আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভারতের চিনি শিল্প চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত মৌসুমের ধারাবাহিকতায় এবারো দেশটিতে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষীদের কাছ থেকে বেশি বেশি আখ কিনে চিনি উৎপাদন করেছে ভারতের চিনিকলগুলো।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত উৎপাদন হওয়ায় চিনির বিপুল মজুদ গড়ে উঠেছে। বিপরীতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে উদ্বৃত্ত চিনি বিক্রি করতে পারছেন না ভারতীয় উৎপাদক ও রফতানিকারকরা।

ফলে নির্ধারিত সময়ে আখচাষীদের পাওনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে চিনিকলগুলো। এরই মধ্যে দেশটিতে আখচাষীদের পাওনার পরিমাণ ৬ হাজার ৫০০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে। পাওনা অর্থ না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র চাষীরা।

একই সঙ্গে সংকট উত্তরণের উপায় না পেয়ে উৎপাদনকারীরাও খাদের কিনারে পৌঁছে গেছেন। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ও ইকোনমিক টাইমস।

ভারতের উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি আখ ও চিনি উৎপাদন হয়। গত ১ অক্টোবর দেশটিতে চিনি উৎপাদনের ২০১৮-১৯ মৌসুম শুরু হয়েছে। এর আগে থেকেই স্থানীয় চিনিকলগুলো চাষীদের কাছ থেকে আখ সংগ্রহ শুরু করে।

চাষীরা উৎপাদিত আখ সরবরাহ করলেও পাওনা অর্থ এখনো বুঝে পাননি। অল ইন্ডিয়া সুগার ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন (এআইএসটিএ) জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্রেই আখচাষীদের পাওনা ৬ হাজার ৫০০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে, যা এ দুই রাজ্যে বার্ষিক চিনি উৎপাদনের আর্থিক মূল্যের প্রায় অর্ধেক।

শুধু উত্তর প্রদেশের আখচাষীদের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার কোটি রুপি। এর মধ্যে অর্ধেকই আগের মৌসুমের পরিশোধ না করা পাওনার জের।

এআইএসটিএর চেয়ারম্যান প্রফুল ভিত্তালানি বলেন, ভারতে চিনিকলগুলো চাষীদের কাছ থেকে বাকিতে আখ কেনে। পরে চিনি বিক্রি করে পাওনা অর্থ পরিশোধ করে। গত মৌসুমের ধারাবাহিকতায় এবারো বাম্পার ফলন হওয়ায় চিনিকলগুলো বাড়তি আখ সংগ্রহ করে অতিরিক্ত চিনি উৎপাদন করেছে।

উদ্বৃত্ত চিনি বিক্রি করতে না পারায় বেধেছে বিপত্তি। আগের মৌসুমেই সব চাষীর পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবারের মৌসুমের পাওনা। উদ্বৃত্ত চিনি গুদামে পড়ে রয়েছে। বিপরীতে মিলগেটে পাওনাদার চাষীদের তাগাদা বেড়েছে। এ পরিস্থিতি ভারতীয় চিনি শিল্পকে বড় ধরনের সংকটের মুখে ফেলেছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০১৮-১৯ মৌসুমের ১ অক্টোবর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সাকল্যে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৪৯ টন চিনি রফতানি হয়েছে। রফতানির জন্য পাইপলাইনে রয়েছে আরো ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩০ টন চিনি।

ভারত বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চিনি রফতানিকারক দেশ। চলতি মৌসুমে দেশটি থেকে ৪০ লাখ টন চিনি রফতানির পূর্বাভাস দেয়া রয়েছে। তবে মৌসুমের প্রথম দুই মাসের বেশি সময়ে সাকল্যে পৌনে দুই লাখ টন চিনি রফতানিকে হতাশাজনক মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে ধারাবাহিক দরপতন, ব্রাজিল-থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে বাড়তি উৎপাদন, বৈশ্বিক সরবরাহে চাঙ্গাভাবসহ বিভিন্ন কারণে ভারত থেকে চিনি রফতানি কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বাড়ছে না।

অভ্যন্তরীণ বাজারেও পণ্যটির দাম কম রয়েছে। ফলে বিক্রি না হয়ে ২০১৮-১৯ মৌসুম শেষে ভারতে চিনির মজুদ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১ কোটি ১৫ লাখ ১৫ হাজার টনে। এ পরিস্থিতি দেশটির চিনি শিল্পের সংকট আরো দীর্ঘমেয়াদি করবে। এমনকি চলমান এ সংকটের প্রভাব পড়তে পারে দেশটির আসন্ন জাতীয় নির্বাচনেও। সূত্র: বণিক বার্তা।