কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে প্রকৃতির আবহাওয়া অনেকটাই আদ্র থাকে। পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারিরা এসময় বেশি সতর্ক না হলে ঘটতে পারে বড় দূর্ঘটনা কিংবা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। তাই শ্রাবণ মাসে খামার ও পুকুরের যেসব যত্ন জরুরি তা নিয়েই আজকের আলোচনা।

১. আর্দ্র আবহাওয়ায় পোলট্রির রোগবালাই বেড়ে যায়। তাই সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে খামার জীবাণুমুক্তকরণ, ভ্যাকসিন প্রয়োগ, বায়োসিকিউরিটি এসব কাজগুলো সঠিকভাবে করতে হবে।

২. বায়োসিকিউরিটির জন্য খামারকর্মীদের জীবাণুমুক্ত জুতা ও এপ্রোন পরে খামারে ঢোকা, কমবয়সী বাচ্চার বেশি যতœ নেয়া, শেডে জীবাণুনাশক পানি স্প্রে করা, মুরগির বিষ্ঠা ও মৃত মুরগি খামার থেকে দূরে মাটিতে পুঁতে ফেলা, পোলট্রি শেডের ঘরের মেঝে কস্টিক সোডার পানির দ্রবণ দিয়ে ভিজিয়ে পরিষ্কার করা।

৩. আর্দ্র আবহাওয়ায় পোলট্রি ফিডগুলো অনেক সময়ই জমাট বেঁধে যায়। সেজন্য পোলট্রি ফিডগুলো মাঝে মাঝে রোদ দিতে হবে।

৪. বর্ষাকালে হাঁস মুরগিতে আফলাটক্সিন এর প্রকোপ বাড়ে। এতে হাঁস মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এজন্য সূর্যমুখীর খৈল, সয়াবিন মিল, মেইজ গ্লুটেন মিল, সরিষার খৈল, চালের কুঁড়া এসব ব্যবহার করা ভালো।

৫. গবাদিপশুকে পানি খাওয়ানোর ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।  কারণ দূষিত পানি খাওয়ালে নানা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ক্ষুরা, বাদলা, তড়কা, গলাফুলা রোগের প্রতিষেধক দিতে হবে।

৬. গোখাদ্যের জন্য রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে বা পতিত জায়গায় ডালজাতীয় শস্যের আবাদ করতে হবে।

৭. গরু, মহিষ ও ছাগল ভেড়াকে যতটা সম্ভব উঁচু জায়গায় রাখতে হবে। গর্ভবর্তী গাভী ও বাছুরের বিশেষ যতœ নিতে হবে। বাছুরের পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এজন্য নিয়মিত দুধ ও মিল্ক রিপ্লেসার খাওয়ানোর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি খাওয়াতে হবে।

মৎস্যসম্পদ
১. চারা পুকুরের মাছ ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পরিমাণ বড় হলে মজুদ পুকুরে ছাড়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে গত বছর মজুদ পুকুরে ছাড়া মাছ বিক্রি করে দিতে হবে।

২. পানি বৃদ্ধির কারণে পুকুর থেকে মাছ যাতে বেরিয়ে না যেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য পুকুরের পাড় বেঁধে উঁচু করে দিতে হবে অথবা জাল দিয়ে মাছ আটকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. পানি বেড়ে গেলে মাছের খাদ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ সময় পুকুরে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

আষাঢ়-শ্রাবণ মাস আমাদের কৃষির জন্য হুমকির মাস। এ কথা যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমাদের সবার সম্মিলিত, আন্তরিক ও কার্যকরী সতর্কতা এবং যথোপযুক্ত কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে এ সমস্যাগুলো মোকাবেলা করা সম্ভব। কৃষিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে আধুনিক কৃষি কৌশল যেমন অবলম্বন করতে হবে তেমনি সব কাজ করতে হবে সম্মিলিতভাবে।

আর কৃষির যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা ১৬১২৩ এ নম্বরে যে কোনো মোবাইল অপারেটর থেকে কল করে নিতে পারেন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা কৃষিকে নিয়ে যাবে উন্নতির শিখরে।

শ্রাবণ মাসে খামার ও পুকুরের যেসব যত্ন জরুরি লেখাটি লিখেছেন কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন, তথ্য অফিসার (কৃষি), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ