ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর নওগাঁ (প্রতিনিধি): দেশের অন্যতম ধান উৎপাদনকারী নওগাঁর মহাদেবপুরে তিন ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটায় আইন প্রয়োগে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দফায় দফায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মন্তব্য করলেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন তারা। ফলে কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শস্যভূমিতে সমৃদ্ধ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লোকালয়ে নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে অন্তত ২০টি ইটভাটা। এদের কারও লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। আইনও মানছেন না কেউ। শিশুদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করছেন ভাটা মালিকরা। আবার কয়েকটি ভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

এর বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় ফসল, গাছ-গাছালি বিনষ্টের পাশাপাশি বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ। ইট তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি। এতে জমির ঊর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে ও ফসল উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এছাড়া ইট ও মাটি পরিবহনের কাজে প্রায় ২০০টি অবৈধ ট্রাক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে। এর বিশাল চাকার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক, মহাসড়ক। ট্রাক্টরে পিষ্ট হয়ে প্রাণও হারাচ্ছেন অনেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটা মালিকরা জানান, এবার ১০-১১টি ভাটা উৎপাদনে রয়েছে। উপজেলার একটি সরকারি দপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ঘর নির্মান প্রকল্পে কমমূল্যে কয়েক লাখ ইট সরবরাহ ও বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে ভাটা চালাচ্ছেন তারা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ইব্রাহিম সরকার জানান, সমিতির সদস্যদের কারও লাইসেন্স নবায়ন নেই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় জানান, জমির উপরিভাগে যে গুরুত্বপূর্ণ জৈব পদার্থ থাকে তা নীচের মাটিতে থাকে না। উপরিভাগের মাটি কাটা হলে কয়েক বছরেও প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থের ঘাটতি পুরণ হয় না। এতে ফলস উৎপাদন কমে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। যদিও গতানুগতিক আশ্বাসের বুলি থেকে বের হতে পারেননি ইউএনও মিজানুর রহমান মিলন। তিনি দাবি করেন, শীঘ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিবেশ কমিটির সভাপতি খালিদ মেহেদী হাসান জানান, সম্প্রতি নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলার কয়েকটি ইটভাটায় মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করেছেন। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

একই কথা জানান, বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়ার পরিচালক সুফিয়া নাজিম। উল্লেখ্য, এ নিয়ে এগ্রিকেয়ারটোয়েন্টিফোর.কমসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে সংশ্লিষ্টরা আইন প্রয়োগের হুঁশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করলেও দৃশ্যমান কোনোই উদ্যোগ নিচ্ছেন না।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ