নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, চলতি বছরে কয়েক দফা লাগাতার বন্যা ও ৫ মাসব্যাপী অতিবৃষ্টিতে আউশ ও আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। ঘাটতি মেটাতে চাল আমদানি করছে সরকার। তারপরেও এই ভরা মৌসুমেও নানান কারসাজি করে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

আজ রোববার (২৭ ডিসেম্বর ২০২০) গোপালগঞ্জে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের পূর্তকাজ উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক।

মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে অনলাইনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের (বারি) আওতায় এ গবেষণা কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।

এসময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো: আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, ঊর্ধ্বধন কর্মকর্তা,সংস্থাপ্রধানসহ প্রকল্প পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধির কারণ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এই বছর কয়েক দফা লাগাতার বন্যা ও ৫ মাসব্যাপী অতি বৃষ্টিতে আউশ ও আমন ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে প্রায় ১ লক্ষ ৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে। তাতে করে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হয়েছে। এ কারণে চালের দাম কিছুটা বেশি। বিশেষ করে কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম অনেক বেশি।

এই ঘাটতি মেটাতে সরকার ৫-৬ লক্ষ মেট্রিক টন চাল আমদানি করবে। কারণ এই ঘাটতি না মেটাতে পারলে মিলার, আড়াতদার ও চাল ব্যবসায়ী যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তারা চালের দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবে। ইতিমধ্যে, এই ভরা মৌসুমের সময়ও নানান কারসাজি করে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরোও পড়ুন: যে কারণে বাড়ছে চালের দাম, সরষে ফুলেই ভূত

ড. রাজ্জাক বলেন আরোও বলেন, সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে ২৫% করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরকেও চাল আমদানির সুযোগ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে আমদানি করা চাল বাজারে আসা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, ওএমএসের আওতায় চাল বিক্রির কার্যক্রম চলছে।

চালের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে, দ্রুত আমদানি করে এই ঘাটতি মেটাতে পারলে এবং বাজারে সরবরাহ বাড়াতে পারলে চালের মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় আসবে। দেশে খাদ্য নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। কারণ, দেশের প্রতিটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও সচেষ্ট। সেজন্য সরকার সরকারি-বেসরকারিভাবে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে একটি মানুষও ক্ষুধার্থ না থাকে। একটি মানুষকেও যাতে না খেয়ে থাকতে না হয়।

ভবিষ্যতেও যাতে খাদ্য নিয়ে কোন সমস্যা না হয় সেজন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, আগামী বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সর্বাত্মক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এই বছর ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বাড়ানো হবে এবং ২ লক্ষ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধান চাষের কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে উৎপাদন বাড়াতে প্রায় ৭৬ কোটি টাকার হাইব্রিড ধানবীজ বিনামূল্যে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। আশা করি আগামী মৌসুমে বোরোর বাম্পার ফলন হবে।

এর পরে মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় জানানো হয়, চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৬৮টি প্রকল্পের অনুকূলে মোট ২ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে ২২%। যেখানে জাতীয় গড় অগ্রগতি প্রায় ১৮%।

কারসাজি করে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়েছে সংবাদের তথ্য এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো: কামরুল ইসলাম ভূইয়া।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ