো 

ক. মাঠে থাকা অবস্থায় সংগ্রহের সময় সবজির গায়ে ধুলাবালি লাগতে পারে। এজন্য সংগ্রহের পর পরই পরিষ্কার পানিতে সবজি ধুয়ে নিলে আকর্ষণ বাড়ে এবং নেতিয়ে পড়ার সম্ভাবনা কমে। তবে অপরিষ্কার পানিতে ধোয়া উচিত নয়, কেননা রোগ-জীবাণুর আক্রমণের আশংকা বৃদ্ধি পায়।

খ. নিকটবর্তী বা দূরের বাজারে পাঠানোর আগে আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য ছাঁটাই করতে হবে। খুব ধারালো ছুরি দিযে ছাঁটাই করতে হবে।

গ. আকর্ষণ এবং মূল্য বাড়ানোর প্রয়োজনে সটিং এবং গ্রেডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সবজি ভেদে আকার-আকৃতি, বর্ণ, বাওি, পরিপক্বতা অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করে গ্রেড প্রচলন করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঘ. যেহেতু রসালো সবজি সংগ্রহ করার পরও শ্বসন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। সে জন্য ঠাণ্ডা ঘরে বায়ু শূন্য করে অল্প সময়ের জন্য হলেও মাঠের তাপ সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঙ. দূরে পাঠাতে বা অনেকক্ষণ সবজি টাটকা রাখার জন্য মোড়কায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সংখ্যক সবজি সংগ্রহের পর পরই খুব কম সময়ের মধ্যেই পানি পরিত্যাগ করে এবং নেতিয়ে পড়ে। এসব শাকসবজি বাজারজাত করা খুবই অসুবিধাজনক। তাই এগুলো খুব পাতলা ও স্বচ্ছ পলিথিনের ব্যাগে রাখলে নেতিয়ে পড়া কমে যায়।

খুবই পাতলা পলিথিনের ভেতর দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে। কিন্তু জলীয় বাস্পের কণা চলাচল করতে পারে না বলে নেতিয়ে পড়া বন্ধ হয়। শাক, ব্রোকলি, শিম, লেটুস, ধনিয়াপাতা এগুলোকে মোড়কায়ন করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

চ. মোড়কায়নের পর দূরের বাজারে পরিবহনের সময় সবজি যাতে আঘাত না লাগে সেজন্য বস্তা বন্দি না করে বায়ু চলাচলের সুবিধাযুক্ত প্লাস্টিক, কাঠ, বাঁশের খাঁচা অথবা কার্ড বোর্ডের বাক্সে করে সবজি চালান দেয়া উচিত। পরিবহনের সময় ট্রাকের ও ট্রেনের বগিতে পরিচ্ছন্নতা ও বাতাস চলাচলের বিশেষ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

আগাম শীতের শাকসবজির সংগ্রহ এবং বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে করা হয় তবে উৎপাদনকারীর অপচয় রোধ হবে এবং তিনি অধিক মুনাফার মুখ দেখবেন। আর দেশের শাকসবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথ হবে সুগম । এ বিষয়ে বিস্তারিত পরামর্শের জন্য নিকটস্থ উপজেলা কৃষি অফিস কিংবা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ