আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনা মহামারীর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টন গম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভারতের কৃষকরা। শ্রমিক সংকটে ফসল সংগ্রহ করা, লকডাউনের মধ্যে বাজারজাতকরণ, বিক্রি নিয়ে নিয়ে শঙ্কায় তারা। করোনা পরিস্থিতিতে রেকর্ড পরিমান গম উৎপাদনে বিপদ আরো বাড়িয়েছে। খবর রয়টার্স ও ইকোনমিক টাইমস।

গত দু্ই বছর ধরে রেকর্ড পরিমান গম উৎপাদন করছে ভারত। ২০২০ সালে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশটির গম উৎপাদন সাড়ে ১০ কোটি টন ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এ বিপুল পরিমান গম সঠিক সময় সংগ্রহ করতে না পারলে ফসল হারাতে হতে পারে।

আসন্ন বর্ষা মৌসুম (জুন-সেপ্টেম্বর) শুরুর আগেই জমি থেকে গম সংগ্রহ না করলে আর্দ্রতা হারিয়ে পণ্যটির গুণগতমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গমের আর্দ্রতার পরিমাণ ১৩ থেকে ১৪ শতাংশের উপরে উঠে গেলে ক্রেতারা পণ্যটি ক্রয়ে আগ্রহ হারাবেন। ফলে পণ্যটির দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিক বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত ভিজে গেলে খাদ্যপণ্যটি একেবারে মূল্যহীন হয়ে পড়তে পারে।

সংগ্রহ সমস্যার পাশাপাশি মহামারীর মধ্যে গম বিক্রি নিয়েও ঝুঁকিতে রয়েছেন ভারতের কৃষকরা। লকডাউনের কারণে দেশটির সাত হাজারের বেশি খাদ্যপণ্যের পাইকারি বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে খাদ্য সরবরাহের একমাত্র চ্যানেল এগুলো। এ পরিস্থিতিতে গমের বিক্রি নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন দেশটির কৃষকরা।

ভারতের গম উৎপাদনকারী কৃষকরা আইনিভাবে এসব পাইকারি বাজারের কমিশন এজেন্টদের কাছে শস্যটি বিক্রি করেন। এখান থেকে পরে দেশটির সরকারি শস্য ক্রয় প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ব্যবসায়ীরা পণ্যটি ক্রয় করে থাকেন। কমিশন এজেন্টরা সাধারণত ট্রাক্টর ট্রলি থেকে লাখ লাখ গমের বস্তা আনলোড করাসহ পরে এগুলো পরিষ্কার করা, ওজন ও প্যাক করা এবং পুনরায় শস্যটি বাজারজাত করার জন্য বিপুল শ্রমিক নিয়োগ দেয়। এরপর গমগুলো সরকারি ও বেসরকারি গুদামে চালান করা হয়। চলতি মৌসুমে তীব্র শ্রমিক সংকটে কমিশনার এজেন্টরাও বিপাকে পড়েছে।

ভারতের শীর্ষ গম উৎপাদনকারী রাজ্য হরিয়ানার ঘারুন্দা শস্যবাজারের একজন কমিশন এজেন্ট জানান, লকডাউনের মধ্যে চলতি মৌসুমে দেশটির কৃষিকাজে নিয়োজিত মোট শ্রমিকের ৯০ শতাংশই অনুপস্থিত। গত মৌসুমে সব মিলিয়ে পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক খাতটিতে নিয়োজিত ছিলেন। অথচ চলতি মৌসুমে খাতটিতে শ্রমিকসংখ্যা অপ্রত্যাশিতভাবে কমে মাত্র ৫০০ জনে নেমেছে। এর আগে দেশটির শ্রমিক সংকট কখনই এ পর্যায়ে ঠেকেনি।

এদিকে পরিবহন খাতে সীমাবদ্ধতা থাকায় ভারতের রাষ্ট্রীয় খাদ্য মজুদকারী প্রতিষ্ঠান ও শীর্ষ শস্য ক্রেতা ফুড করপোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই) গম ক্রয়ে বিলম্ব করছে। একই সঙ্গে এ পরিস্থিতি ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদেরও পণ্যটি ক্রয় থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে, যা পণ্যটি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কৃষকদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।

উল্লেখ্য, মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী গত বছর ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গম উৎপাদন হয়েছে। এ সময় দেশটিতে কৃষিপণ্যটির সম্মিলিত উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। এর আগের বছর দেশটিতে ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে মোট ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৭০ হাজার টন গম উৎপাদন হয়েছিল। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে কৃষিপণ্যটির উৎপাদন বেড়েছে ২৩ লাখ ২০ হাজার টন।

বাড়তি উৎপাদনের জের ধরে গত বছর ভারতে গমের সমাপনী মজুদও আগের তুলনায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সাল শেষে দেশটিতে কৃষিপণ্যটির সমাপনী মজুদ ২ কোটি ৭ লাখ ২ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইউএসডিএ। এক বছরের ব্যবধানে ভারতে গমের মজুদ বেড়েছে ২১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ভারতের ইতিহাসে এটা গমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মজুদের রেকর্ড। ২০১৮ সালে ভারতে গমের সমাপনী মজুদ ছিল ১ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০১২ সালে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ২ কোটি ৪২ লাখ টন গম মজুদ হয়েছিল।