রাজেকুল ইসলাম (নওগাঁ) রানীনগর প্রতিনিধি: নওগাঁর ১১ উপজেলায় এবার ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে যা অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। তবে বাজারে ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকায় প্রতি মণ ধানে দুই’শ টাকা নাই হয়ে গেছে।

জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের শস্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত নওগাঁয় সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় থাকায় চলতি ইরি-বোরো ধানের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার হাজার হাজার কৃষক।

ধানের আড়ৎদার, চাতাল ব্যবসায়ী, মিল ব্যবসায়ী ও মাঠ পর্যায়ের ধান ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারনে হটাৎ করেই গত সপ্তাহ থেকে প্রকার ভেদে প্রতি মণে দেড়শ থেকে দু্ই’শ টাকা ধানের দাম কমে যাওয়ার কারনে কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

এক সপ্তাহ আগে যে ধান প্রকারভেদে ৯৫০ টাকা থেকে ১০৫০ এবং ১০৭০ টাকা দরে বেচাকেনা হয়েছে সেই ধান মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৮০০ টাকা, এমনকি ৭৮০ টাকা মূল্যেও বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।

জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, আমার লস্বা জিরা ধান প্রথমে ৯৫০ টাকা মণ কিনতে চাইলেও পরের দিন সেই ধান প্রতিমন ৯০০ টাকা দরে আমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আমি বিক্রির একদিন পর আমার বড় ভাই আমজাদ একই ধান বিক্রি করতে গেলে ধান ব্যবসায়ীরা প্রথমে ৭৮০ পরে ৮০০ টাকা প্রতিমন দাম করেন যার কারনে ধান বিক্রি না করে ঘড়ে তুলে রাখতে বাধ্য হয়েছেন আমার ভাই।

একই গ্রামের কৃষক সাজ্জাদ হোসেন মন্ডল, মোজাহারুলসহ এলাকার অনেক কৃষক জানান, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের চাষকৃত ধান কাটা-মাড়াই শেষে বিক্রি করতে গিয়ে প্রথমে একটু ভালো দাম পেলেও বর্তমানে ঈদকে সামনে রেখে সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে প্রতি মনে ১৫০থেকে ২শত টাকা কমে কেনাবেচা হচ্ছে জানিয়ে তারা আরো বলেন, এভাবেই ঈদ এর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সিন্ডিকেট এর সেটিংকৃত এলাকা ভিত্তিক মাঠ পর্যায়ের ধান ক্রেতারা কৃষকদের লোকসানের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন, আর আমরাও কিটনাশক ও সার দোকানীর পাওনাসহ ঈদের কেনাকাটা করতে এক প্রকার কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।

অভিযোগ রয়েছে, আকাশে মেঘ দেখা দিলে বা বৃষ্টি হলেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান বাঁকিতে বিক্রি করতেও বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। আর ধান সিন্ডিকেটের সদস্যরা (মাঠ পর্যায়ের ধান ক্রেতারা) এমন ভাবেই কৃষকদের বেকায়দায় ফেলে তুলনামূলক অনেক কম মূল্যে ধান কিনে মজুদ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এমনকি সিন্ডিকেটের হয়ে বিভিন্ন এলাকার ধনী কৃষকরাও কম মূল্যে ধান কিনে মজুদ করছেন বলেও অভিযোগ। মজুদকৃত ধানগুলো ঈদের পর বেশীমূল্যে বিক্রি করে লাভবান হবেন ব্যবসায়ী ও ধনী কৃষকরা অপরদিকে লোকসানের মুখে পড়ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত কৃষকরা তাদের দেনা পাওনা পরিশোধ করতে কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ও সেই সাথেই লোকসানের মুখে পড়ছেন। অপরদিকে সিন্ডিকেটের ধান ক্রয় কারীরা লাভবান হচ্ছেন।

প্রকৃত কৃষক যেন ধানের নায্য মূল্য পান সে জন্য সেন্ডিকেট ভাঙ্গার জন্য নিয়মিত ধানের হাট, ধানের আড়ৎ সহ বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন পূর্বক প্রয়োজনীয় আশু পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দ্রুত আশু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলেই মনে করছেন সচেতন মহল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুল ওয়াদুদ বলছেন, এবার জেলায় ১লাখ ৮০ হাজার ৬২৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিগত রোপা আমনে ধানের ভালো দাম পাওয়ার কারনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত আরও সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে এবং চলতি বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে কাটা ও মাড়াইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে বাজারে তুলনা মূলক ধানের মূল্য কিছুটা কমে যাওয়ার কারনে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত কৃষকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ