নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশে আদা-রসুনের চাহিদা মেটাতে নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপর। মসলাপণ্য দুটির বাজার মূলত নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়ীরা। আমদানি কম হওয়ায় প্রভাব পড়েছে রাজশাহীর বাজারেও। দেশের বাজারে ১০ দিনের ব্যবধানে আদা-রসুনের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৮০-১০০ টাকা।

জানা গেছে, সম্প্রতি বিভিন্ন নিত্যপণ্যের মতো আদা-রসুনের বাজারেও সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। যার কারণে জরুরি এ দুটি মসলার দাম বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে।

বুধবার (১৮ জানুয়ারি ২০২৩) রাজশাহীর সাহেববাজার সবজিবাজারের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে পণ্যে সরবরাহ ব্যবস্থার উপর প্রভাব পড়েছে। বেশ অনেক দিন ধরেই আদা-রসুন আমদানিতে লোকসান দিচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিছুদিন আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারে চীনা আদা ও রসুনের সংকট দেখা দিয়েছে। আর দেশি আদা-রসুন রোপনের মৌসুম হওয়ায় প্রায় ৩ মাস ধরে এ সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বাজারে যে আদা-রসুন বিক্রি হচ্ছে তা চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।

সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমদানি একেবারে বন্ধ আছে বলে মনে হয় না। প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে আমদানি করেছে তারা বাড়তি দামে এসব পণ্য বিক্রি করছে। যার কারণে পাইকারি বাজারে ১০ দিন আগে আদা কেজিপ্রতি ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ১৯০-২০০ টাকায় উঠে গেছে। একইভাবে ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরের চীনা রসুনের দাম বেড়ে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরো নিউজ পড়তে পারেন:

আদা-রসুনের কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা

ভারতীয় আদার কেজিতে কমলো ৪০ টাকা

৫০ হাজার খরচে রসুন চাষে আয় দেড় লাখ

ভারত থেকে ৪ মাসে ৮০ কোটি টাকার রসুন আমদানি

তথ্যে দেখা গেছে, চীনা আদা-রসুনের সরবরাহে সংকট থাকলেও দেশী আদা-রসুনের সরবরাহ স্বাভাবিক। কিন্তু আমদানীকৃত আদা-রসুনের আকার বড় হওয়ায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

ভাইভাই এন্টারপ্রাইজের হাসিবুল বলেন, চীনা আদা-রসুনের দাম প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। কিন্তু দেশী আদা-রসুনের দাম কম। দেশী রসুন ভেতর থেকে ঠোসা হয়ে যায়। এজন্য চাহিদার দিকে চীনা রসুন বেশি এগিয়ে। পাইকারি পর্যায়ে দেশীয় আদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০-১১০ টাকায়। চীনা আদার সংকটে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। পাইকারি পর্যায়ে কেজিপ্রতি চীনা রসুন ১৫০-১৬০ টাকায় লেনদেন হলেও দেশী রসুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। দেশী রসুনের দাম কম হলেও চাহিদা কম।

খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী জানান, ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে সমস্যা হওয়ায় কয়েক মাস ধরে দেশে আদা-রসুন আমদানি কমে এসেছে। তাছাড়া আমদানি মূল্যের চেয়ে দেশের পাইকারি বাজারে পণ্য দুটির দাম কম হওয়ায় ব্যবসায়ীদের অনেকে লোকসান দিয়েছিলেন। যার কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় সরবরাহ সংকটে পাইকারি বাজারে পণ্য দুটির দাম বর্তমানে বেড়ে গেছে।

নতুন বছরে সীমিত পরিসরে হলেও এলসি খোলা যাচ্ছে জানিয়ে এ ব্যবসায়ী বলেন, সেক্ষেত্রে আসন্ন রমজানে সরবরাহ সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া রবি মৌসুমে দেশীয় আদা-রসুনের সরবরাহ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে আদার সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে বাজার অস্থির হওয়ায় সুযোগ নেই।

চীনা আদার সংকটে কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমার থেকে আদা সরবরাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, সবশেষ গত শুক্রবার টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে অন্তত ৫০ ট্রাক আদা দেশে প্রবেশ করেছে। মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়া এসব আদার মান অনেকটা চীনা আদার মতো হওয়ায় পণ্যটির ঊর্ধ্বমুখী বাজারকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি মিয়ানমারের আদার সরবরাহ বাড়ানো গেলে আদার দাম ধীরে ধীরে কমবে বলে মনে করছেন তারা।

অন্যদিকে দেশী মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৬-২৮ টাকায়। এদিকে আদা-রসুনের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক। ভারত থেকে পর্যাপ্ত আমদানি ছাড়াও দেশীয় উৎপাদন মৌসুমের কারণে বাজার স্থিতিশীল। শনিবার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও পাহাড়তলী বাজারে আমদানীকৃত ভারতীয় নাসিক পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৩০-৩৪ টাকা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ