নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদনের পর চালের বাজারে আগুন। সারাবিশ্বে যেখানে চালের দাম কমছে সেখানে উল্টো চিত্র শুধু বাংলাদেশে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এএফও) সর্বশেষ প্রতিবেদন এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, সব দেশে চালের দাম কমেছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মধ্যে বাংলাদেশেই এখন চালের দাম সর্বোচ্চ।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, ঢাকার বাজারে ৫০ টাকা কেজি মোটা চাল। খুচরা দোকানে গতকাল মঙ্গলবার মোটা চাল ৪৬ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, যা এক সপ্তাহে দুই টাকা বেড়েছে। গত বছরের এ সময়ের চেয়ে দর ১৩ শতাংশ বেশি। কিন্তু বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। তারপরও কেন দাম কমছে না তার কারণ জানেনা কেউ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিন্ডিকেট আর মজুদদারদের জন্যই বাড়ছে চালের দাম।

পড়তে পারেন: কারসাজি করে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়েছে : কৃষিমন্ত্রী

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ মোটা চাল আমদানি করলে প্রতি কেজি দাম পড়বে ৩৩ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে, যা বাংলাদেশের বর্তমান বাজারদরের চেয়ে অনেক কম।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) থেকে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ফুড আউটলুক-জুন ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থান দখল করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন বেড়ে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টন হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। দীর্ঘদিন ধরেই খাদ্যশস্যটি উৎপাদনে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান ছিল চতুর্থ। চীন ও ভারতের পরেই তৃতীয় স্থানটি ছিল ইন্দোনেশিয়ার। তবে, এবার ইন্দোনেশিয়াকে টপকে তৃতীয় স্থান নেবে বাংলাদেশ।

অপরদিকে প্রতিবছর বোরো মৌসুমে মোট চালের ৫৫ শতাংশের বেশি উৎপাদিত হয়। এবার দাম তেমন একটা কমেনি, বরং মৌসুম শেষ না হতেই বাড়ছে। এটি আসলেই উদ্বেগের বিষয় হিসেবে দেখছেন তারা।

শুধু মোটা চাল নয়, মাঝারি ও সরু চালের দামও কমেনি। ঢাকার খুচরা দোকানে মাঝারি বিআর-২৮ ও সমজাতীয় চাল মানভেদে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের চেয়ে ১০ শতাংশের মতো বেশি। আর সরু মিনিকেট চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা ও নাজিরশাইল চাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয় বাজারে। এ ক্ষেত্রে দাম গত বছরের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি।

সাবেক কৃষিসচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ এম এম শওকত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই দেশের দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। চলমান বিধিনিষেধে নতুন করে বহু মানুষের আয় কমেছে। অনেকের আয়ের পথও বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে চালের চড়া দাম তাদের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত দ্রুত খোলাবাজারে চাল বিক্রি কার্যক্রমের পরিসর বিস্তৃত করা। পাশাপাশি সরবরাহ বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।

এরআগে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, চলতি বছরে কয়েক দফা লাগাতার বন্যা ও ৫ মাসব্যাপী অতিবৃষ্টিতে আউশ ও আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। ঘাটতি মেটাতে চাল আমদানি করছে সরকার। তারপরেও এই ভরা মৌসুমেও নানান কারসাজি করে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ