নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কমঃ প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। কিন্তু উল্টো ডিমের বাজার। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম সর্বনিম্নে নেমেছে। বাজারে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮ টাকায়। অথচ প্রতি পিস ডিম উৎপাদনে খরচ ১০ টাকা। প্রতি পিস ডিমে খামারিরা লোকসান দিচ্ছেন ২ টাকা।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ (বি.পি.কে.আর.জে.পি) এবং পোল্ট্রি প্রফেশনাল’স বাংলাদেশ(পিপিবি) প্রকাশিত বাজার দরে দেখা যায়, পাবনায় খামারি পর্যায়ে প্রতিপিস লাল ডিমের দাম ৮ টাকা ২০ পয়সা এবং সাদা ডিমের দাম ৮ টাকা।

দেশের বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি কমেছে সাদা ডিমের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০ টাকা টাকা হালির ডিম বর্তমানে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল ডিম এক সপ্তাহ আগে ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে ৩৮ থেকে ৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খামারিরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে দেশের সর্বত্র ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। মুরগির ডিমের দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের কবলে পড়েছেন ডিম উৎপাদনকারী খামারিরা। তাদের আশঙ্কা, এভাবে ডিমের দাম কমতে থাকলে অচিরেই তারা পথে বসতে বাধ্য হবেন। এই সংকট সমাধানে তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বাংলাদেশে পোল্ট্রি খামারি রক্ষা পরিষদ (বিপিকেআরজেপি), বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাট্র্জি সেন্ট্রাল কাউন্সিল ও পোল্ট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশ (পিপিবি) একটি ডিম কিংবা ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ কত তা জানিয়েছে। সেসব হিসেবের সাথে খামারিদের হিসেব কিছুতেই মিলছে না।

এই প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসেবে বর্তমানে খামারী পর্যায়ের প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ৯.৫০- ৯.৭৫/৯.৯১ টাকা। সেইসাথে প্রতি কেজি ব্রয়লার মাংসের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকা। অথচ ২০২১ সালে একটা বাদামি ডিম উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৭ টাকা ২৬ পয়সা এবং সাদা ৬ টাকা ৩০ পয়সা। অন্যদিকে ব্রয়লার ১ কেজিতে খরচ ছিল ৯৯ টাকা ১৬ পয়সা। মাত্র বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে এসে একটা বাদামি ডিম উৎপাদনে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৭৩ পয়সা এবং সাদা ৯ টাকা ৪০ পয়সা। প্রতিকেজি ব্রয়লারের উৎপাদন খরচ বেড়ে হয়েছে ১৪৫ টাকা ৬৫ পয়সা। খরচ বাড়লেও বাড়েনি ডিম-মুরগির দাম।

গতকাল (১৬ নভেম্বর ২০২২) বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাট্র্জি সেন্ট্রাল কাউন্সিল ও পোল্ট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশ (পিপিবি) প্রকাশিত প্রতিদিনের ডিম, মুরগি ও বাচ্চার দামে দেখা যায়, রাজশাহী অঞ্চলে পাইকারিতে খামারি পর্যায়ে প্রতিপিস লালডিম বিক্রি হয়েছে ৯ টাকা ও সাদা ডিম ৮ টাকা ৬০ পয়সা। অথচ এসব ডিম উৎপাদনে খরচ পড়েছে সাড়ে ৯ টাকার উপরে। বাজারে ১৫০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হলেও খামার পর্যায়ে দাম ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। ফলে খামারিরা মুরগিতে লোকসান গুণছেন ১০ থেকে ১৫ টাকা।

এদিকে, বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা। আর মুদি দোকানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৫০ পয়সা। এক সপ্তাহ আগে দেশের বিভিন্ন বাজারে ডিমের ডজন ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।

হাঁস, মুরগির ডিম ব্যবসায়ী ও পাইকারি সরবরাহকারী আলহাজ্ব মো: আব্দুল জলিল মিয়া এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ডিমের দাম বাড়াবেই। এভাবে চললে তো আর খামারিরা বাঁচবে না। প্রতি ডিমে ১০ টাকা খরচ করে বিক্রি করছেন ৮ টাকা। লাল ডিম ৩৬ টাকা, সাদা ডিম ৩৪ টাকা।

লেয়ার মুরগির খামারি রুবেল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ডিমের দাম কমে যাওয়ায় লোকসান হচ্ছে। মুরগির খাবারের টাকাই জুটছে না। খাবারের সাথে অষুধ আছে। নানান খরচ করে ডিমের আবার দাম নেই। দাম না বাড়লে আমাদের বাঁচার উপায় নাই। খাবারের দাম বেড়েছে। সবকিছুর খরচ বেড়েছে। আমরা বাঁচব কিভাবে!

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ডিম কাঁচা মালের মধ্যে পড়ার কারনে সঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে, ডিমের বাজারে এখন দাম কম। কিন্তু পোল্ট্রি খাদ্যের প্রধান উপাদান ভুট্টার দাম বেড়েছে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ৩৭ শতাংশ বেড়ে ২৪ টাকার ভুট্টা এখন ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা।

এছাড়া সয়াবিন মিল ৩৭ টাকা থেকে ৭০ টাকায় দাঁড়িয়েছে অর্থ্যাৎ বেড়েছে ৮৮ শতাংশ। চালের কুড়া ২‘১ টাকা থেকে ৩৬ টাকা যার শতাংশ হিসেবে বেড়েছে ৭৭। পোল্ট্রি মিল ৫৪ টাকা থেকে লাফিয়ে হয়েছে ৮০ টাকা যা বেড়েছে ৮৪ শতাংশ। ডিমের দাম আবার কমলো। রাজশাহীতে বর্তমানে ৭০ শতাংশ পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। শীতের সময় ডিমের দাম বাড়ে। কিন্তু ডিমের দাম কমে যাওয়ায় এই সময়ে খামারি রাখ আমার বন্ধ করে দিবে। আবার শুনছি ৫০ কোটি ডিম আমদানি করবে। এই খাত ব হাতে অলরেডি চলেই গেছে। কিছু বলার নাই।