নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গত দু-মাস ধরে কাঁচাবাজারগুলো বাড়তে থাকে কাঁচামরিচের দাম। প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয় দুই’শ ৪০ টাকা থেকে আড়াই’শ টাকা। বর্তমানে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ও বন্যায় বাজারের প্রতিটি সবজি প্রায় প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম টপকে গেছে। সবজির দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। ফলে রাজশাহীর এসব মুরগির খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর সাহেববাজার, নিউমার্কেট ও লক্ষিপুর কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জেলায় বন্যা ও টানা বৃষ্টির কারণে অনেক সবজির জমি নষ্ট হয়ে গেছে। পটল, করলা, ঢেঁড়স, কাঁকরোল এসব ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফলে এমন অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে বলে অভিমত ব্যবসায়ীদের। আবার সবজির ক্ষতির কারণে পর্যাপ্ত আমদানি না থাকায় এমন দাম বেড়েছে বলেও জানান কিছু সবজি বিক্রেতা। বাজারে ক্রেতাদের তেমনন ভিড় না থাকলেও সবজির চড়া দামে বেকায়দায় পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।

বাজারে প্রতিকেজি তবে টমেটো ১০০ টাকা, আলু ৩২ টাকা, কাঁকরোল ৪৫ টাকা, পটল ৪৫ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, ঝিঙ্গে ৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, লাউ ২৫ টাকা প্রতিপিস, মুলা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বিক্রি শুরু হওয়া ৫০-৬০ টাকা কেজির কাঁচামরিচ বর্তমানে ২৪০ টাকা কেজি। সেইসাথে বর্তমানে রাজশাহীর কাঁচাবাজারগুলোতে প্রায় প্রতিকেজি সবজি ৪০ টাকার উর্দ্ধে।

আরোও পড়ুন: রাজশাহীতে দু-দিনে মাছের ক্ষতি ১৪ কোটি টাকার বেশি

অপরদিকে ব্রয়লার মুরগির দামে ধ্বস নেমেছে। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়। ফলে, দাম হিসেবে রাজশাহীর বাজারে সবজির দামে ব্রয়লার মুরগি। বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫২০-৫৪০ টাকা, খাঁশি ৭২০ টাকা, হাঁস ২২০টাকা, ব্রয়লার ১১৫ টাকা, সোনালী মুরগি ২৩০-২৪০ টাকা ও দেশি মুরগি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

সাহেব বাজারের সবজি ব্যবসায়ী কামাল হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, গত একসপ্তাহে কাঁচা সবজির দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত। কাঁচামরিচের দাম কয়েকসপ্তাহ থেকে দুই’শ টাকা উপরে। টানা বর্ষণ ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে সবজির দাম আরোও বাড়বে বলে জানান এই বিক্রেতা।

এছাড়া প্রতি কেজি লাল শাক ২০ টাকা, পুঁইশাক ১৫ টাকা ও সবুজ শাক ২০ টাকা, প্রতি হালি কাঁচা কলা ২৫ টাকা, প্রতি হালি লেবু ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা, কচু ৪০ টাকা, কচুর লতি ৩৫ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, আদা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, প্রতিহালি সাদা ডিম ৩২ টাকা ও লাল ডিম ৩৪ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও ভোজ্য তেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে বেড়েছে ১০ টাকা। প্রতিলিটার ১০০- ১১০ টাকা, বোতলজাত তেল ১১৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।

মাছের বাজারে রকমভেদে দাম উঠানামা করতে দেখা গেছে। বাজারে রকমভেদে ইলিশ ৬০০-৭০০টাকা( প্রতিকেজি বড় ইলিশ ৮০০ টাকা), সিলভার কার্প ১৪০-১৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৬০-১৮০ টাকা, চিংড়ি ও গলদা চিংড়ি ৬০০ টাকা, পাবদা ৩০০-৪০০ টাকা,কালবাউশ ১৮০ কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও রুই মাছ ওজনভেদে প্রতিকেজি ২৫০- ৩০০ টাকা, কাতল ২২০ টাকা, শিং ৪০০-৬০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ টাকা, ট্যাংরা ৪৮০-৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

গত ১৫ দিনে রাজশাহীর বাজারে বেড়েছে চালের দাম। প্রতিকেজি চালে ৩-৫ টাকা বেড়েছে। পুরাতন আঠাশ চাল ৫০ থেকে বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দু- এক টাকা করে বৃদ্ধি পেয়ে শরনা ৪৮, জিরাশাল ৫২ টাকা ও বাসমতি ৬৫ টাকা, পায়জাম ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৬০, কাটারিভোগ সিদ্ধ ৭৫ টাকা, কাজললতা ৬৫, কালোজিরা ৯০, চিনিগুঁড়া আতপ ১০০, রাধুনি ৮০, মোটা আতপ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে বলে এগ্রিকেয়ার.কমকে জানিয়েছেন পাইকারি ও খুচরা চাল বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান সুশিল স্টোর।

ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়তে পারে কি না জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, আগামী ১৫ দিন বা ১ মাসের মধ্যে দাম বাড়ার কোন সম্ভাবনা দেখছি না। তবে, বন্যা চলে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে দাম বাড়বে বলে আশা করছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে খামারিরা বড় লোকসানে পড়েবেন।