নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ঢাকায় সস্তায় মিলছে গরু, খাশি, মুরগির মাংস ও ডিম। সাড়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এককেজি গরুর মাংস! শুনতে অবাক মনে হলেও বিষয়টি সত্য।

প্রথম রোজা থেকে রাজধানীর ১০টি জায়গায় মাংস (গরু ও খাসি), দুধ ও ডিম বিক্রি শুরু করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ বিক্রি চলবে ২৮ রমজান পর্যন্ত।

অল্পদামে পণ্য বিক্রি হওয়া স্থানগুলো হলো খামারবাড়ি গোলচত্বর, সচিবালয়সংলগ্ন আবদুল গণি রোড, মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি, মিরপুরের ৬০ ফুট রাস্তা, কালশী, যাত্রাবাড়ী, আজিমপুর মাতৃসদন, পুরান ঢাকার নয়াবাজার, আরামবাগ ও নতুন বাজার।

পড়তে পারেন: ফের দাম বাড়লো ব্রয়লার-গরুর মাংস, চাল, তেল, চিনি, ডিমের

এসব বাজারে সুলভ মূল্যে পণ্য কিনতে পারবেন ক্রেতারা। টিসিবির ট্রাকের ন্যায় লাইন দিয়ে কিনতে হচ্ছে পণ্য। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম বলে ক্রেতারা এমনও অভিযোগ করছেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টায় এ ঘটনা ঘটে রাজধানী মিরপুরের কালশী রোডে সুলভ মূল্যে মাংস, দুধ ও ডিম কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন প্রায় ৬৫ জন। বিক্রি শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে ঘোষণা দেওয়া হলো, গরুর মাংস শেষ।

সেখানে বেলা সোয়া ১১টা থেকে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ গাড়ি এসে সুলভ মূল্যে এসব খাদ্যপণ্য বিক্রি শুরু করেছিল।

লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতারা বলছেন, তাঁরা মূলত এসেছিলেন গরুর মাংস কিনতে। কারণ, বাজারভেদে গরুর মাংস কেজি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। কিন্তু প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বিক্রি করছে ৫৫০ টাকায়।

পড়তে পারেন: ৬৫০ থেকে একলাফে ১০০০ টাকা কেজি গরুর মাংস

মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি গাড়িতে ১০০ কেজি গরুর মাংস বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। তবে গতকাল মিরপুরের কালশীতে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে দেওয়া হয়েছে ৫০ কেজি গরুর মাংস। প্রত্যেকের কাছে এক কেজি করে গরুর মাংস বিক্রির কথা থাকলেও সেখানে এক ব্যক্তির কাছে সর্বোচ্চ তিন কেজি করে বিক্রি করা হয়েছে। আর এতেই গরুর মাংস দ্রুত শেষ হয়ে যায়।

দুপুর পৌনে ১২টার দিকে যখন গরুর মাংস শেষ হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়, তখনো লাইনে অন্তত ৪০ জন নারী–পুরুষ ছিলেন। এই ঘোষণা পর ক্রেতারা ক্ষিপ্ত হন।

এক কেজি করে মাংস বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও বেশি বিক্রির কারণ জানতে চাইলে বিক্রয়কর্মী সৈয়দ রাজু বলেন, বিক্রির শুরুর পর লাইনে লোকজন কম দেখে তারা বেশি করে মাংস বিক্রি করেছেন।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গতকাল ১০টি গাড়িতে ১০০০ কেজি গরুর মাংস, ৪২ কেজি খাসির মাংস, ব্রয়লার ২৫০ পিস (প্রতিটি এক কেজি করে), ১০০০টি ডিম ও ২০০০ লিটার দুধ বিক্রি করা হয়েছে। আজ থেকে ক্রেতাদের চাহিদা দেখতে মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা মাঠপর্যায়ে যাবেন।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে পাস্তুরিত তরল দুধ প্রতি লিটার ৬০ টাকা, গরুর মাংস কেজি ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার প্রতি কেজি ২০০ টাকা এবং ডিম প্রতি হালি ৩০ টাকা দরে বিক্রয় করা হচ্ছে। তবে গতকাল কালশী এলাকায় খাসির মাংস বিক্রি করা হয়নি।

৫৫০ টাকা দরে গরুর মাংস কিনতে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের কালাপানি এলাকা থেকে কালশীতে এসেছিলেন রানু বেগম। রানু বলেন, আগের দিন সোমবার এই পথ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময় কিছুটা কম দামে মাংস বিক্রি হতে দেখেছেন। এ জন্য গতকাল সকাল ১০টার দিকেই ব্যাগ নিয়ে চলে আসেন। তিনি দুই কেজি গরুর মাংস, দুই লিটার দুধ ও ২০টি ডিম কিনতে পেরেছেন বলে জানালেন।

সেতারা বেগম নামের এক প্রবীণ নারীও দুই কেজি মাংস কিনতে পেরেছেন। তিনি বললেন, চাঁদরাতে মাংসের দাম আবার বাড়তে পারে। অত টাকায় মাংস কেনার সামর্থ্য তাঁর নেই। তিনি আরও দুই কেজি গরুর মাংস কিনতে পারলে খুশি হবেন বলে জানালেন।

সুলভ মূল্যে এসব খাদ্যপণ্য বিক্রির বিষয়টি সমন্বয় করছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) রেয়াজুল হক। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি। তাই তাঁরা সেবার পরিধি বাড়ানোর চিন্তা করছেন। আজ বুধবার ১০টি গাড়িতে এক হাজার কেজি মাংসের পরিবর্তে দেড় হাজার কেজি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

তিনি আরো বলেন, ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেশি হবে না, তাঁদের এমন ধারণা ছিল। কিন্তু অনেকেই চাচ্ছেন, তাই ব্রয়লার মুরগিও বাড়ানো হবে। এ ছাড়া বর্তমানে প্রতি গাড়িতে দুই শ লিটার করে দিনে দুই হাজার লিটার দুধ দেওয়া হচ্ছে। আজ থেকে তিন হাজার লিটার দুধ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ডিমের সংখ্যাও বাড়ানো হবে বলে জানালেন তিনি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ