প্রতিকী ছবি

ডেইরি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দুই দশক ধরে চালের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আবদুল মান্নান মোল্লা (৪৮)। চাল ব্যবসায়ী হলেও করেছেন খামার। তাঁর খামারে গরু আছে ৬০টি, ভেড়া ৮০টি আর ছাগল ৬০টি। এসব গবাদিপশুর দাম প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। খামারের চারটি পুকুরে মাছ চাষে বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। আর এ সমন্বিত খামারে মান্নানের বছরে আয় হচ্ছে ৩০ লাখ টাকা।

একজন সফল খামারি হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। আর এ সফলতার গল্প তুলে ধরেছে প্রথম আলো। এক যুগ আগে মাছ চাষ দিয়ে এ খামারের যাত্রা শুরু। পরে সেখানে গরু মোটাতাজাকরণ, ভেড়া (গাড়ল) ও ছাগল পালন শুরু করেন। এখন এ খামার থেকে তাঁর মাসে লাখ টাকা আয় হয়।

আবদুল মান্নান জানান, খামারের পেছনে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছেন। মাছ ও গবাদিপশু থেকে বছরে খরচ বাদ দিয়ে তাঁর আয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। মাসে গড়ে আড়াই লাখ টাকা। খামারে সারা বছর বেতনভুক্ত ছয়জন শ্রমিক কাজ করেন। এ ছাড়া অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রতিদিন আরও চার-পাঁচজন শ্রমিক কাজ করেন।

আবদুল মান্নানের বাড়ি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার বরগাছা ইউনিয়নের মালশন গ্রামে। বাড়ির পাশেই তিন একর জমিতে গড়ে তোলেন তাঁর সমন্বিত কৃষি খামার। খামারের নাম আমিন হাসান অ্যাগ্রো লিমিটেড। তাঁর খামারে চারটি পুকুর, তিনটি গরুর শেড, একটি করে ভেড়া ও ছাগলের শেড রয়েছে।

বর্তমানে খামারের চারটি পুকুরে মাছ চাষে তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া তাঁর খামারে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের গরু আছে ৬০টি, ভেড়া ৮০টি আর ছাগল ৬০টি। এসব গবাদিপশুর দাম প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। গত কোরবানির ঈদে তিনি খামারে পালন করা ২০ লাখ টাকার গবাদিপশু বিক্রি করেছেন।

সম্প্রতি খামার ঘুরে দেখা যায়, দুই পুকুরের মাঝামাঝিতে গরু রাখার তিনটি শেড। একটিতে বিদেশি জাতের গাভি ও বাছুর, আরেকটি শেডে ষাঁড় এবং অপর একটি শেডে দেশি জাতের গরু রাখা হয়েছে। ভেড়া ও ছাগল রাখার জন্য একটি পুকুরপাড়ে লম্বা আধা পাকা শেড করা হয়েছে। ইটের দেয়াল ও টিনের ছাউনি দেওয়া শেডটি মাটি থেকে উঁচু রাখার জন্য নিচে বাঁশের পাটাতন দেওয়া আছে। তবে দিনের বেলা ভেড়া ও ছাগলগুলো নেট দিয়ে ঘেরা একটি স্থানে রাখা হয়। ২০ শতক জায়গাজুড়ে একটি স্থানে বিদেশি ঘাস চাষ করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

আলোহীন চোখ নিয়ে গরুর খামারে লাখোপতি ফাহিম

বড় নয়, মাঝারি দেশাল গরুর দিকে যে কারণে ঝুঁকছে খামারিরা

রাজশাহীতে ভয়ংকর এলএসডি আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বাড়ছে

দেশে গরু, ছাগল, পোল্ট্রি খামার ১৩ লাখ ৩৮ হাজার

আবদুল মান্নান বলেন, তাঁর খামারে বর্তমানে দেশি জাতের গরু ছাড়াও বিদেশি সিন্ধি, ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল, ব্রাহমা জাতের গরু আছে। এসব গরুর মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি গাভি। যেগুলো থেকে প্রতিদিন ৬০–৭০ লিটার দুধ বিক্রি হয়। এ ছাড়া চারটি পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। মাছ চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে বছরে তাঁর পাঁচ লাখ টাকার মতো আয় হয়।

খামারি কীভাবে হলেন—প্রশ্নের জবাবে আবদুল মান্নান বলেন, এসএসসি পাস করার পর কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করার পর পড়াশোনা ছেড়ে দেন। ২০০০ সালে বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নওগাঁ পৌরসভার সুলতানপুর এলাকার একটি চালকল ভাড়া নিয়ে চালের ব্যবসা শুরু করেন। সেই ব্যবসায় আয়রোজগার ভালোই হচ্ছিল। ২০০৮ সালে নওগাঁ শহরের তাজের মোড়ে একটি ক্লাবের অনুষ্ঠানে যান। সেখানে অতিথি হিসেবে আসেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছিলেন, ‘নিজের যেটুকু জায়গাজমি ও সম্পদ আছে, তা ব্যবহার করে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করুন।’

এরপর তাঁর কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রামে নিজেদের চারটি পুকুরে ৮-৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মাছ চাষ শুরু করেন। ২০১৬ সালে মেহেরপুর থেকে ৪০টি ভেড়া তিন লাখ টাকায় কিনে এনে লালনপালন করা শুরু করেন। এরপর গরু মোটাতাজাকরণ ও উন্নত জাতের ছাগল পালন শুরু করেন। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

আবদুল মান্নান বলেন, ‘খামারটি আরও বড় করার ইচ্ছা আছে। ঋণের আবেদন করেছিলাম দুই বছর আগে। সেই ঋণ এখনো ছাড় হয়নি। ঋণ ছাড় হলে এখানে আরও বড় কিছু করার স্বপ্ন আছে।’

মালশন গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ হোসেন বলেন, আবদুল মান্নান যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানে সফল হয়েছেন। সমন্বিত কৃষি খামার করে এলাকার যুবকদের চোখ খুলে দিয়েছেন। বিদেশি উন্নত জাতের গরু ও ভেড়া পালন করে সফল হয়েছেন। এখন এলাকার প্রায় সবাই তাঁর কাছ থেকে গরু ও ভেড়া পালন করা শিখছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন বলেন, প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে উদ্যোক্তা আবদুল মান্নানকে নানাভাবে পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভেড়া পালনে তাঁকে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বসে না থেকে বেকার যুবকেরা তাঁর মতো উদ্যোক্তা হতে পারেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ