অর্থ বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ব্রাজিলের সমুদ্রবন্দর সান্তোসে চিনি বহনকারী জাহাজের জটলা বেঁধে আছে। জাহাজগুলো বন্দর ছেড়ে যেতে পারছে না। ৭০টির বেশি জাহাজ চিনি সরবরাহ করতে পারেনি।খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাহাজগুলোর বন্দর ছেড়ে যেতে এক মাসের বেশি সময় লেগে যেতে পারে। ফলে । খবর রয়টার্স। আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ সংকটে বাড়তে পারে চিনির দাম।

নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত বাজার ও বৈশ্বিক উৎপাদনে মন্দা ভাবের পূর্বাভাস আন্তর্জাতিক বাজারে চিনি সরবরাহে ঘাটতির আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে আগেভাগেই পণ্যটির ক্রয় বাড়িয়ে দিয়েছে ত্রেতারা। এদিকে চলতি মৌসুমে চিনি রফতানি বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই দেশ ভারত ও থাইল্যান্ডে উৎপাদন হ্রাসের বিপরীতে ব্রাজিল রেকর্ড উৎপাদনের পথে রয়েছে। ফলে বেশির ভাগ চিনি আমদানিনির্ভর দেশ ব্রাজিলের দিকে ঝুঁকেছে।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিলের নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। মহামারীরর প্রকোপে দেশটির নাকাল অবস্থা। ভাইরাসটির আক্রমণে কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় শীর্ষে উঠে এসেছে দেশটি। একদিকে অন্যান্য শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশের মন্দা উৎপাদন, অন্যদিকে ব্রাজিলে মহামারীর বাড়বাড়ন্ত—সব মিলিয়ে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে বৈশ্বিক চিনি বাজার।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় সান্তোসে অবস্থানরত জাহাজের কয়েকজন ক্রুর কভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া যায়। এর পর থেকে তিনটি খাদ্যশস্য বহনকারী জাহাজ তাদের পণ্য ওঠা-নামাসহ সব কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে এবং ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকছে। দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর পারানাগুয়ার কাছাকাছি একটি জাহাজেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল সেবা কোম্পানি জার্নিকো গ্রুপ লিমিডেটের প্রধান স্টিফেন গেলডার্ট এ বিষয়ে বলেন, লাতিন আমেরিকার দেশটিতে চিনি রফতানি নিয়ে যে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য দায়ী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। যথাসময়ে সুবিধাজনক জায়গায় জাহাজগুলো নোঙর করতে না পারলে এবং দ্রুত পণ্য ওঠা-নামা করতে সক্ষম না হলে কী ঘটবে তা নিয়ে সবাই চিন্তিত।

ইংল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উইলিয়াম শিপিং এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, সান্তোসে বর্তমানে এক ঝাঁক জাহাজ ৩০ লাখ টনের বেশি চিনি বিশ্বের বিভিন্ন পরিশোধনাগারে পৌঁছানোর অপেক্ষায় রয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে মাত্র ১৫টি জাহাজ সব মিলিয়ে সতি লাখ টন চিনি রফতানির জন্য লোড করা হয়েছিল। আটকা পড়া জাহাজগুলোকে বন্দর ছাড়তে ২৯ দিনের মতো অপেক্ষা করতে হতে পারে, আগের বছরের তুলনায় যা চার-পাঁচদিন বেশি।

ব্রাজিলের দুজন চিনি ব্যবসায়ী বলেন, চিনি রফতানি পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলেও ক্রেতাদের পক্ষে চুক্তি বাতিল করার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ চলতি মৌসুমে চিনি আমদানির জন্য বিকল্প উৎস পাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। স্থানীয় খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এসসিএ ট্রেডিংয়ের চিনি বাণিজ্যের প্রধান চেং গঙ্ক বলেন, বিশ্ববাজারে চিনি সরবরাহে ব্রাজিলের বিকল্প হতে পারে ভারত। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ব্রাজিলের মতো ভারতের বন্দরগুলোতেও নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া ভারতে এবার পণ্যটির উৎপাদনে মন্দা ভাব বজায় রয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্ববাজারে চিনি সরবরাহে ভোক্তাদের পছন্দের শীর্ষে ব্রাজিলের অবস্থান থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

সরবরাহ সংকটে বাড়তে পারে চিনির দাম শিরোনামে সংবাদের তথ্য বণিক বার্তা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।